শীতে চর্মরোগ স্ক্যাবিস, করণীয়
ডা. জাহেদ পারভেজ
মারাত্মক ছোঁয়াচে রোগ স্ক্যাবিস। শীতকালে এ রোগের প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। পরিবারের একজনের হলে অন্যজনের দেহে তা সংক্রমিত হয়। বাংলায় এ রোগের নাম খোসপাঁচড়া। সারকোপটিস স্ক্যাবিয়াই জীবাণু এ রোগের প্রধান কারণ। লক্ষণগুলো হলো, শরীরে চুলকানি ও দানা বা বিচির মতো র্যাশ ওঠা, যা স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। রোগীর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড়, বিছানার চাদর, বালিশ ব্যবহারের মাধ্যমে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ত্বকের অন্যান্য সমস্যা, যেমন- অ্যালার্জি, অ্যাকজিমা বা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে আলাদা। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে এ মাইট (ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু) ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এ জীবাণু মানুষের ত্বকের ঠিক নিচের অগভীর স্তরে বাস করে এবং দিনে দুই-তিনটা করে ডিম পাড়ে।
স্ক্যাবিসে আক্রান্ত বোঝার উপায় : প্রথমে এটি পানিযুক্ত দানা বা বিচি হয় এবং যখন এটি চুলকানো হয়, তখন দ্রুত শরীরে অন্য জায়গায় তা ছড়িয়ে যায়। রাতে বেশি চুলকানি অনুভূত হয়। পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে অন্যরাও আক্রান্ত হয়। সাধারণত আঙুলের ফাঁকে, ত্বকের ভাঁজে, বুক-পিঠে, বগলে, যৌনাঙ্গে বা এর আশপাশে, নাভি ও নাভির চারদিকে ছোট ছোট দানা বা বিচি দেখা দেয়। পুরো শরীরেও দেখা দিতে পারে। নবজাতক ও শিশুর ক্ষেত্রে ঘাড়, মাথার তালু, মুখ, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নিচেও হয়ে থাকে। অনেক সময় আক্রান্ত স্থানে ইনফেকশন, যেমনÑ পুঁজ বা ব্যথা অনুভূত হয়। স্কুল, মাদ্রাসা, মেস বা অন্যান্য আবাসিক স্থানে একত্রে একাধিক ব্যক্তি থাকলে সেখানেই এ রোগ দ্রুত ছড়ায়।
স্ক্যাবিস হলে করণীয় : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা। পরিবারের যে-কোনো সদস্য আক্রান্ত হলে সবার একত্রে চিকিৎসা নেওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তি ব্যবহৃত জামা-কাপড়, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, আন্ডার গার্মেন্টসসহ সব একত্রে গরম পানিতে ভিজিয়ে, রৌদ্রে শুকানো। সম্ভব হলে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিস অন্য কেউ ব্যবহার না করা। রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্যতীত অন্য কারও পরামর্শে কোনও ধরনের চর্মরোগে ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণ না-করা। আবাসিক হল বা মেসে কেউ আক্রান্ত হলে অন্যত্র গিয়ে আলাদাভাবে চিকিৎসা নেওয়া। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ না-খাওয়া বা না-ব্যবহার করা।
চিকিৎসা : স্ক্যাবিস হলে পরিবারের সবার একসঙ্গে চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সবার বয়স ও ওজন অনুযায়ী আলাদা আলাদা ওষুধ সেবন করতে হয়। পারমিথিন ৫% ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করতে হবে। মনোসালফিরাম সলিশন (Monosulfiram) এবং ইনফেকশন হলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। অনেক ক্ষেত্রে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার দেওয়া হয়।
স্ক্যাবিসে ক্ষতি : সঠিক সময়ে সঠিক রোগ (স্ক্যাবিস) নির্ণয় না হলে রোগীর অনেক ধরনের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে। রোগ শুরুর শুরুতে অতিঅল্প ও প্রচলিত চিকিৎসায় স্ক্যাবিস ভালো হয়। অন্যথায় চিকিৎসা ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন হয়। স্ক্যাবিস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। অপরকেও সুরক্ষিত করুন।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
চেম্বার : ডা. জাহেদ’স হেয়ার অ্যান্ড স্কিনিক সেন্টার
সাবামুন টাওয়ার, পান্থপথ মোড়, ঢাকা। ০১৫৬৭৮৪৫৪১৯