মেছতা যেভাবে দূর করা যায়
ডা. জাহেদ পারভেজ
মেছতা বা মেলাসমা এক ধরনের চর্মরোগ। মেছতা হলে মুখ, থুতনি, কপালে ও গালে হালকা বাদামি, কালো বা লালচে ছোপ দেখা যায়। নারীদের রোগটি বেশি হয়। বিশেষ করে চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা মেছতায় বেশি আক্রান্ত হন। মুখ ছাড়াও কারও কারও চিবুক ও বাহুর উপরিভাগে মেছতার কালো ছোপ পড়তে পারে। মূলত ত্বকের রঞ্জক পদার্থ মেলানিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াই এর কারণ।
যে কারণে হয় : গর্ভধারণের সময় হরমোনের প্রভাবে অনেক সময় মুখে মেছতা দেখা দিতে পারে। এজন্য রোগটিকে অনেকে বলেন, ‘মাস্ক অব প্রেগনেন্সি’। এছাড়া বংশগতির প্রভাব, অতিরিক্ত সূর্যালোক, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। হরমোনের সমস্যা, যেমনÑ থাইরয়েড বা ডিম্বাশয়ের সমস্যায় এটা হতে পারে। মেনোপজের পর এটি বেশি হতে দেখা যায়, তার পেছনেও হরমোনের কারণ দায়ী। আবার অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের কারণে মেছতা হতে পারে। একে বলে ‘মেলাজমা কসমেটিকা’। যকৃতের জটিলতায় যে মেছতা হয়, তাকে বলে ‘মেলাজমা হেপাটিকা’।
যেভাবে বুঝবেন : ত্বকের কালো রঙের জন্য দায়ী যে রঞ্জক, সেই মেলানিনের পরিমাণ এতে বেড়ে যায়। ফলে রঙের পরিবর্তনই কেবল চোখে পড়ে, চুলকানি বা ব্যথা হয় না। তিলজাতীয় লিভাস নোটা, লিভাস আইটো দেখতে প্রায় একই রকম হলেও তা মেছতা নয়। এগুলো সাধারণত একপাশে হয়ে থাকে। মেছতা হয় দুপাশেই। চিকিৎসক দেখেই মেছতা শনাক্ত করতে পারেন। তবে সাহায্য নেওয়া যায় উডস ল্যাম্পের (ত্বকের পরীক্ষা)।
মেছতা থেকে মুক্তি : গর্ভধারণকালে ত্বকে যে মেছতা দেখা দেয়, তা সন্তান জন্মের পর এমনিতেই কমে যায়। এজন্য ধৈর্য ধরতে হবে। রোদে বা বাইরে বের হলে উচ্চ এসপিএফযুক্ত সানব্লক ব্যবহার করুন। প্রচণ্ড রোদে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন। অতিবেগুনি রশ্মি সমস্যা বাড়ায়। হরমোনের সমস্যা আছে কিনা, শনাক্ত করে চিকিৎসা নিন। হাইড্রোকুইনোন–সমৃদ্ধ ব্লিচিং ও ভিটামিন-এ যুক্ত ক্রিম অনেক সময় ব্যবহার করতে বলা হয়। মেথিমাজোল, এজেলিক অ্যাসিড, স্টেরয়েড ক্রিমও ব্যবহৃত হয়। মনে রাখবেন, এগুলো প্রসাধন ক্রিম নয়, ওষুধ। ব্যবহারের আগে তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
চিকিৎসা : বর্তমানে কেমিক্যাল পিলিং, মাইক্রোডার্মাব্রেশন ও পিআরপি থেরাপির মাধ্যমে মেছতার চিকিৎসা করা হচ্ছে। কিছু আধুনিক মলম ও মুখে খাওয়া ট্যাবলেট মেছতা চিকিৎসায় কার্যকর। একসময় মেছতার চিকিৎসায় স্কিন লাইটেনিং ক্রিম লোশন, সেরাম ব্যবহার করা হতো। এসবের মধ্যে দুই বা চার ভাগ হাইড্রোকুইনন জনপ্রিয়। হাইড্রোকুইননের সঙ্গে ট্রেটিনয়িক অ্যাসিড (০.২৫ শতাংশ), হাইড্রোকর্টিসন যোগ করা হলে চমৎকার ফল পাওয়া যায়। তবে গর্ভাবস্থায় ট্রেটিনয়িক অ্যাসিড ব্যবহার নিষিদ্ধ। একসময় এজোলিক অ্যাসিড ব্যবহৃত হতো। বর্তমানে অনেক আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাইক্রোডার্মাব্রাসন ও ডায়ামন্ড পিল। কখনো কখনো মাইক্রোডার্মাব্রাসনের সঙ্গে বা শুধু কেমিক্যাল পিলের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এসব পদ্ধতিতে কয়েক সেশন লাগে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এসব করা উচিত।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ত্বক চর্ম ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল