বিয়ানীবাজারে সরকার পতনের পর নিহত ৩ জনের মরদেহ উত্তোলন শিগগিরই
বিয়ানীবাজার প্রতিনিধি
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুথানে তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার পর সারাদেশের ন্যায় বিয়ানীবাজারেও আনন্দ মিছিল বের করে মুক্তিকামী জনগণ। দুপুরের পর থেকে পুরো পৌরশহর লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। মূহুর্মূহু শ্লোগান আর বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ জনতা।
৫ আগস্টের ঘটনাবহুল ওইদিন বিকেলে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে বিয়ানীবাজার পৌরশহর। উশৃংখল জনতা থানা, উপজেলাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায়। পুলিশের গুলিসহ একাধিক অস্ত্র খোয়া যায়। হামলার ভয়াবহতা থেকে বাচঁতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা গুলি করলে ঘটনাস্থলেই ৩ জন মারা যান, আহত হন আরোও অন্তত: ১০জন। এ ঘটনায় নিহত তারেক আহমদ, রায়হান আহমদ ও ময়নুল ইসলামকে ৬ আগস্ট দিনের বিভিন্ন সময়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেন স্বজনরা।
এদিকে ছেলে তারেক আহমদ নিহতের ঘটনায় ২০ আগস্ট বাদী হয়ে প্রথম মামলা দায়ের করেন তার মা ইনারুন নেসা। যদিও ২২ আগস্ট এ মামলা প্রত্যাহারে সিলেটের আমল গ্রহণকারী আদালতে আবেদন করেন তিনি। অপরদিকে একই সময়ে নিহত আরোও দুইজন রায়হান আহমদ এবং ময়নুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা বাদী হয়ে পৃথক দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে মামলাগুলো রুজু হওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রমে ধীরগতির অভিযোগ তুলেন বাদীপক্ষ। পৃথক মামলায় তাদের অভিযোগ, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা পরিকল্পিতভাবে তারেক, রায়হান ও ময়নুলকে হত্যা করেছেন।
মামলাগুলো রেকর্ডকারী প্রশাসনিক ক্ষমতাপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ দেব দুলাল ধর ও অকিল উদ্দিন আহমদকে বদলী করেন উর্দ্বতন কর্তৃপক্ষ। তারেক হত্যা মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নুরুজ্জামানকেও বদলী করা হয়েছে। বর্তমানে এই মামলা তদন্ত করছেন এসআই শাহাব উদ্দিন। গত এক সপ্তাহ থেকে মামলাগুলোর তদন্ত কার্যক্রমে বেশ গতি এসেছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আদালত থেকে নিহতদের মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিগগির তাদের মরদেহ উত্তোলন করা হবে। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: এনামুল হক চৌধুরী জানান, আদালতের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনা হাতে আসেনি। পুরো আদেশ পাওয়ার পরই মরদেহ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, নিহত তারেক আহমদকে তার গ্রামের বাড়ি কটুখালিরপার, ময়নুল ইসলাম ও রায়হান আহমদকে পৌরশহরের নয়াগ্রামে দাফন করা হয়েছে। আহতদের অনেকেই এখনো পুরোপুরি সূস্থ হতে পারেননি।
৫ আগস্টের ওই রক্তাক্ত ঘটনার পর পৃথক তিনটি মামলার আসামী হয়ে আত্মগোপনে চলে যান আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা। তবে এসব মামলার ঘটনায় কোন নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: এনামুল হক চৌধুরী আরো জানান, নিরীহ কাউকে হয়রানী করা হবেনা। প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।