মাহমুদউল্লাহ-জাকেরের ঝড়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩২১
দৈনিকসিলেট ডেস্ক
তানজিদ হাসান তামিম- লিটন দাসের বিদায়ে শুরুটা হয়েছিল বিভীষিকাময়। এরপর সৌম্য সরকার- মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে বেঁধে দেন বড় সংগ্রহের সুর। মাঝে আফিফ হোসেন ব্যর্থ হলেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ- জাকের আলীর স্বপ্নের মতো ফিনিশিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাঁচ উইকেটে ৩২১ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। এতো রান অতিক্রম করে এর আগে কোনও দলই এই স্টেডিয়ামে জিততে পারেনি।
মাহমুদউল্লাহ- জাকেরের ব্যাটে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ
১৭১ রানে পঞ্চম উইকেটের পতনের পর জুটি বেঁধেছেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের আলী। ৩৮তম ওভারের শেষ বলে গুড়াকেশ মোতিকে লং অনের ওপর দিয়ে লম্বা এক ছক্কা মেরে দলের রান দুইশ পার করেন মাহমুদউল্লাহ।
দ্রুত ২ উইকেট হারানোর ধাক্কা ভালোভাবেই সামাল দেন মাহমুদউল্লাহ ও জাকের। সাবধানী ব্যাটিংয়ে শুরুর পর রানের গতি বাড়িয়ে ৫৯ বলে জুটির পঞ্চাশ স্পর্শ করে তারা। ইতোমধ্যেই ২৫০ রান পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ।
মিরাজের পর ফিরলেন আফিফও
রোমারিও শেফার্ডের বলে শর্ট মিড অফে ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে চেয়েছিলেন আফিফ হোসেন। বাঁহাতি ব্যাটারের ডাকে সাড়া দিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজও। তবে স্ট্রাইক প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভাঙেন শেরফান রাদারফোর্ড। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রান আউট হয়ে ফিরতে হয়েছে মিরাজকে।
বাংলাদেশের অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছে ৭৭ রান। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে আফিফকে শিকার করেছেন রাদারফোর্ড। ডানহাতি মিডিয়াম পেসারের শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে কিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। আফিফ ফিরেছেন ১৫ রানে। সেই ওভারে কোন রান বের করতে পারেনি সফরকারী ব্যাটাররা।
সৌম্যর বিদায়ে ভাঙল জুটি
হাফ সেঞ্চুরির পর আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী হয়েছিলেন সৌম্য সরকার। তবে বাঁহাতি ওপেনারকে খুব বেশি দূরে যেতে দিলেন না গুড়াকেশ মোতি। বাঁহাতি স্পিনারের মিডল স্টাম্পের বলে ব্যাকফুটে গিয়ে লেগ সাইডে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করেছিলেন সৌম্য। বল প্যাডে আঘাত হানতেই মোতির আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দিয়েছেন আম্পায়ার। বাংলাদেশের ওপেনার রিভিউ নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। ৭৩ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে তাকে। সৌম্যর বিদায়ে ভেঙেছে মিরাজের সঙ্গে তাঁর ১৩৬ রানের জুটি।
মিরাজের পর সৌম্যর হাফ সেঞ্চুরি, ছুটছে বাংলাদেশ
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচেই ভালো শুরু পেয়েছিলেন সৌম্য সরকার। তবে তিন ম্যাচের একটিতেও পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অবশ্য প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারছিলেন। শেষ ম্যাচে এসে অবশ্য জ্বলে উঠলেন সৌম্য। মোতির বলে লং অনে ঠেলে দিয়ে ৫৮ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন। ওয়ানডেতে এটি তাঁর ১৩তম হাফ সেঞ্চুরি।
মিরাজের হাফ সেঞ্চুরি
অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন মিরাজ। তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সুবিধা করতে পারেননি। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে তানজিদ তামিম ও লিটনকে হারিয়ে বাংলাদেশ যখন বিপদে তখন পাল্টা আক্রমণে বাংলাদেশকে পথ দেখান তিনি। গুড়াকেশ মোতির বলে কাট করে থার্ডম্যান দিয়ে চার মেরে ৫৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মিরাজ। চলমান ওয়ানডে সিরিজে এটি তাঁর দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি।
