রনজিতের ক্যাডার অপ্রতিরোধ্য চাঁদাবাজ “সম্রাট” দেখার যেন কেউ নেই!
![](https://dainiksylhet.com/images/icon.jpg)
রাজু আহমেদ রমজান
হাতপেতে চলে তার পিতার জীবন। দিনশেষে দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে আসা সেদিনের পিচ্চি সম্রাট আর সহোদর খলিলের জন্য ৫-১০ টাকার ‘মজা’ তুলে দিতেন মানুষের কাছে হাতপেতে আদায় করা টাকা দিয়ে। সেই পিতা মারা গেলে বড্ড অসহায় হয়ে পড়ে সম্রাট-খলিল। অসহায়ত্বের সংসারে হাল ধরে বিতর্কিত বোনজামাই (ঘরজামাই)। যায়দিন, কাটে বছর। পেটের তাগিদে অবশেষে দুই সহোদর জড়িয়ে পড়ে শিলং তীর ও ডাব্বা নামক জুয়াসহ নানা অপরাধকান্ডে। বন্ধু-স্বজন কিংবা এলাকার প্রথানুযায়ী সৎপথে হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকা ভাগ্যে জুটেনি তাদের। অবৈধ টাকার ঘ্রাণে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে নদী-হাওর, সীমান্তে সম্রাট সাম্রাজ্যের অধিপতি হয় চকলেটের জন্য অপেক্ষা করা সেই সম্রাট। হাতে বিদেশি ব্রান্ডের ঘড়ি, গলায় বিভিন্ন ব্রান্ডের চেইন, কোমরে ইয়া মোটা টাকার থলে আর লাইসেন্সবিহীন অভিজাত সুজুকি মোটরসাইকেল চড়ে দিনযাপন করা সম্রাট রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের যেন হার মানায়। সুর্যাস্তের পর ভিন্ন রুপে সহোদর ও নিকটাত্মীয়কে নিয়ে বিভিন্ন বাহিনী পরিচয়ে খামচে ধরে নৌযান মাঝিদের। বিগত সরকার আমলে আওয়ামী লীগ পরিচয়ে নৌপুলিশসহ বিভিন্ন নামে চাঁদা উত্তোলন শুরু করে সম্রাট ও তার সহোদর খলিল। সরকার পতনের পর বনে যায় বিএনপি সমর্থক! চোরাচালানি সম্রাট আজ হাওর-নদী, সীমান্ত জনপদের মুর্তিমান আতংক। নিকটাত্মীয়ের সহযোগিতায় গড়ে তুলেছে”সম্রাট বাহিনী”। চাঁদাবাজ সম্রাটকে যেন ঠেকানোর কেউ নেই স্বাধীন বাংলাদেশে!
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের তরং গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে সম্রাট। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ঢের। পাটলাই নদীপথে চলাচলকারী নৌযান থেকে চাঁদা আদায়কারি সম্রাট মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পংকজ তালুকদার।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রলার (বাল্কহেড) নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার তাহিরপুর থানায় সম্রাটকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নৌযান সংগঠনের নেতা। এর আগে ওই সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর মিয়া, অভিযোগকারি নৌযান মাঝিদের নিয়ে ২ ডিসেম্বর সোমবার বেলা চারটায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে রিসিপশনে পাসকার্ড সংগ্রহ করেন। পরক্ষণে সাক্ষাৎ করেন আদর্শবান এসপির সাথে। সম্রাটের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে এসপির হস্তক্ষেপ কামনা করলে দ্রুত তাহিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেন আদর্শবান পুলিশ সুপার। পরদিন মঙ্গলবার তাহিরপুর থানায় স্বশরীরে উপস্থিত হয় লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। বিতর্কিত এসআই আমির উদ্দিন অভিযোগ জমা রাখেন রিসিভবিহীন।
