ঠোঁটে ভাইরাসের সংক্রমণে করণীয়
ডা. দিদারুল আহসান
অনেকের মুখে প্রায়ই ঘা দেখা দেয়। মুখে ঘা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। ভিটামিনশূন্যতার কারণেও এ সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে। মুখ ও ঠোঁটে বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণেও ঘা হতে পারে। মুখে সাধারণত হারপিস ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, যা হারপিস সিমপ্লেক্স ও হারপিস জোস্টার নামে পরিচিত। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস প্রধানত লালা ও শরীরের অন্যান্য নিঃসৃত রসের মাধ্যমে মুখে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এ ভাইরাস দিয়ে প্রাথমিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে মাড়ি ও ঠোঁটে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এটি জিনজাইভো স্টোমাটাইটিস নামে পরিচিত। হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের প্রাথমিক সংক্রমণের ক্ষেত্রে অধিকাংশ রোগী কষ্ট অনুভব করে না। রোগটি কয়েক দিন পর এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
তবে বারবার হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ঠোঁটে ফুসকুড়িসহ প্রদাহ দেখা দিতে পারে, যা মানুষের কাছে জ্বরঠোসা নামে পরিচিত। তবে সিফিলিসের কারণেও ঠোঁটে ঘা হয় এবং ঠোঁটের দুই কোণে ঘা হয়ে সাদা হয়ে যায়। এ সময় হাঁ করতেও কষ্ট হয়। ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং খেতে অসুবিধা হয়। এ ছাড়া দেখতেও খারাপ লাগে। যারা প্রাপ্তবয়সে হারপেটিক সংক্রমণে আক্রান্ত হন, তাদের দীর্ঘমেয়াদি আকারে হারপিস রোগ শরীরে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এরপর সেখান থেকে এনকেফালাইটিসের মতো মস্তিষ্কের প্রদাহ হতে পারে। এ ছাড়া হারপিস ভ্যারিলিসা জোস্টার ভাইরাসের প্রাথমিক সংক্রমণের কারণে চিকেনপক্স হয়।
প্রাথমিক সমাধান : ঠোঁট ফাটলে অনেক সময় ত্বকের মরা অংশ জমে ঠোঁটের ওপর। এ সমস্যায় রাতে ঘুমানোর সময় বাদাম তেল লাগাতে হবে ঠোঁটে। মরা অংশ কোনো অবস্থায়ই টেনে তোলা যাবে না। ঠোঁট ভেজাতে জিভ দিয়ে কখনো চাটবেন না। মুখের লালায় যে রাসায়নিক উপাদান থাকে, তা ঠোঁটকে আরও শুকিয়ে দেয়। ঠোঁট মসৃণ করতে দুধের সর, মধু ও চিনি দিয়ে প্রতিদিন মাত্র দুই মিনিট মেসেজ করুন। শরীর আর্দ্র থাকলে ঠোঁটও শুষ্ক হবে না। এজন্য প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন। ভিটামিন-সি-সমৃদ্ধ লেবু, জলপাই, আনারস, স্ট্রবেরি, টমেটো, ব্রোকলি, সবুজ শাকসবজিসহ সব সময় সহজপাচ্য ও হালকা মসলাযুক্ত স্বাস্থ্যকর খাবার খান। নিয়মিত খেজুর, বাদাম, দুধ বেশি বেশি খান।
চিকিৎসা : অ্যাসাইক্লোভির গোত্রভুক্ত ট্যাবলেট ভাইরাস (৭ থেকে ১৪ দিন) সংক্রমণের মাত্রা এবং ধরন অনুযায়ী খেতে হয়। তবে যারা দীর্ঘমেয়াদি হারপিস সিমপেক্স ভাইরাসে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ অনেক সময় উপকারে নাও আসতে পারে। রোগীকে এ সময় প্রচুর পানি পান করতে হয়। সর্বোপরি মুখের অভ্যন্তর পরিষ্কার রাখতে হবে। এজন্য ক্লোরোহিক্সিডিন মাউথওয়াশ ০.২ শতাংশ ব্যবহার করতে হবে দুই সপ্তাহ। গর্ভাবস্থায় ভাইরাসরোধী ট্যাবলেট সেবন করা যাবে না। তা ছাড়া দুগ্ধদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের কিডনি সমস্যা আছে অথবা রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেশি থাকে, তাদের কোনো অবস্থায়ই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা ঠিক নয়। ঠোঁটের ঘা বা ক্ষতে অ্যাসাইক্লোভিন ক্রিম ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট
গ্রিন লাইফ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
গ্রিন রোড, ঢাকা। ০১৭১৫৬১৬২০০, ০১৯১১৪০৪২৭৫