ভেজাল বীজ বিক্রি কৃষকদের কোটি টাকা লোকসান
দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে আগাম জাতের টমেটো আবাদ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন একশতাধিক কৃষক। অভিযোগ, লাইসেন্স বিহীন পরিচালিত বীজ, কীটনাশক ও সারের দোকানে ভেজাল বীজ বিক্রি করে কৃষকদের কয়েক কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ভেজাল বীজের কারণে এ বছর টমেটোতে ফলন আসেনি। কেটে ফেলতে হচ্ছে গাছ।
প্রতারিত হয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও).উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন (১ শত কৃষকের গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে) কৃষকদের পক্ষে নানু মিয়া নামে এক কৃষক।
উপজেলার স্থানীয় নরসিংপুর বাজারের ব্যবসায়ী সৈয়দ আলী ও আলী হোসেন’র যৌথভাবে পরিচালিত (লাইসেন্স বিহীন) বীজ, কীটনাশক ও সারের দোকান থেকে এসব বীজ নিয়ে প্রতারিত হওয়ায় গত মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন কৃষকরা।
এর আগের দিন সোমবার (২৮ অক্টোবর) সন্ধায় ভেজাল বীজ নিয়ে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ ও অসাধু এই বীজ ও সার বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে এলাকার শতাধিক কৃষক ও স্থানীয়রা নরসিংপুর বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিষয়টি তদন্ত করে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে বিক্ষোভ মিছিল বন্ধ করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এসময় অসাধু এই বিজ বিক্রেতার দোকান বন্ধ রাখতেও নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। কিন্তু পরের দিন মঙ্গলবার থেকে আবার দোকানঘর খোলা রাখায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বাধ্য হয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর বাজারে সৈয়দ আলী ও আলী হোসেন যৌথভাবে অবৈধভাবে ( লাইসেন্স বিহীন) বিজ, কিটনাসক ও সারের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু বাজারে আর বিজ ও সারের দোকান না থাকায় তারা বাধ্য হয়ে এখান থেকে কৃষি বিজ পণ্য ক্রয় করে থাকে। এতে চলতি আমন মৌসুমে অভিযোগকারীসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১শতাধিক কৃষক গত ৩ মাস আগে এই দোকানঘর হতে রাজা জাতীয় ৪০০ প্যাকেট বীজ কিনে নেয় ও ১০০কৃষকরাই চাষাবাদ করে রাজা জাতীয় বিজ বপন করেন। বর্তমানে গাছে ফলন আসলে কৃষকদের নজরে আসে যে গাছে রাজা জাতীয় টমেটো না এসে ই-পক জাতীয় টমেটো ধরেছে। এতে কৃষকদের কোটি টাকার ও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা উপস্থিত হয়ে বিজ বিক্রেতাকে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিজ বিক্রেতা সৈয়দ আলী ও আলী হোসেন দু’জন একত্রিত হয়ে কৃষকদের অকাট্য ভাষায় গালিগালাজ করেও হুমকি প্রদান করে। কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণ, শীলতা হানী ও অবৈধভাবে পারিচালিত এই বিজ,কিটনাসাক ও সার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সারপিন নগর,খাইরগাঁও, বীরেন্দ্রনগর,সিরাজপুরসহ বেয় কয়েকটি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত (প্রতারিত) কৃষকদের টমেটো চাষের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ কৃষকের টমেটো ক্ষেতে কোনো ফুলও আসেনি। অনেক কৃষক এরই মধ্যে টমেটো গাছ কেটে নতুন চারা রোপণ করার চিন্তা করছে। কেউ জমি পরিষ্কার করছে। কেউ বা আবার উপযুক্ত সময় চলে যাওয়ায় এবছর আর টমেটোর আবাদ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কৃষক নানু মিয়া বলেন, সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে টমেটোর আবাদ করেছি। এক লাখ টাকার ওপরে খরচ। এখন মাঠে এলে বুক ফেটে কান্না আসে। আমার বাবা এই পরিস্থিতি দেখে দুইবার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। লাভ দূরে থাক, এ বছর সমিতির টাকা কীভাবে পরিশোধ করব সেটা নিয়েই রাতে ঘুম আসে না।
বাতির আলী বলেন,আমরা এ মাস থেকে টমেটো বিক্রি শুরু করি। এ বছর এই ইউনিয়নের একশোর বেশি কৃষক এই বীজের কারণে এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসলে আমরা প্রতিকার চাইব কোথায়। কৃষি অফিসের লোকজন এসে ঘুরে যায়। প্রশাসন ও কোন ব্যবস্থা নেয়না। এই ইউনিয়নের কৃষকরা কোটি টাকার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন বলেন, কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন। আমরা দোকানদারকে বিজ বিক্রি করতে নিষেধ করেছি। ভেজাল বিজ বিক্রি করে কৃষকদের ক্ষতি করায় বিজ বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) সুশান্ত সিংহ বলেন, অভিযোগ এসেছে। ইউএনও স্যার ও বিষয়টি জানেন। উনিই ব্যবস্থা নিবেন
এবিষয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নেহের নিগার তনু জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।