এদিকে, বাদির দায়েরকৃত থানায় ও বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরিত অভিযোগ দ্রুত উড্ড না করলে বাদিসহ সংশ্লিষ্টদের উল্টো চাঁদাবাজি মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে সম্রাট শুভাকাঙ্খিরা অনবরত ফোন করছেন বলে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন পংকজ তালুকদার। তাঁরা অডিও রেকর্ড সংগ্রহে রাখছেন বলেও জানিয়েছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে তাহিরপুর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন বলছেন ভিন্নকথা। অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়ে প্রথমে অস্বীকার করে পরে বলেন, একটা অভিযোগ দিয়েছিল পংকজ তালুকদার। এর পর আর থানায় আসেননি তিনি। নানা বির্তকের জন্ম দেওয়া এসআই আমির উদ্দিন বলেন, পংকজ তালুকদার বাদী হয়ে সম্রাটকে আসামী করে দায়েরকৃত অভিযোগটি আমি গ্রহন করেছি। ওসি স্যার বলছেন বিষয়টি তিনি বুঝবেন। আমি ছুটিতে থাকায় এর বেশী জানি না। অভিযোগ প্রসঙ্গে সম্রাট মিয়া সুনামগঞ্জের এক সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে ৭ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ভাই এই মামলাগুলো প্রসেসিং চলতেছে। তার ভাষায়- কালকে এসব মামলা নিয়া বোর্ড বসা হইব। আমি আপনারে রাতে ফোন দিব বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় চতুর সম্রাট। প্রসঙ্গত, এ প্রতিবেদক নানা কারণে ফোন দেননি অভিযুক্ত সম্রাটকে।
এর আগে গেল ৭ নভেম্বর সুনামগঞ্জের ডিসি, এসপি, সেনাবাহিনী ক্যাম্প, টুকেরবাজার নৌপুলিশ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনে লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। একই সংগঠনের কার্যকরী সদস ফয়সাল আহমেদ লিখিত অভিযোগ দেন একটি মানবাধিকার সংস্থার কাছে। অপহরণ মামলার জেলকাটা আসামি সম্রাটের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে গত ২২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের এক মানবাধিকারকর্মী। সম্রাটের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য দুলাল মিয়া। গত ২০ আগষ্ট জনস্বার্থে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় ওই সেনা সদস্য। অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারি করা হয় সম্রাটের নামে। এরপর থেকে ওই সেনা সদস্যকে ফাঁসিয়ে দিতে সন্ত্রাসী-ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ-দাঙ্গাবাজ উল্লেখ করে সম্রাট অপর এক ব্যক্তিকে বাদি বানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। গেল ১৯ আগষ্ট করা অভিযোগে সেনা সদস্যের সহযোগী হিসেবে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত রেখে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ইয়াবাসেবী সম্রাট। এরপর ঝামেলা এড়াতে মামলা প্রত্যাহার করেন আদর্শবান নিরীহ সেনা সদস্য। ফলে মিথ্যার ক্ষণজয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে চাঁদাবাজ সম্রাট। বিভিন্ন ড্রেস পড়ে গভীররাতে চোরাচালানের পন্যবাহী নৌযান থেকে ইচ্ছেমতো চলে চাঁদাবাজির মহোৎসব।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, উচ্চ আদালতে মামলা চলাকালীন তরং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখলীয় সম্পত্তি অপকৌশলে রেকর্ড মালিক বনে গেছে সম্রাট। দেশীয় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া স্বত্তেও সেখানে ২০ লাখ অধিক টাকা ব্যয়ে পাকা দালান কোটা নির্মাণ করে আইনের সাথে প্রতারণা করে ভূমিখেকো সম্রাট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আক্ষেপ করে এসব বলেন। কাগজ ঘেঁটে দেখা যায়- ২০১৭ সালের ১৫ মে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত সিভিল রিভিশন নং-১৫৬৩ মোকদ্দমাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে।
