মার্কিন সিনেটের নেতা হচ্ছেন কে, ট্রাম্প প্রশাসনে কারা আসছেন
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হওয়ার উত্তেজনা শেষ হতেই এখন সিনেটের নতুন নেতা নির্বাচন নিয়ে তৎপরতা শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এজেন্ডাগুলো কতটা আইনে পরিণত হবে সেটি ঠিক করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
ট্রাম্প বলেছেন, বুধবার সিনেটরদের ভোটে নতুন নেতা নির্বাচিত করা হবে এবং তাকে অবশ্যই তার মনোনয়নগুলো দ্রুত অনুমোদন করার আগ্রহ থাকতে হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়ে ট্রাম্প মন্ত্রিসভাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে যেসব নিয়োগ দিবেন সেগুলো সিনেটের অনুমোদন পেতে হবে।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি সপ্তাহেই ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করবেন। সে বৈঠকে ট্রাম্পকে ইউক্রেনকে যুদ্ধে সহায়তা থেকে পিছিয়ে না আসার জন্য বাইডেন আহবান জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ফ্লোরিডা সিনেটর আলোচনায়
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন রিপাবলিকান পার্টির। সে কারণে বুধবার এ দল থেকেই নির্বাচিত হবেন সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা। সাধারণত গোপন ভোটে এটি হলেও এবার ভোটের আগেই উঠে আসছে ফ্লোরিডার সিনেটর রিক স্কটের নাম। গত মঙ্গলবার তিনি আরো এক মেয়াদের জন্য পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। এর পর থেকেই তার সহকর্মী টেক্সাসের জন করনিন ও সাউথ ডাকোটার জন থুনের বিপরীতে তার নাম উঠে আসে।তবে জন করনিন ও জন থুন—দুজনের কেউই ডোনাল্ড ট্রাম্প শিবিরের আস্থাভাজন ব্যক্তি নন। ফলে দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও এখন প্রকাশ্যে স্কটের কথা বলছেন।
আলবামার টমি টিউবারভিলসহ অন্তত পাঁচজন স্কটকে সমর্থন করেছেন। এ ছাড়া রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়ার লিখেছেন, ‘রিক স্কটকে ছাড়া ট্রাম্পের পুরো সংস্কার এজেন্ডা টলমল করবে।’ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্ক ও মার্ক রুবিও স্কটকে সমর্থন করেছেন। সিনেটের বর্তমান রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল আগেই পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনে কারা থাকতে পারেন
এদিকে প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানের নিয়ন্ত্রণ আসবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। এটি হলে কংগ্রেসের উভয় কক্ষই তাদের নিয়ন্ত্রণে আসবে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনে কারা কাজ করবেন তাদের পর্যালোচনার কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গত সপ্তাহেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রশাসনের হোয়াইট হাউসের চীফ অব স্টাফ হিসেবে সুসি ওয়াইলসের নাম ঘোষণা করেছেন। এর বাইরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ভিবেক রামাস্বামীর নাম শোনা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পেতে প্রাইমারি থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এখন দেশের শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে তার নাম তালিকায় আছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থমন্ত্রী হিসেবে শোনা যাবে বিলিওনিয়ার স্কট বেসেন্টের নাম। ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনে তিনি মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। এ ছাড়া ট্রাম্পের অর্থনীতিসংক্রান্ত নীতি আলোচনার প্রস্তুতিতেও তিনি সহায়তা করেছেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে আসতে পারেন ক্রিস্টোফার মিলার। ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। এখন দেশটির সামরিক বাহিনীর দেখভাল করতে তিনি আবার দায়িত্ব পেতে পারেন। এ ছাড়া টম হোম্যানের নাম শোনা যাচ্ছে হোমল্যান্ড সেক্রেটারি হিসেবে। ট্রাম্পের অভিবাসননীতির অন্যতম বড় সমর্থক তিনি। সম্ভবত তিনিই পাবেন অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠানো ও সীমান্ত ‘বন্ধ’ করে দেওয়ার কাজ।
ওয়াশিংটনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ মানে কী?
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলতে সরকারের তিনটি শাখা—হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস ও বিচারব্যবস্থাকে বোঝায়। গত সপ্তাহের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প যাবেন হোয়াইট হাউসে। এটি তাকে সরকারের নির্বাহী শাখার নিয়ন্ত্রণ দেবে। রিপাবলিকান পার্টি সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হয়েছে। এমনকি তারা প্রতিনিধি পরিষদেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর এ দুটি মিলেই যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস, যা সরকারের আইন প্রণয়নকারী অংশ। অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়েছিল। এই সুপ্রিম কোর্টই হলো সরকারের তৃতীয় অঙ্গ।
ট্রাম্পের উচ্চাভিলাষী নানা এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাকে ফেডারেল প্রশাসন পুনর্গঠন করতে হতে পারে। বিদায়ী প্রশাসনের অনেক নীতি পরিবর্তন কিংবা পাল্টাতে হতে পারে। এ ছাড়া জ্বালানি, অর্থনীতি, অভিবাসন ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে।
এখন নির্বাহী বিভাগ, কংগ্রেস ও বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণে থাকায় তারা সহজেই তাদের চিন্তাগুলো দ্রুত বিল আকারে উপস্থাপন করে পাস করিয়ে নিতে পারবে। আর তাতে প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করলেই সেটি আইন হয়ে যাবে। কেউ সেগুলো আদালতে চ্যালেঞ্জ করলেও আদালত তা বহাল রাখতে পারেন। তা না হলে রিপাবলিকানরা সুপ্রিম কোর্টে যাবে, যেখানে তাদের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দেওয়া হবে। সূত্র : বিবিসি