ছাতক-সিলেট রেলপথ সংস্কারের কাজ শুরু শীঘ্রই
দৈনিকসিলেট ডটকম
আওয়ামী লীগ সরকার আমলের মন্ত্রী ও এমপির দ্বন্দ্বে বন্ধ সিলেট-ছাতক রেলপথ সংস্কারকাজ আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু হবে। প্রায় বছর চলা সংস্কার শেষে আগামী বছর রেলপথ চালু হবে। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন।
শুক্রবার (৩ জানুুয়ারি) তিনি সিলেট থেকে ছাতক গিয়ে রেলপথ পরিদর্শন করে এ তথ্য জানান।
মহাপরিচালক বলেন, ‘রেলপথ বন্ধ থাকার মধ্যে বন্যায় রেললাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এটি সংস্কারের জন্য বিগত সরকারের আমলে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন শেষে দরপত্রের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সংস্কারকাজ শুরু হবে। কাজ সম্পন্ন করতে দেড় বছর সময় লাগতে পারে। কাজ শেষ হলে চালু হবে ছাতক-সিলেট ট্রেন।’
সিলেট-ছাতক রেলপথ সম্প্রসারিত হওয়াকে কেন্দ্র করে বন্ধ হয়ে আছে এই পথের রেল-যাতায়াত। রেলপথটি সুনামগঞ্জ পর্যন্ত যাবে বলে অনেক আগে একটা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে ছাতক-দোয়ারাবাজার নির্বাচনি এলাকার সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে এই প্রকল্পের কাজ আর এগোয়নি। করোনার সময় রেলপথটিও বন্ধ হয়ে যায়। পরে দেশের সব কটি লাইন সচল হলেও বন্ধ থাকে সিলেট-ছাতক রেলপথ। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই মন্ত্রীও নেই, এমপিও নেই। তবু চালু হয়নি রেলপথ।
ব্রিটিশ আমল থেকে শিল্পশহর হিসেবে ছাতকের খ্যাতি। সে সময় সিলেট থেকে ছাতক পর্যন্ত রেললাইন সম্প্রসারিত হয়েছিল বাণিজ্যিক কারণে। এরপর পরিকল্পনা ছিল সেখান থেকে সুনামগঞ্জ জেলা শহর (তৎকালীন মহকুমা) পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার। আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলমন্ত্রী থাকাকালে সেই পুরোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি আলোচনায় আসে।
তবে রেল মন্ত্রণালয় থেকে তিনি সরে গেলে পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। নতুন পরিকল্পনায় রেললাইনে ছাতককে বাদ দিয়ে গোবিন্দগঞ্জ থেকে সুনামগঞ্জে নেওয়ার কথা বলা হয়। এর প্রতিবাদ জানান সেই সময়ের স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। মন্ত্রী-এমপির দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। এ নিয়ে গত বছরের ২৩ নভেম্বর খবরের কাগজে ‘মন্ত্রী-এমপি নেই, তবু দ্বন্দ্বে বন্ধ সিলেট-ছাতক রেলপথের কাজ’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় রেলওয়ে মহাপরিচালক সরেজমিন পরিদর্শন করতে গতকাল সিলেট আসেন। সেখান থেকে সরাসরি ছাতক চলে যান। আজ শনিবার তিনি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে (রজ্জুপথ) পরিদর্শন করবেন। রোপওয়ে লাইন রয়েছে ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত। তবে তা বন্ধ রয়েছে।
রোপওয়ে নিয়ে গত ২০ অক্টোবর ‘ভোলাগঞ্জ রোপওয়ের বাংকারের পাথর সাবাড়’ ও গত ১০ ডিসেম্বর ‘রেলের জমিতে হরিলুট’ শিরোনামে দুটো প্রতিবেদন খবরের কাগজে প্রকাশ হয়েছিল। এ প্রতিবেদন সূত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রোপওয়ে এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে। আজ রেলওয়ে মহাপরিচালক ভোলাগঞ্জ পরিদর্শন করবেন। রোপওয়ের বিষয়ে ছাতক অবস্থানকালে মহাপরিচালক বলেন, ‘এটি আপাতত চালুর কোনো সম্ভাবনা নেই। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাথর পরিবহনে ভাড়া নিতে চাইলে দরপত্রের মাধ্যমে বিষয়টি কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে।’
মহাপরিচালকের পরিদর্শনকালে রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. সুবক্তগীন (পূর্বাঞ্চল, চট্টগ্রাম), রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ঢাকা) আবু জাফর মিয়া, নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব, সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. আজমাঈন মাহতাবসহ রেলওয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।