সৌম্য-মিরাজ জুটির পঞ্চাশ
আলজারি জোসেফের এক ওভারে তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাসের উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে বাংলাদেশ। তবে চারে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করতে থাকেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের অধিনায়কের পাল্টা আক্রমণে বিপদে কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৬ রান তুলেছে। মিরাজকে দারুণভাবে সঙ্গ দিচ্ছেন ওপেনার সৌম্য। তাদের দুজনের জুটিতে বিপদ কাটিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টায় সফরকারীরা। এ ছাড়া ৫৬ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েছেন মিরাজ ও সৌম্য।
ওয়ানডেতে শেষের ১২ মাস ভুলে যেতে চাইবেন লিটন
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে পারেননি লিটন দাস। টেস্টের মতো ওয়ানডেতেও বলার মতো কিছুই করে দেখাতে পারেননি ডানহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। শুধু ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জেই নয় লম্বা সময় ধরেই ওয়ানডেতে ছন্দে নেই তিনি। সবশেষ ১২ ম্যাচে ৮ ওয়ানডেতে মাত্র ৩৫ রান করেছেন লিটন। মাত্র ৫ গড়ে রান করেছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
৮ ম্যাচের মাঝে তিনবার আউট হয়েছেন শূন্য রানে। এই সময়ে লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ও পেসার তানজিম হাসান সাকিবও তাঁর চেয়ে বেশি রান করেছেন। এদিকে সবশেষ ২১ ওয়ানডেতে মাত্র দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন লিটন। সবশেষ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলেছেন ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর, ভারতের বিপক্ষে।
তানজিদের পর লিটনেরও শূন্য
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরতে পারতেন সৌম্য সরকার। আলজারি জোসেফের অফ স্টাম্পের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে আউট সাইড এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি ব্রেন্ডন। ফলে শূন্য রানে জীবন পান সৌম্য। তবে ছন্দে থাকা তানজিদ হাসান তামিম ফিরেছেন দ্রুতই। আলজারির শর্ট ডেলিভারিতে পুল করতে চেয়েছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
টপ এজ হওয়ায় মিড উইকেটে শেরফান রাদারফোর্ডকে সহজ ক্যাচ দিয়েছেন তানজিদ। প্রথম দুই ম্যাচে দারুণ ব্যাটিং করা তরুণ এই ব্যাটার তৃতীয় ওয়ানডেতে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। এক বল পর ফিরেছেন লিটন দাসও। আলজারির অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে স্লিপে কিংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। তানজিদের মতো তিনিও রানের খাতা খুলতে পারেননি।
৩ পরিবর্তন নিয়ে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
প্রথম ওয়ানডেতে খানিকটা লড়াই করতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে পাত্তাই পায়নি বাংলাদেশ। প্রায় এক দশক ধরে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দাপট দেখানো বাংলাদেশ তাই সিরিজ সিরিজ হেরেছে এক বাকি থাকতেই। সবশেষ কয়েক বছরে ৫০ ওভারের ক্রিকেট ধারাবাহিক টাইগারদের সামনে এবার হোয়াইটওয়াশের শঙ্কা।
সেন্ট কিটসে শেষ ওয়ানডেতে হার এড়াতে না পারলে হোয়াইটওয়াশ হতে হবে মেহেদী হাসান মিরাজদের। এমন ম্যাচে টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক শাই হোপ। শেষ ম্যাচে একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। যেখানে সুযোগ পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। আগের ম্যাচে খেলা তানজিম হাসান সাকিব, নাহিদ রানা ও শরিফুল ইসলাম নেই একাদশে।
বাংলাদেশ- সৌম্য সরকার, তানজিদ হাসান তামিম, লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ, আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, নাসুম আহমেদ এবং হাসান মাহমুদ।