যে কারণে আটকে আছে ইসলামি দলের জোট গঠন
দৈনিকসিলেটডেস্ক
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পাল্টে যায় দেশের রাজনীতির হিসাব-নিকাশ। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ অন্যান্য ইসলামি দলগুলো নড়েচড়ে বসে। জোট গঠনের উদ্যোগ নেয় তারা। এই নিয়ে আগস্টের মাঝামাঝি থেকেই দলগুলোর মধ্যে আলোচনাও শুরু হয়। তবে জোট গঠনে দলগুলো একমত হলেও বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দেয়, জোটের নেতৃত্ব কে দেবে; জামায়াত নাকি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পাশাপাশি দাবি উঠে ধর্মীয় কিছু বিষয়ে মাওলানা মওদুদীর লেখা নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে আলেমদের যে বিরোধ, তার সমাধান হতে হবে। এই দুই ইস্যুর সমাধানের ওপর নির্ভর করছে ইসলামি দলগুলোর জোট গঠনের ভবিষ্যৎ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইসলামি দলগুলোর জোট গঠন এখন পর্যন্ত আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও খেলাফত মজলিসের মতো পুরনো মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে জোট গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ নিয়ে জাকের পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও ইনসানিয়াত বিপ্লবের মতো ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর বাইরে গত ১৫ আগস্ট থেকে ১২ দলীয় জোট, লেবার পার্টি, ফরায়েজী আন্দোলনের সঙ্গেও জামায়াতের আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আব্দুল মাজেদ আতাহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমির আবু জাফর কাসেমী, জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম মনিরুজ্জামান কাসেমী, জনসেবা আন্দোলনের আমির ফখরুল ইসলামসহ ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও আলেমদের সঙ্গে জামায়াতের আমির পৃথক মতবিনিময় করেছেন।
ইসলামি জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, জোট গঠনের বিষয়ে আমাদের আগ্রহের কথা আগেই বলেছি, আমাদের আমিরও বলেছেন। এ নিয়ে ইসলামি দলগুলোর আগ্রহ বেড়েছে। জোট করতে গেলে কিছু মতপার্থক্য থাকে। সেগুলো কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে জোট গঠনে কোনো বাধা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন তো আর কোনো বাধা নেই। এখন কোন দল কতটা উদার হবে, কতটা ছাড় দেবে; আলোচনা করে সবার পরামর্শের ভিত্তিতে এই জোট গঠন করতে হবে।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিএনপি ও জামায়াত দূরত্ব রেখে চলছে। এই দূরত্ব কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকবে তা এখনই বলা কঠিন। তবে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ৩১ দফার ভিত্তিতে ঐক্য অটুট রাখতে বৈঠক করেছে বিএনপি। এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে একটি নির্বাচনী ঐক্য গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। যদিও তা এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত রূপ পায়নি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করছি। উদ্দেশ্য, ইসলামি সংগঠনগুলোর যাতে নির্বাচন কেন্দ্রিক একটা ঐক্য হয়। সেটি জোট রূপেও হতে পারে, সমঝোতাও হতে পারে কিংবা নির্বাচনী সমঝোতাও হতে পারে। এটা নিয়ে আলোচনা চলছে।
জামায়াতের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে গাজী আতাউর রহমান বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ হচ্ছে, সবার সঙ্গেই হচ্ছে।
জামায়াত নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনই অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে চাচ্ছে না দলটি। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, তার জন্য অন্তত এক বছর সময় দিতে চায় জামায়াত। গতকাল এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমরা দুটি রোডম্যাপ চাচ্ছি। একটা সংস্কারের জন্য। সেই রোডম্যাপে নির্দিষ্ট হতে হবে কী কী বিষয়ে সংস্কার হবে এবং কত দিনের ভেতরে সংস্কার হবে। সংস্কারের রোডম্যাপ যদি সফল হয়, তাহলে দেরি না করে নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে হবে। কিন্তু প্রথমটা যদি সফল না হয় তাহলে দ্বিতীয়টি ব্যর্থ হবে। আমরা কোনো ব্যর্থ নির্বাচন চাচ্ছি না। একটা সফল নির্বাচন চাচ্ছি।
সূত্র:আমাদের সময়