সুনামগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের যোগদান
রাজু আহমেদ রমজান, সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) হিসেবে যোগদান করেছেন তাপস রঞ্জন ঘোষ।রবিবার সকালে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করেন তিনি। এসময় ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত করেন পুলিশ সুপার আ.ফ.ম. আনোয়ার হোসেন খান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জাকির হোসাইন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল জানিয়েছে, তাপস রঞ্জন ঘোষ এর আগে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় আশানুরূপ উর্ত্তীর্ণ হয়ে ২০১২ সালে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে।
নবনিযুক্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুনামগঞ্জকে এগিয়ে নিতে ডায়নামিক চৌকস পুলিশ সুপারখ্যাত আ.ফ.ম. আনোয়ার হোসেন খানের ছায়াসঙ্গী হিসেবে অর্পিত দাযিত্বপালনে একনিষ্ঠ হবেন এমন প্রত্যাশা সবশ্রেণীপেশার মানুষের। উল্লেখ্য, পুলিশ সুপার এ জেলার যোগদানের পর জেলার বিভিন্ন স্থানে রাতের আধারে সরেজমিনে গিযে চোরাচালান সহ বিভিন্ন অপরাধ-অপতৎপরতা প্রায় শূণ্যের কোঠায় নিয়ে এসেছেন। তবে, তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত জনপদ, নদী-হাওরে চৌকস আদর্শিক এই পুলিশ সুপার সরেজমিনে না যাওয়ায় অপরাধের পালাবদলে স্থানী পুলিশের কোন ভুমিকা চোখেপড়ার মতো নয়। বিশেষ করে তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীপথে নামে-বেনামে বেপরোয়া চাঁদাবাজির খলনায়ক সম্রাট মিয়া ও তার সহোদর খলিল মিয়াকে আইনের আওতায় না নিযে আসায় চাপাক্ষোভ রয়েছে নদীপথে চলাচলকারী নৌযান মাঝি ও নৌযান সংগঠনের নেতাদের।
উল্লেখ্য, সাবেক সাংসদের আশির্বাদপুষ্ট চাঁদাবাজ সম্রাট মিয়ার বিরুদ্ধে পাটলাই নদীপথে চলাচলকারী নৌযান থেকে চাঁদা আদায়কারী সম্রাট মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। সুনামগঞ্জ জেলা ট্রলার (বাল্কহেড) নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। গত ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার তাহিরপুর থানায় সম্রাটকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নৌযান সংগঠনের নেতা। এর আগে ওই সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর মিয়া, অভিযোগকারি নৌযান মাঝিদের নিয়ে ২ ডিসেম্বর সোমবার বেলা চারটায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে রিসিপশনে পাসকার্ড সংগ্রহ করেন। পরক্ষণে সাক্ষাৎ করেন আদর্শবান এসপির সাথে। সম্রাটের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে এসপির হস্তক্ষেপ কামনা করলে দ্রুত তাহিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেন আদর্শবান পুলিশ সুপার। পরদিন মঙ্গলবার তাহিরপুর থানায় স্বশরীরে উপস্থিত হয় লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। বিতর্কিত এসআই আমির উদ্দিন অভিযোগ জমা রাখেন রিসিভবিহীন। অভিযোগ রযেছে ওসি দেলোয়ার হোসেনের উদাসীনতায় বীরদর্পে চাঁদাবাজি, চোরাচালানীসহ নানা অপরাধ করে আসছে সন্ত্রাসী সম্রাট মিয়া।
এর আগে গেল ৭ নভেম্বর সুনামগঞ্জের ডিসি, এসপি, সেনাবাহিনী ক্যাম্প, টুকেরবাজার নৌপুলিশ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনে লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। একই সংগঠনের কার্যকরী সদস ফয়সাল আহমেদ লিখিত অভিযোগ দেন একটি মানবাধিকার সংস্থার কাছে। অপহরণ মামলার জেলকাটা আসামি সম্রাটের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে গত ২২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের এক মানবাধিকারকর্মী। সম্রাটের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য দুলাল মিয়া। গত ২০ আগষ্ট জনস্বার্থে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় ওই সেনা সদস্য। অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারি করা হয় সম্রাটের নামে। এরপর থেকে ওই সেনা সদস্যকে ফাঁসিয়ে দিতে সন্ত্রাসী-ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ-দাঙ্গাবাজ উল্লেখ করে সম্রাট অপর এক ব্যক্তিকে বাদি বানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। গেল ১৯ আগষ্ট করা অভিযোগে সেনা সদস্যের সহযোগী হিসেবে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত রেখে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ইয়াবাসেবী সম্রাট। এরপর ঝামেলা এড়াতে মামলা প্রত্যাহার করেন আদর্শবান নিরীহ সেনা সদস্য। ফলে মিথ্যার ক্ষণজয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে চাঁদাবাজ সম্রাট। বিভিন্ন ড্রেস পড়ে গভীররাতে চোরাচালানের পন্যবাহী নৌযান থেকে ইচ্ছেমতো চলে চাঁদাবাজির মহোৎসব।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, উচ্চ আদালতে মামলা চলাকালীন তরং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দখলীয় সম্পত্তি অপকৌশলে রেকর্ড মালিক বনে গেছে সম্রাট। দেশীয় আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া স্বত্তেও সেখানে ২০ লাখ অধিক টাকা ব্যয়ে পাকা দালান কোটা নির্মাণ করে আইনের সাথে প্রতারণা করে ভূমিখেকো সম্রাট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় কমিটি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আক্ষেপ করে এসব বলেন। কাগজ ঘেঁটে দেখা যায়- ২০১৭ সালের ১৫ মে উচ্চ আদালতে দায়েরকৃত সিভিল রিভিশন নং-১৫৬৩ মোকদ্দমাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। সম্রাটের বেপরোয়া চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধকান্ডে ডকুমেন্টারি প্রতিবেদন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশ করে জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নবনির্বাচিত ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক রাজু আহমেদ রমজান ও তার পরিবার-পরিজন।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের তরং গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে সম্রাটকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য ডায়নামিক চৌকস ও আদর্শিক এসপির সুদৃষ্টি কামনা করছেন নিরীহ নৌযান মাঝি, নৌযান সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় নিরীহ জনতা।