অপহরণ মামলার জেলকাটা আসামি সম্রাট ও তার সহোদরের বেপরোয়া চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে গেল ৭ নভেম্বর নৌ-ধর্মঘট করেন নৌযান মাঝিগন। শ্রীপুরবাজার মসজিদের ঘাটে পাটলাই নদীতে নৌঙর করে রাখা ৮টি নৌযান মাঝি ধর্মঘট শুরু করেন ভোরবেলা থেকে। তথ্যচিত্র, ভিডিও বক্তব্য ধারণ করে জনস্বার্থে বিষয়টি এসপিকে অবগত করেন পেশাদার দুই সাংবাদিক। অপরাধী ধরতে তাহিরপুর থানার ওসিকে কঠের নির্দেশ দেন তিনি। ঘটনাস্থলে যান বিতর্কিত এসআই আমির উদ্দিন ও বিতর্কিত এএসআই কামাল। এরপর গণেশ পাল্টে যায়। অন্যদিকে দলছুট চাঁদাবাজ সম্রাট তার সহোদর খলিল ও নিকটাত্মীয়দের নিয়ে সুকৌশলে শ্রীপুরবাজার মসজিদের ঘাটে পাটলাই নদীতে নোঙর করা নৌযান মাঝিদের অবস্থান ধর্মঘট থেকে সরিয়ে নেয়। চাঁদাবাজ সম্রাটের সাথে সমঝোতার পর কয়লা-চুনাপাথবাহী এসব নৌযান গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে অদৃশ্য ইঙ্গিতে ভিডিও বক্তব্য দেওয়া নৌকার মাঝিকে সুকৌশলে আটকে রাখে সন্ত্রাসী সম্রাট। মাঝির দেওয়া বক্তব্য পরিবর্তন আনতে সর্বাত্মক চেষ্টায় অবশেষে সফল হয় বিভিন্ন অপরাধের মুলহুতা সম্রাট। তার কথামতো ওই মাঝির শেখানো বুলি সুকৌশলে মোবাইলে ধারণ ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন এসআই আমির উদ্দিন।
সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজান উপরমহলে ভিডিও তথ্য-ছবি পাঠিয়েছে বলে সম্রাট এবং ওসির নাম ভাঙিয়ে প্রতিরাতে চেরাচালানের নৌকাপ্রতি ১২ হাজার টাকা উত্তোলনকারী সোর্স পরিচয়ধারী জনৈক ব্যক্তির কাছে অকপটে বলে দেন এসআই আমির উদ্দিন। পরে সন্ত্রাসী সম্রাট স্থানীয় শ্রীপুর বাজারে সাংবাদিক রাজুকে পেয়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে বীরদর্পে চলে যায় তার নিয়ন্ত্রিত চাঁদাবাজির সাম্রাজ্য পাটলাই নদীপথের সংরক্ষিত আস্তানায়। ঘটনাস্থলে যাওয়া এএসআই কামাল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ওই মাঝির বক্তব্য ও সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছেন আমির স্যার।
এসপির নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চাঁদাবাজ সম্রাটকে আটক না করে গুরু-শিষ্যের ছক আঁকতে থাকেন আমির উদ্দিন। এরই ধারাবাহিকতায় সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজান ও তাহিরপুর উপজেলার সাংবাদিক আহম্মদ কবিরের নামে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করে সীমান্তের শীর্ষ ত্রাস সম্রাট। এরপর পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খাঁনের নির্দেশে পরিকল্পিত অভিযোগ ঘোড়া ডিমে পরিণত হয়। উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী সম্রাট স্বাক্ষরিত অভিযোগ কপি কেবল বিতর্কিত এসআই আমির উদ্দিনের কাছে সংরক্ষিত ছিল। যা ওসি জানেন না বলে সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ শেরগুল আহমেদ এর কাছে জানান।
চাঁদাবাজ সম্রাট ও তার সহোদর খলিলকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেড়িয়ে আসবে ভয়ংকর অজানা তথ্য। দ্রুত আইনি ব্যাবস্থা না নিলে দুই সহোদর ভয়ংকর নতুন ঘটনার জন্ম দিবে ধারণা এলাকাবাসীর। গোষ্ঠীগত দাঙ্গাবাজ সম্রাট সাম্রাজ্যে অপকর্মের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে নিরপেক্ষ আর গোপন তদন্তে। অনুসন্ধানী ২য় ও সর্বশেষ পর্বের ডকুমেন্ট সংগ্রহ চলমান। তথ্য-প্রমাণ শতভাগ নিশ্চিতের পর আসছে বিস্তারিত।