দেশে বেকার সংখ্যা কয়েক কোটি, উদ্বেগজনক
দৈনিকসিলেট ডেস্ক
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেশে বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৪০ হাজার। বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) এ সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯০ হাজার। ১৭ কোটি মানুষের দেশে বেকারত্বের এ হারটা খুব বেশি উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী এ তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রচ্ছন্ন বেকারের সংখ্যা কয়েক কোটি। চিত্রটা ভয়াবহ হলেও শুধু সংজ্ঞার কারণে বেকারত্বের প্রকৃত চিত্র জরিপে উঠে আসছে না। ধারণা করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, একে একে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বেকারের সংখ্যা আরো বেড়েছে। বিবিএস-এর তৃতীয় প্রান্তিকের রিপোর্টে উঠে আসবে সেই চিত্র।
সাধারণত রিপোর্টটি প্রতি বছর অক্টোবরে প্রকাশ হয়। তবে ডিসেম্বরে এসেও রিপোর্টটি প্রকাশ করেনি বিবিএস। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিবিএস-এর পরিচালক (ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড লেবার উইং) মুহাম্মদ আতিকুল কবীর বলেন, রিপোর্ট প্রস্তুত হয়েছে। কিছু স্বাক্ষর বাকি।এ মাসেই প্রকাশ করা হবে।
রাজধানীর ভাটারার বাসিন্দা আবদুল মতিন দুই বছর ধরে চাকরি খুঁজছেন। ড্রাইভিং শিখে পরিচিত অনেকের কাছে গিয়েও মেলেনি কাজ। এখন জমি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন। গত রবিবার তিনি একজনকে জমি রেজিস্ট্রিতে সহযোগিতা করে ২ হাজার টাকা পেয়েছেন।
সেটা দিয়ে চার দিন কোনোরকমে চলার পর বর্তমানে পকেট ফাঁকা। দিতে পারেননি বাসা ভাড়া ও বাচ্চার স্কুলের বেতন। ঘরে নেই বাজার। তবে সরকারের হিসাবে তিনি বেকার নন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, ৩০ দিন ধরে কাজপ্রত্যাশী একজন মানুষ যদি শেষের সাত দিনে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ না পান, তাহলেই কেবল তাঁকে বেকার হিসেবে ধরা হয়। বিবিএসও এ সংজ্ঞা ব্যবহার করে। সেই হিসেবে দুটি টিউশনি করে এক বছর ধরে চাকরির আবেদন করে যাওয়া রংপুরের মুক্তাও বেকার নন।
একইভাবে সংসারে আয় বাড়াতে গত মাসে স্বামীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে কিছু শীতের কাপড় কিনে আনেন আফরোজা নামের এক গৃহবধূ। খিলক্ষেত এলাকায় বাসায় বসেই বিক্রি করেন আশপাশের ফ্ল্যাটে ও বাচ্চার স্কুলের অভিভাবকদের কাছে। তবে পুঁজি উঠে আসার আগেই তার বিক্রি কমে যায়। সাত দিনে দুটি ড্রেস বিক্রি করে লাভ পেয়েছেন ১২০ টাকা। সেই হিসেবে তিনিও বেকার নন।
বিবিএসের তথ্য বলছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে দেশে মোট শ্রমশক্তি (১৫ বছরের বেশি বয়স্ক) ৭ কোটি ২২ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪০ হাজার, যারা সাত দিনে অন্তত এক ঘণ্টা বেতন-মজুরি বা মুনাফার বিনিময়ে কাজ করেছেন। বেকার জনগোষ্ঠী ২৬ লাখ ৪০ হাজার।
এ ছাড়া শ্রমশক্তির বাইরে থাকা মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৯৫ লাখ। যারা বেকারও নন, কাজেও নিয়োজিত নন। ছাত্র, বয়স্ক, অসুস্থ, কাজে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত ও কাজে অনিচ্ছুক গৃহিণীদের এ শ্রেণিতে রাখা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আইএলওর যে সংজ্ঞা ধরে বেকার হিসাব করা হচ্ছে, সেটা হলে দেশে বেকার পাবেন না। কেউ হাত খরচের জন্য টিউশনির পাশাপাশি চাকরি খুঁজছেন। তিনি নিজেকে বেকার মনে করলেও সংজ্ঞা অনুযায়ী তিনি বেকার নন। তাদের ধরলে বেকারের সংখ্যা বেড়ে যাবে। আইএলওর নতুন একটা নির্দেশনা আছে। সেখানে সংজ্ঞায় কিছুটা পরিবর্তন আছে। সেটা বিবেচনায় নিলে হিসাব আরেকটু পরিষ্কার হবে।’
এদিকে চলতি বছরের ২৪ মার্চ প্রকাশিত বিআইডিএসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের তিন বছর পরও শিক্ষার্থীদের ২৮ শতাংশ বেকার থাকছেন। লন্ডনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০০ জন স্নাতকধারীর ৪৭ জনই বেকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংজ্ঞার কারণে বিপুল সংখ্যক ছদ্মবেশী বেকার বাদ পড়ছে। সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলে তাকে বেকার হিসেবে ধরা হচ্ছে না। এক ঘণ্টা কাজ করে তো একজন মানুষের এক বেলার আহার জোগাড় করাই কঠিন।
সংজ্ঞায় এক ঘণ্টা কাজ বিবেচনায় না এনে আয়ের পরিমাণকে বিবেচনায় ধরলে হিসাব যৌক্তিক হতো। কিছু মানুষ দুই মাসে একটি কাজ করে লাখ টাকা আয় করেন। সংজ্ঞা অনুযায়ী তারা বেকার। আবার অনেকে সপ্তাহে ২০০ টাকা আয় করলেও তাকে বেকার ধরা হচ্ছে না। এসব ছদ্মবেশী বেকারকে হিসাবে আনলে সংখ্যাটা কয়েক কোটি হবে।