সিলেটকে সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে: মুহাম্মদ জাবের
দৈনিকসিলেট ডটকম
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেছেন,সরকার ট্যুরিস্টদের সিলেটমুখী করতে চায়। সিলেটকে সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। পর্যটন খাতকে তরুণদের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক আয়ের ক্ষেত্র হিসেবে বিজনেস মডেলরূপে প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় পর্যটকদের ভ্রমণ সীমিতারোপ করা হয়েছে। তাই দেশী বিদেশী ভ্রমণপিপাসুদের জন্য সিলেটই সবচেয়ে উপযোগী ও সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকা। সেই লক্ষে বর্তমান সরকার কাজ করছে।
মুহাম্মদ জাবের বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের পর্যটন প্রসার ও বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যটনশিল্পের ভূমিকা শীর্ষক স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।বা়ংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড(বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়),বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়,জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও ILO Country Offiece এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী এনডিসি।
জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ।সভায় সিলেটের নতুন নতুন পর্যটন স্পটের সম্ভাবনা নিয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপনা করেন,স্থানীয় সরকার বিভাগ সিলেটের উপ-পরিচালক সুবর্ণা সরকার।এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,বা়ংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক(যুগ্ম সচিব) আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান,আন্তরজাতিক শ্রম সংস্থা (আই এল ও) চট্রগ্রাম অফিস প্রধান এলেক্সিয়াস চি চ্যান,সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউর রহমান প্রমুখ। রক মিউজিয়ামের কাজের অগ্রগতি নিয়ে উপস্থাপনা করেন গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথি বলেন,সরকার ট্যুরিজমকে খুব বেশী গুরুত্ব দিচ্ছে।সিলেটে ট্যুরিজম ইন্ড্রাস্ট্রি গড়ে তোলা হবে। সমুদ্র ও মরুভূমি ছাড়া সিলেটের মতো এত বৈচিত্র্যপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ আর কোথাও নেই।তিনি বলেন, আমরা কমিউনিটি বেইজড ট্যুরিজম, হোম স্টে গড়ে তোলব। পর্যটন এলাকার রেস্টুরেন্টে স্থানীয় বৈচিত্রপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী খাবার দিয়ে সমৃদ্ধ করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা হবে।
তিনি বলেন, ইকোলজিক্যাল ক্রিটিক্যল এরিয়া(ইসিএ)গুলোকে বিপন্ন না করে সুরক্ষিত করতে হবে।পর্যটনে ইনকাম হলে মানুষ আকৃষ্ট হবে।ইনকাম না হলে টেকসই ও হবে না। তাই স্টুডেন্টদের ফটোগ্রাফি প্রশিক্ষণ,ট্যুর গাইড ট্রেনিং, ভলান্টিয়ার তৈরী, এগ্রি ট্যুরিজম,শপিং সেন্টারসহ বহুমুখী কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে। সরকার আইএলও এর সাথে কাজ করছে। পর্যটনে কর্মসংস্থান এর বিপুল সম্ভাবনা আছে।তিনি সিলেটের পর্যটন প্রসার ও বিকল্প-কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ক্যাম্পিং, রিভার কুজসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সুপারিশমালা উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, ট্যুরিজম হল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। যোগাযোগ ও কানেক্টিভিটির জন্য প্রকৃতি কন্যা সিলেটকে অপরূপ সাজিয়ে তোলার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি ভাড়ার একটি চার্ট তৈরী ও বিআরটিসি বাস চালুতে সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ জানান।তিনি আরো বলেন, সম্ভাবনাময় এ পর্যটন খাতকে এগিয়ে নিতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন সভায় প্রধান অতিথি সিলেটের দর্শনীয় স্থানে পর্যটকবৃন্দ যেসব সমস্যায় পড়েন সেগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন।
জেলা প্রশাসন ও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সমন্বয়ে ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ভ্রমণ গাইড উন্মুক্ত করা এবং সিলেটের প্রবেশ দ্বারে I love Sylhet লেখা সমৃদ্ধ স্থাপনা নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে তিনি আরো বলেন, সিলেটের কমিউনিটি ভিত্তিক পর্যটনশিল্প বিকাশে যোগাযোগব্যবস্থা, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবু সেলিম মাহমুদ উল হাসান,পর্যটন এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার তাগিদ দিয়ে বলেন,এখানকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় প্রশাসনকে কাজ করতে হবে। খাবারের মূল্য ও মান নিয়ন্ত্রণে সময়ে সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে।স্টেক হোল্ডারদের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,খাবার হোটেলের কর্মচারীকেও পর্যটকদের সাথে কিভাবে কথা বলবে তা শিখাতে হবে।দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল তৈরীতে ট্যুরিজম ইন্সটিটিউট এ ট্রেনিং এর কথা বলেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, পরিবর্তিত সিলেটে পর্যটন শিল্প ভাল ভূমিকা রাখবে।সৌন্দর্যের লীলাভূমি খ্যাত সিলেট নিয়ে অনেক পরিকল্পনা আছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দিকী বলেন, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চায়নার মতো আমরা পর্যটন খাতে বিপ্লব চাই। আমাদের রিসোর্স আছে।কিন্তু আমরা পারছি না। তাই ইমেজকে ধরে রেখে শেয়ার ভ্যলুজকে তুলে ধরতে হবে।
সভায় জেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা প্রস্তাবনা সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়। এতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত,বেকার জনগণকে কাজে লাগানো, ভলান্টিয়ার ও ট্যুর গাইডকে প্রশিক্ষণ দেয়া,খাসিয়া ও মণিপুরী ব্রান্ডিং,ইকো টুরিজম, ফটোগ্রাফার ও টুর গাইড নিবন্ধন, ভাসমান মাছ বাজার, টুরিস্ট পুলিশ মোতায়েন সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, ক্যাব সভাপতি জামিল চৌধুরী, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ গোলজার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক এম সাইফুর রহমান তালুকদার, জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে ছালিক রুমাইয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবিদা সুলতানা প্রমুখ। সভায় জেলা ও উপজেলার সকল দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ,ট্যুরিজম ক্লাবের সংগঠকবৃন্দ, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।