অটোরিকশা চালিয়ে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন আসিফ
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
রিকশাচালক বাবার একমাত্র পুত্র মো. আসিফ (১৭)। অভাবের সংসারে পড়ালেখা হয়ে ওঠেনি। তবে থেমে থাকেনি তার ক্রিকেট খেলা। এই আগ্রহে বিকেএসপিতে নির্বাচিত হয়ে অপেক্ষমান তালিকাভুক্ত হয়ে প্রশিক্ষণ শুরু করে সে।
বর্তমানে ময়মনসিংহে নিউ জেনারেশন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি না থাকায় উদীয়মান এই ক্রিকেটারের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নিজ এলাকায় আধাবেলা অটোরিকশা চালিয়ে যাতায়াতের টাকা যোগাড় করতে হয়। সেই টাকা দিয়ে বাসযোগে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আসিফ বিকেলে শহরে যায় ক্রিকেট কোচিংয়ে।
এই আসিফ ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কাকচর গ্রামের মো. আব্দুল মান্নানের ছেলে। জানা যায়, বাবা রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে এখন আর তাও পারেন না। অবশ্য মহাসড়কের পাশে বসে চায়ের দোকানদারী করছেন বাবা।
মা ও দুই বোনকে নিয়ে আসিফদের সংসার। এর মধ্যে ক্রিকেট পাগল আসিফ তলে তলে বাংলাদেশ বিকেএসপি-তে আবেদন করে তালিকাভুক্ত হয় (অপেক্ষমান)। এর মধ্যে অনুর্ধ্ব ১৪, ১৬ ও ১৮ দলের হয়ে রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ নেয়। সেখানে ক্যাম্পিংয়ে অনেকের মধ্যে সে ২য় স্থান অধিকার করে। সুযোগ হয়ে যায় ময়মনসিংহ নিউ জেনারেশন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।
বর্তমানে ওই অ্যাকাডেমিতেই শিখছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে কথা হয় আসিফের সাথে। ওই সময় আসিফ টিমের পোশাক পরে নিজের অটোরিকশাটি চালিয়ে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে নান্দাইল সদর থেকে চৌরাস্তা যাচ্ছিল। জানতে চাইলে সে জানায়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থাতেই ক্রিকেটের প্রতি অনেক আগ্রহ। টেনিস বলে স্কচটেপ পেঁচিয়ে বল করতো সে। আর তার বল অনেকেই খেলতে পারতো না। অভাবের সংসারে পড়ালেখা হয়ে ওঠেনি। বাবা রিকশা চালানো বাদ দিয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানেও রিকশা চালানো শুরু করেন। আর তখনি অলিগলিতে ক্রিকেট খেলা দেখে আসিফ নিজেকে ক্রিকেটে জড়িয়ে ফেলে। এভাবে গত পাঁচ বছরে সে বেশ কয়েকজনের সহায়তায় মিরপুরে নেটে বোলিং শুরু করে। দৃষ্টি পড়ে অনেকেরই।
পরে সেখান থেকেই বিকেএসপিতে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয় আসিফ। এক পর্যায়ে রাজশাহী গিয়ে প্রশিক্ষণক্যাম্পে যোগ দেয়। পরে চলে আসে ময়মনসিংহে। এখানে প্রথম বিভাগে খেলতে থাকে। এখন আসিফ নিউ জেনারেশন ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
আসিফ জানায়, ঢাকা থেকে পরিবারের সবাই এলাকায় চলে আসে। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। রিকশা চালানো বাদ দিয়ে অসুস্থ বাবা এখন চায়ের দোকান নিয়ে সংসারের ব্যয় মেটান। আর সেও অটোরিকশা চালিয়ে নিজের খরচ ছাড়াও পরিবারকে সহযোগিতা করে আসছে। প্রতিদিন ভোরে সে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। আর দুপুরের মধ্যে জেলা শহর ময়মনসিংহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হয়। আর সেখানেই সার্কিট হাউজে কোচ সুমন্ত দে’র অধীনে অনেকের সাথে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে প্রতিদিন খরচ হয় কমপক্ষ দেড়শ টাকা।
আসিফ আরো জানায়, টাকার অভাবে ক্রিকেটের সরঞ্জামাদি কিনতে পারছে না। অন্য একজনের প্যাড, হেলমেট ও গ্লাভসসহ অন্যান্য জিনিস নিয়ে কোনোমতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। সে বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেসার তানজিম সাকিবকে অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছে।
আসিফের কোচ সুমন্দ দে জানান, আসিফ একজন উদীয়মান বলার। তার বোলিং স্টাইল অনেক ভালো। ম্যাচে সে ২-৩টি করে উইকেট পায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে আসিফ আগামী দিনের একজন ভালো পেসার হবে বলে আমার বিশ্বাস।