পানি দিয়েই যেভাবে জ্বালাতে পারবেন বাতি

প্রযুক্তির এক অনন্য আবিষ্কার বাতি। যুগ যুগ ধরে এই বাতির আধুনিকায়ন এবং উন্নতির পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। আধুনিক যুগের বাতি আর মধ্য যুগের বাতির মধ্যে রয়েছে বিশাল ফারাক। কয়েক বছর আগেও দেখা মিলত এক ধরনের বাতি যা দেখলে মনে হবে এর পেছনে তেল-বিদ্যুতের ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আসলে এটি জ্বালানো হয় পাথরের মতো পদার্থ এবং পানি দিয়ে। এ ধরনের বাতিকে মূলত বলা হয় কার্বাইড ল্যাম্প।

এ ধরনের বাতির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত পাথরগুলো সাধারণত ক্যালসিয়াম কার্বাইডের টুকরো এবং ব্যবহার করা হয় বিশুদ্ধ পানি। কার্বাইড বাতি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করা হয় ১৮ শতকের মাঝামাঝিতে। এই ধরনের বাতিগুলো ব্যবহৃত হতো গাড়ির হেডলাইট, স্টিমার ও সাইকেলের কাজে ব্যবহার করার জন্য। তবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করতে দেখা যেত মাটির গভীরে কাজ করার জন্য।

পাথর আর পানিতে চলা এ ধরনের বাতিগুলো কাজ করত সহজ কিন্তু বেশ জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কার্বাইড বাতি মূলত খুব সাধারণ একটি ডিভাইস। এর শরীরে থাকা ছোট সিলিন্ডারের দুটি আলাদা প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এর একটিতে পানি এবং অপরটিতে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের টুকরো রাখা হয়।

পানি ক্যালসিয়াম কার্বাইডের সংস্পর্শে এলে অ্যাসিটিলিন গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে বাতিটি সফলভাবে জ্বলে ওঠে। বাতিটির মাথার দিকে সিসার তৈরি অবতল প্লেটে থাকা একটি ছোট চাকা ঘুরিয়ে দিলেই অ্যাসিটিলিন গ্যাস জ্বলে ওঠে এবং আগুনের সৃষ্টি হয়।

আলোচিত এই কার্বাইড বাতির ইতিহাস বেশ পুরোনো। সর্বপ্রথম ১৮৯২ সালে টমাস উইলসোন চুন ও কোকের মিশ্রণে ক্যালসিয়াম কার্বাইড আবিষ্কার করেন। এই সময় কার্বাইড আবিষ্কার ছিল রীতিমতো রসায়ন শিল্পবিপ্লবের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো এই বাতিগুলো। তৎকালীন সময়ের বাতিগুলোর দাম ছিল ১২০ থেকে ২৪০ টাকায়, যা বর্তমানে দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত।

কার্বাইড বাতির খ্যাতি পাওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল এর উজ্জ্বল আলো। দীর্ঘদিন ব্যবহার করার সুবিধাসহ সহজেই এর রক্ষণাবেক্ষণ করা যেত। তবে বর্তমান এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবহারের ফলে প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে এই কার্বাইড বাতি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন