জুড়ীতে কমলা চাষে সাড়ে তিনশ চাষির সাফল্য
দৈনিকসিলেট ডটকম
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় সফলতা এসেছে কমলা চাষে। টকমিষ্টি স্বাদের অত্যন্ত উপকারী একটি মৌসুমি ফল কমলা।
এ ফলটি সাড়ে তিনশ চাষির পকেটে এনে দিচ্ছে প্রায় ৮৪ কোটি টাকার আর্থিক সাফল্য।
পাহাড়ি উঁচু-নিচু এলাকায় কমলা চাষের আদর্শ জায়গা। গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে থোকা থোকা পাহাড়ি কমলার সমাহার। কোনোটা কাঁচা আবার কোনো পাকা এভাবেই এর বিস্তৃতি যতদূর চোখ যায়। এই শীত মৌসুমের দারুণ চাহিদাসমৃদ্ধ এ ফলটি এখন পুরোপুরি পরিপক্ব।
এই বিশেষ ফলটিকে ঘিরে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। গাছ থেকে ফল নামানো, জড়ো করা, ক্যারেটে করে বাজারজাতকরণের উদ্দেশে পরিবহনে পৌঁছে দেওয়া।
জুড়ীর গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের হায়াছড়া গ্রামের কমলা-চাষি জামাল হোসেন বলেন, আমার প্রায় ২শ’র বেশি কমলা গাছ রয়েছে। প্রায় ছয় বছর ধরে আমি এই কৃষিতে জড়িত আছি। আগে আব্বু ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি আমাদের কমলা চাষের হাল ধরেছি। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ ফল পাকা শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে চলে একেবারে নভেম্বর পর্যন্ত। অনেক চাষি অক্টোবরের আগে থেকেই কমলা পারা শুরু করে দেয়। কিন্তু আমি গাছে কমলা পোক্ত হলে তারপর গাছ থেকে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমার গাছের কমলাগুলো কেজি প্রতি দেড়শ’ থেকে দুশ’ টাকায় বিক্রয় করেছি। এর থেকে এ বছর সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতে পেয়েছি। মালের পরিবহণ খরচ তো অনেক বেশি। পুরো পরিবহনে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। আমার বাগান তো রাস্তার পাশে নয়, তাই একটা ক্যারেট পরিবহনে প্রায় ১০০ টাকা নিয়ে নেয়।
জুড়ীর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, আমাদের জুড়ী উপজেলায় ৯৮ হেক্টর জমিতে কমলা চাষ হচ্ছে। আমরা আশা করছি ৭০০ টনের মতো কমলা পাবো। ৩৫০ জন চাষি এই কমলা চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। প্রায় দশ টন করে প্রতি হেক্টরে এই কমলার উৎপাদন রয়েছে। আসলে এই ফসলটা ফল হওয়ার কারণে ধানের মতো টার্গেট বা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা কঠিন। ধান যেমন প্রতি সিজনে কেটে ফেলে নতুন করে করা হয় কমলার বাগান তো সেভাবে হয় না। একটা কমলার বাগান পুরোপুরিভাবে সৃজন হতে মিনিমাম দু’-তিন বছর লাগে।
প্রজাতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অধিকাংশ চাষিদের মাঝে নাগপুরী এবং খাসিয়া জাতের কমলার ফলন রয়েছে। নাগপুরী জাতের কমলা অধিকতর রসালো এবং সুমিষ্ট। তবে আমরা কৃষকদের আমাদের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরীক্ষিত ফসল ‘বারি কমলা-৩’ চাষ করার পরামর্শ দিয়ে থাকি। এটি নতুন একটি ভ্যারাইটি। এ প্রজাতির গাছগুলো ছোট হওয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে পরিচর্ষার করতে অনেক সহজ এবং এগুলো অধিক ফলন দিতে সক্ষম।
সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এলাকার বাগানগুলো প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশ বছরের পুরোনো। কোনো কোনো গাছ আবার রোগাক্রান্ত হয়ে গেছে। ফলে ফলন কিছুটা কম আসে। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যেটা করছি সেটা হলো- আমরা আধুনিক জাতের যে কলমের চারাগুলো দিচ্ছি। এর পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে সব কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সার, কীটনাশক, বীজ প্রভৃতি কৃষকদের মাঝে বন্টন করছি। আমরা কমলা চাষিদের আধুনিকায়ন পদ্ধতিতে চাষাবাদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
চাষিরা কেজি প্রতি এই কমলা ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি করছেন। সে হিসেবে মোট বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ৮৪ কোটি টাকা। কলম থেকে পরিপূর্ণ গাছ হয়ে কমলা ধরতে প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন বছর সময় লাগে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মৌলভীবাজার কমলার জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। সত্যি বলতে এই এলাকার অন্যতম সোনালি ফসল। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ৮৪ কোটির সাফল্য শুধু স্থানীয় কমলা চাষিদের মাঝেই নয় জাতীয় অর্থনীতিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দেশের মাটি এবং বৃক্ষ সব সময়ই সম্ভাবনার প্রতীক। কৃষিতে কোনো কৃষকের কষ্টার্জিত হাতে এরূপ ফসলের প্রয়োগ হলে অনেকক্ষেত্রেই বিস্ময় ঘটে যায় বলে জানান তিনি।