জাহেলি যুগের বিবাহ প্রথা
শরিফ আহমাদ
ইসলামে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এর মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের শান্তি ও স্থিতিশীলতার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলামসম্মত বিবাহ পদ্ধতির বাইরে যুগে যুগে বিয়ের বিভিন্ন প্রথা ছিল। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের প্রচলিত বিবাহ পদ্ধতিগুলো রাসুলুল্লাহ (সা.) নাকচ করে দিয়েছেন এবং বিশ্ববাসীকে বিবাহের সর্বোত্কৃষ্ট পদ্ধতি শিখিয়েছেন।
উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.)-এর স্ত্রী আয়েশা (রা.) তাঁকে বলেছেন, জাহেলিয়াতের যুগে চার বিবাহ চালু ছিল। এর মধ্যে এক ধরনের বিবাহ এরূপ ছিল, যেমন আজকালের বিবাহ। বিবাহ করতে ইচ্ছুক পুরুষ পাত্রীর পুরুষ অভিভাবকের কাছে বিবাহের প্রস্তাব করত। এপর সে এর মোহর নির্ধারণ করত এবং পরে তাকে (স্ত্রীলোককে) মোহর দিয়ে বিবাহ করত।
আর দ্বিতীয় প্রকারের বিবাহ ছিল- যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে বলত, যখন তুমি তোমার হায়েজ থেকে পবিত্র হবে, তখন তুমি অমুক ব্যক্তির কাছে গমন করে তার সঙ্গে সহবাস করবে। এ সময় তার স্বামী তার কাছ থেকে দূরে সরে থাকত, যতক্ষণ না সে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সহবাসের ফলে সন্তানসম্ভাবনা হতো, ততক্ষণ সে তার সঙ্গে সহবাস করত না। আর যখন সে গর্ভবতী হতো, তখন স্বামী তার সঙ্গে ইচ্ছা হলে সহবাস করত। আর এরূপ করা হতো সন্তানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিরূপণের জন্য। এ বিবাহকে নিকাহে ইস্তিবজা বলা হতো।
আর তৃতীয় প্রকারের বিবাহ ছিল, অনধিক ১০ জন পুরুষ একজন স্ত্রীলোককে বিবাহ করত আর তারা সবাই পর্যায়ক্রমে তার সঙ্গে সহবাস করত। এরপর সে গর্ভবতী হয়ে সন্তান প্রসবের পর কিছুদিন অতিবাহিত হলে সে সবাইকে তার নিকট আসার জন্য পত্র পাঠাতো, যা প্রাপ্তির পর তারা সবাই সেখানে আসতে বাধ্য হতো। এরপর তারা সবাই সমবেত হলে সেই নারী বলত, তোমরা তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবশ্যই অবগত আছ, যার ফলে আমি এ সন্তান প্রসব করেছি। তখন সে তাদের মধ্যে থেকে তার পছন্দমতো একজনের নাম ধরে সম্বোধন করে বলত, হে অমুক! এ তোমার সন্তান। তখন সে তার সঙ্গে ওই সন্তানকে সম্পর্কিত করত।
আর চতুর্থ প্রকারের বিবাহ ছিল, বহু লোক একত্র হয়ে পর্যায়ক্রমে একটি নারীর কাছে গমন করত। আর যে কেউ তার কাছে সহবাসের উদ্দেশ্যে গমন করত, সে কাউকে বাধা প্রদান করত না। আর এ ধরনের নারীরা ছিল বেশ্যা। এরা তাদের নিজ নিজ গৃহের দরজার ওপর নিশান লাগিয়ে রাখত, যা তাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ ছিল।
যে কেউ তাদের নিকট গমন করে তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পারত। এরপর সে গর্ভবতী হওয়ার পর, সন্তান প্রসবের পরে তাদের সবাইকে তাদের নিকট একত্র করত এবং তাদের কাছ থেকে সাযুজ্যতা দাবি করত। এরপর সে তার সন্তানকে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত করত, যার সঙ্গে সন্তানের সামঞ্জস্যতা পরিদৃষ্ট হতো। আর তাকে তার সন্তান হিসেবে ডাকা হতো এবং সে ব্যক্তি এতে নিষেধ করত না।
এরপর আল্লাহ তাআলা যখন মুহাম্মাদ (সা.)-কে রাসুল হিসেবে পাঠান, তখন তিনি জাহেলি যুগে প্রচলিত ওই সব বিবাহ প্রথা বাতিল ঘোষণা করেন। আর বর্তমানে ইসলামের অনুসারীদের জন্য যে বিবাহ পদ্ধতি চালু আছে, তিনি তা বলবৎ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ২২৬৬)।