বৈষম্যহীন ও ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই: জামায়াতের আমীর
দৈনিকসিলেট ডটকম
যারা জনগণের ওপর গুলি চালিয়েছে তারা কার কাছে এসে ভোট চাইবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, বিদেশিদের অনেকেই আমাদের কাছে প্রশ্ন রাখেন; আগামী নির্বাচনে ওরা আসবে কিনা? জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমরা জানিয়ে দিয়েছি এ প্রশ্নের উত্তর যারা মানুষ খুন করেছে তাদের পরিবার ও হাসপাতালে থাকা আহতদের জিজ্ঞেস করুন, তারা এ ধরনের রাজনীতি আর পছন্দ করেন কিনা।
তিনি শুক্রবার সকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
দীর্ঘ ১৬ বছর পর নিজ শহর সিলেটে আমীরে জামায়াত খোলা পরিবেশে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। কর্মিসভায় অংশ নিতে গোটা জেলা থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এসে যোগ দেন। এ কারণে ছুটির দিন হলেও সকাল থেকে ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল সিলেট নগর। জেলার বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা সাত সকালেই মিছিল নিয়ে কর্মী সম্মেলনস্থলে এসে পৌঁছেন। কর্মিসভায় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একটি শক্তি দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে মিথ্যাচার করে বিদেশি বন্ধুদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। মানুষ এখন অনেক সজাগ। বাংলাদেশের মানুষ এখন শান্তিতে আছে। শান্তি বিঘ্নিত করতে দফায় দফায় চেষ্টা চলছে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন- ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর লগি বৈঠার নৃশংসতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জানান দিয়েছিল তারা ক্ষমতায় থাকতে খুন-গুমের পথ বেছে নেবে। সেদিন থেকে বাংলাদেশ পথ হারিয়ে ছিল। দীর্ঘ সাড়ে ১৬ বছর পর বাংলাদেশ মুক্তি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ জামায়াতের অনেক শীর্ষ নেতাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। তারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে।
জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা একটি বৈষম্যহীন ও ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আল্লাহর হুকুম ও জনগণের ভালোবাসায় জামায়াতে ইসলামী সে সুযোগ পেলে আমাদের হাত দিয়ে কোনো চাঁদাবাজি হবে না, কোনো চাঁদাবাজি বরদাশতও করা হবে না। বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটির ওপর কোনো দখল বাণিজ্য হতে দেয়া হবে না। অফিসে বসে কেউ ঘুষ খাওয়ার দুঃসাহস দেখাতে পারবে না। যুবসমাজের হাতকে কারিগরের হাতে রূপান্তরিত করা হবে। উন্নত দেশের মতো পড়ালেখা শেষ করার আগেই তাদের হাতে কাজ আসবে। আমরা তাদেরকে এমন যোগ্য কারিগর হিসেবেই তৈরি করবো। আমরা যুব-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। আমীর বলেন, ‘আমরা এমন দেশ গড়তে চাই, যেখানে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা কোথাও নিরাপত্তার জন্য পাহারা বসাতে হবে না। একজন নাগরিক তার ঘরে-বাইরে, কর্মস্থলে ও সমাজে সবখানে নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা ভোগ করবে। এদেশে নারী-পুরুষ সমান নিরাপত্তা ও মর্যাদা পাবে। জামায়াতে ইসলামী কোরআনের আলোকে রাষ্ট্রগঠনের সুযোগ পেলে দেশের নারীরা মর্যাদা ও ইজ্জতের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন। তারা যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কাজে অবদান রাখবেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে দলের প্রতিটি কর্মীকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীর পক্ষে এককভাবে ছাত্র-জনতার স্বপ্নের দেশ গঠন করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন গোটা জাতির ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা ও সহযোগিতা। আমরা শান্তি, অগ্রগতি, ন্যায়বিচার ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম ও মাওলানা মাশুক আহমদের যৌথ পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফজলুর রহমান ও সিলেট মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।