সুনামগঞ্জের চলতি নদীতে বালু বহনকারী নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা
রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ জেলা শহরের পাশ দিয়ে বহমান চলতি নদীপথে অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধে বাল্কহেডসহ বালু-পাথর পরিবহনে নৌযান প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ, চলতি নদী সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর সীমান্তে অবস্থিত খাসিয়া পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে সুরমা নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদীতে সরকার অনুমোদিত কোনো বালু কিংবা পাথর মহাল নেই। ফলে সেখানে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেওয়া হয় না। তাই চলতি নদীতে বালু পরিবহনে বাল্কহেড অথবা বড় নৌযান চলাচল ফৌজদারি অপরাধের শামিল। এ এলাকায় কোন শিল্পকারখানা ও কৃষি উৎপাদনের মতো বিষয় না থাকায় নদীতে ভারী নৌযান চলাচলের কোন কারণ নেই। অন্যদিকে এ নৌ-পথের শেষ গন্তব্য বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। তাই এলাকাটিতে শুধু বালু পরিবহনের জন্য বাল্কহেড ও অন্যান্য বড় নৌযান চলাচল অবৈধ।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ, চলতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও পরিবহন প্রতিরোধের লক্ষ্যে চলতি ও সুরমা নদীর মোহনা থেকে নদীটির প্রবেশ মুখ হয়ে উত্তর সীমান্তের খাসিয়া পাহাড় পর্যন্ত অংশে সবধরনের বাল্কহেড নৌকাসহ বালু পরিবহনে ব্যবহৃত জলযান প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। এ আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, চলতি নদীতে ২০১৮ সাল থেকে ইজারা বন্ধ রাখা হয়েছে। ইজারা না হলেও বিভিন্ন সময়ে এ নদী থেকে ক্ষমতাসীনদের লোকজন স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে ‘ম্যানেজ করে’ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেছে। প্রশাসন ও পুলিশ মাঝেমধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও কার্যত বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। গেল ৫ আগস্ট হাসিনা সরকার গদিচ্যুত হওয়ার পর এ নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলন বেড়েছে দিগুণহারে। রাতদিন চলছে বালু-পাথর উত্তোলনের মহোৎসব। ফলে করে নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাস্কফোর্সের অভিযান ও বালু জব্দ হলেও চলতি নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার টাস্কফোর্সের অভিযানে প্রায় ২ কোটি টাকার বালু বোঝাই ১৭টি বাল্কহেড ও নৌকা জব্দ কর হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর। মন্ত্রিপরিষদের একটি প্রজ্ঞাপন অনুয়ায়ী বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ আছে। তবু কিছু লোক বালু উত্তোলন ও পরিবহনের চেষ্টা করে। অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নদীতে নৌযান বন্ধের মাধ্যমে অবৈধ বালু-পাথর উত্তোলন ও পরিবহন নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের এই উর্ধ্বতন কর্মকতা।
উল্লেখ্য, গেল ২ অক্টোবর টাস্কফোর্সের অভিযানে বালুবোঝাই ১৭টি বাল্কহেড ও নৌকাসহ ২ কোটি তিন লাখ ৮৭ টাকার মালামাল জব্দ কর হলেও কাউকে আটক করা হয়নি।