সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস আজ
রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ
আজ ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে সুনামগঞ্জ শহর হানাদার মুক্ত হয়। তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমা শহর ছেড়ে পিছু হটে পাক হানাদার বাহিনী। প্রতিটি এলাকার ঘরে ওড়ে স্বাধীনতার লাল সবুজের পতাকা। দিবসের এ দিনে সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিনসহ ৩ মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পালিয়ে যায় পাক হায়েনা দল। এ ঘটনা ছিল মুক্তিকামী মানুষের জন্য বেদনাদায়ক।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাগন জানিয়েছেন, তৎকালীন ৫নং সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ মোতালেব, সুনামগঞ্জ সীমান্তের যোগীরগাঁও ক্যাপ্টেন যাদব, সুনামগঞ্জ শহরতলির আমবাড়ী বাজার এলাকা ও ক্যাপ্টেন রঘুনাথ গৌরারং এলাকা হয়ে মুক্তিপাগল সেনারা জীবনবাজি রেখে একযোগে সুনামগঞ্জ শহরে প্রবেশ করেন ভোরবেলা।
মুক্তিযোদ্ধা-মিত্রবাহিনীর সাঁড়াশী অভিযানের মুখে পিছু হটে হায়েনাদল। এর আগে ২৭ নভেম্বর হায়েনাদল চারদিক দিয়ে আটঘাট বেঁধে আক্রমণ চালানোর কারণে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মঙ্গলকাটা ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে পাশের গোধীগাঁও, নৈদেরখামার ও মীরেরচর এলাকায় অবস্থান নিয়ে হায়েনাদের সাথে প্রতিরোধ যুদ্ধ করেন। একপর্যায়ে তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ ছাত্রনেতা মুক্তিযোদ্ধা তালেব উদ্দিন আটকা পড়েন। পাকবাহিনী সুনামগঞ্জ ছেড়ে যাওয়ার সময় (৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১) আহসানমারা এলাকায় তালেবসহ ৩ জনকে একরশি দিয়ে বেঁধে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে নদীতে ফেলে যায়।
ছাত্রনেতা তালেব উদ্দিনের জয় বাংলা স্লোগান উজ্জীবিত করতো সকলকে। সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তিনি। দেশীয় দালালদের সহযোগিতায় তাকে আটক করে হায়েনাদল আর রাজাকারদল শহরের গলি দিয়ে ঘুরিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। তালেব উদ্দিনকে সুনামগঞ্জ পিটিআইয়ের টর্চারসেলে এনে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে সুনামগঞ্জ ছেড়ে পালানোর সময় নির্মমভাবে তালেব উদ্দিনকে হত্যা করে পালায় পাক হায়েনাদল।
অন্যদিকে, ৬ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ মুক্ত হওয়ায় সকলে আনন্দিত হয়ে উল্লাস করলেও তালেব উদ্দিনসহ ৩ মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু সহযোদ্ধাদের কাঁদিয়েছে, আজও কাঁদায়।