ভারতে পোড়ানো হচ্ছে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার বিষাক্ত বর্জ্য
দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
ভারতের বুকে ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনা হাজার হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। এই বড় দুর্ঘটনার পর ক্ষতিকর বর্জ্য সরাতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪০ বছর। অবশেষে সেই কাজ শুরু হয়েছে। ভূপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানায় গ্যাস লিকের ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮৪ সালে।
ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ কারখানাটি থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য সরানো হয়নি। ১৯৮৪ সালের ২ ডিসেম্বর কীটনাশক উৎপাদনে ব্যবহৃত ২৭ টন মারাত্মক রাসায়নিক মিথাইল আইসোসায়ানেট (এমআইসি) সংরক্ষণকারী ট্যাংকগুলোর কংক্রিটের আবরণ ভেঙে পড়েছিল এবং দুই মিলিয়নেরও বেশি লোকের শহরটি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই বিপর্যয়ের পরপরই প্রায় তিন হাজার ৫০০ লোক মারা যায়। তবে ধারণা করা হয়, সামগ্রিকভাবে ২৫ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।
এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্তৃপক্ষ ১২টি বিশেষভাবে ডিজাইন করা লিক-প্রুফ এবং অগ্নি-প্রতিরোধী পাত্রে বর্জ্য পরিবহন করছে। প্রতিটি পাত্রে প্রায় ৩০ টন বর্জ্য বহন করা হবে, রাসায়নিক বিক্রিয়া প্রতিরোধ করতে সেগুলোকে আবার জাম্বো এইচডিপিই ব্যাগে ভরা হয়েছে।
পরিবহনের আগে, কারখানার ২০০ মিটার ব্যাসার্ধ সিল করে দেওয়া হয়। বর্জ্য নিরাপদে পরিবহনের জন্যও ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রায় ২০০ কর্মী এই প্রক্রিয়ায় জড়িত আছে, তারা ৩০ মিনিটের শিফটে কাজ করছে।
প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়া নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, বুধবার গভীর রাত থেকে প্রায় ১২টি ট্রাক ৩৩৭ টন বর্জ্য বহন করতে শুরু করেছে। কনটেইনারগুলোর মুখ শক্তভাবে সিল করা হয় এবং পুলিশি এসকর্টের সঙ্গে একটি ধীর গাড়িবহর রওনা হয়।
ভূপালের বন্ধ ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে অন্তত ৩৩৭ মেট্রিক টন ক্ষতিকর বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রায় ২৫৫ কিলোমিটার (১৪০ মাইল) দূরে পিথমপুরে। সেখানেই ওই বর্জ্য ধ্বংস করা হবে।গাড়িবহরের সঙ্গে পুলিশ ছাড়াও আছে অ্যাম্বুল্যান্স এবং ফায়ার ব্রিগেড।
বর্জ্যের কিছু অংশ প্রথমে পিথমপুরায় নির্দিষ্ট জায়গায় পুড়িয়ে ফেলা হবে। তারপর সেটির ছাই পরীক্ষা করে দেখা হবে আরো কোনো ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে কি না সেখানে। যদি সব ঠিক থাকে তিন মাসের মধ্যে পুরো বর্জ্য ছাই করে ফেলা সম্ভব। এমন না হলে পোড়ানোর প্রক্রিয়া আরো ধীরগতিতে হবে। এর জন্য সময় লাগতে পারে ৯ মাস।
পুলিশ কমিশনার বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মান বজায় রেখে বর্জ্য সরানো হচ্ছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া পরিবহনটি তদারকি করছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে রাজ্যের গ্যাসের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগের পরিচালক স্বাধীন কুমার সিং বলেছেন, ‘দেশের শিল্প বর্জ্যের চলাচলে প্রত্যক্ষ করা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রোটোকলের মাধ্যমে কনভয়কে সুরক্ষিত করা হয়েছে।’ সিং আরো বলেছেন, ‘বৈজ্ঞানিকভাবে বর্জ্য পোড়ানোর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শেষ হবে।’
বর্জ্য পরিষ্কার করার আদেশটি ডিসেম্বরে দেওয়া হয়েছিল। সেই ভয়াবহ দুর্যোগের ৪০তম বার্ষিকীর পরে এই আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের উচ্চ আদালত এ কাজের জন্য এক মাসের সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন।
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে। কেন বারবার বলা সত্ত্বেও মধ্যপ্রদেশের রাজধানীর বুকে বন্ধ কারখানায় থাকা ওই ক্ষতিকর বর্জ্য সরানো হয়নি তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এরপরেই আদালতের নির্দেশে কাজ শুরু হয়।
অতীতে সাইটের কাছাকাছি ভূগর্ভস্থ পানির পরীক্ষায় ক্যান্সার এবং জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যা ইউএস এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সি দ্বারা নিরাপদ হিসেবে গৃহীত মানের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি ছিল। দুর্ঘটনা এবং ভূগর্ভস্থ পানির দূষণের জন্য ওই এলাকার বাসিন্দারা সেরিব্রাল পালসি, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধকতা এবং অন্যান্য অক্ষমতাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সূত্র : এএফপি