রাবার ড্যাম লিকেজ, দিশেহারা হাওর পাড়ের কৃষক
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
শুকিয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার খরচার হাওরের পানি। এভাবে পানি কমতে থাকলে হাওরে ধান চাষাবাদ করা সম্ভব হবে না। রাবার ড্যাম দিয়ে পানি আটকিয়ে রাখা হলেও লিকেজের কারণে হাওরের পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। পানি আটকিয়ে রাখতে না পারলে একমাত্র বোরো ধানের চাষ কি ভাবে করবেন এ নিয়ে দিশেহারা হাওর পাড়ের হাজার হাজার কৃষকগন।
খরচার হাওর পাড়ের কৃষকদের সাথে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এ হাওরটিতে বছরে একটি ফসল বোরো ধান উৎপাদন হয় আর এর সাথে জড়িয়ে আছে হাজার হাজার কৃষক ও তাদের পরিবারের স্বপ্ন। এই হাওরে পৌষ মাসে ধান রোপণ করা শুরু হয় আর বৈশাখ মাসে কাটা হয়।
কিন্তু এখন অগ্রহায়ণ মাস হাওরের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। এদিকে রাধানগর, পিয়ারিনগর, ধরেরপাড়, বাগগাঁওসহ অন্যান্য এলাকায় হাওরের পানি ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। রাবার ড্যামটির কাজ শুরু হয় ৭/৮ বছর পূর্বে। এর আগে এখানে স্লুইচ গেইট ছিল। গত পাঁচ বছর ধরে রাবার ড্যামের পাম্প হাউজ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এছাড়াও নানান সমস্যা রয়েছে।
ঘাগটিয়া পানি ব্যবস্থপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড (পাবসস) এর সাবেক সভাপতি (বর্তমানে সদস্য) আব্দুল গণি আনছারি জানিয়েছেন, রাবার ড্যামটি এলজিইডি সমিতির মাধ্যমে পরিচালনা করলেও এর যাবতীয় খরচ সমিতিকে বহন করতে হয়। আর এই খরচের টাকা কৃষকের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা হয়। বর্তমানে এর খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকার এই রাবার ড্যামের পরিচালনার সমস্ত খরচ বহন করুক নয়তো আগের মতো স্লুইচ গেইট নির্মাণ করে দেয়ার দাবী জানাই। আমরা এটি মেরামতে জন্য একটি প্রাক্কলন ব্যয় অফিসে জমা দিয়েছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, বর্তমানে রাবার লিক হয়ে যাওয়ায় হাওরের পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। হাওরে পানি কমে গেলে ধান চাষাবাদ করতেও পারব না। আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হব। আমাদের হাওরের পানি রক্ষার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
ধরেরপাড় গ্রামের বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিন বলেন, যে ভাবে পানি কমতেছে এভাবে পানি হাওর থেকে শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। হাওরপাড়ের বাসিন্দাগন দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে। জরুরি ভাবে লিকেজ মেরামত করা দরকার না। এই সমস্যা
সমাধানে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দাবী জানাই।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, কৃষকের এই সমস্যা দ্রুত সমাধান করা অতীব জরুরি। না হলে হাওরপাড়ের কৃষকগণ বড় ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। হাওরের পানি কমে গেলে সময়মত জমিতে সেচ দেয়া যাবে না। তাই রাবার ড্যামটি মেরামতে সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি। এই হাওরে তিন হাজার ত শত হেক্টর জমি রয়েছে এর মধ্যে আবাদ হয় ২৭ শত হেক্টর আর উৎপাদন ১০ হাজার ৩শত মেট্রিকটন চাল।
উপজেলা প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান জানিয়েছেন, কৃষকদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা দরকার,তাই রাবার ড্যামটির সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য সবোচ্ছ চেষ্টা করছি, দ্রুত এর সমাধান করা হবে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানিয়েছেন, এই বিষয়ে প্রয়োজন পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য লিখিত ভাবে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষে জানানো হয়েছে। এছাড়াও তাদের সাথে কথা বলেছি আশা করছি দ্রুত এর সমাধান হবে।