সুনামগঞ্জে সুধীজনদের নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের মতবিনিময়
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান কর্মকর্তা ও সুধীজনদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার মো. রেজা-উন-নবী। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সমর কুমার পালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার আ.ফ.ম আনোয়ার হোসেন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম প্রমুখ।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) বেলা ১২টায় জেলা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে এ সভা চলে।
দীর্ঘ ৩ ঘন্টার সরব উপস্থিতির মধ্যেদিয়ে মতবিনিময় সভায় উন্মুক্ত বক্তব্য দেন, শিক্ষাবিদ পরিমল কান্তি দে, নুরুর রব চৌধুরী, পিপি মল্লিক মঈনুদ্দিন সোহেল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেরেনুর আলী, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, সাংবাদিক লতিফুর রহমান রাজু, পংকজ দে, খলিল রহমান, সুনামগঞ্জ প্রেস ক্লাবের নবনির্বাচিত ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক রাজু আহমেদ রমজান, সাংবাদিক দেওয়ান গিয়াস চৌধুরী, পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার প্রমুখ। বক্তারা জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন-সম্ভাবনা ও অপরাধের কথা তু্লে ধরেন।
অন্যদিকে, তাহিরপুর উপজেলার পাটলাই নদীপথে সম্রাট মিয়া ও তার সহোদরের নামে-বেনামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে উচ্চপদস্থ এই কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করেন সাংবাদিক রাজু আহমেদ রমজান। উল্লেখ্য, সাবেক সাংসদ রনজিতের আশির্বাদপুষ্ট চাঁদাবাজ সম্রাট মিয়ার বিরুদ্ধে পাটলাই নদীপথে চলাচলকারী নৌযান থেকে চাঁদা আদায়ের দায়ে লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। সুনামগঞ্জ জেলা ট্রলার (বাল্কহেড) নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিনি। গত ৩ ডিসেম্বর তাহিরপুর থানায় সম্রাটকে আসামি করে লিখিত অভিযোগ দেন নৌযান সংগঠনের এ নেতা। এর আগে ওই সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর মিয়া, অভিযোগকারি নৌযান মাঝিদের নিয়ে ২ ডিসেম্বর বেলা চারটায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে রিসিপশনে পাসকার্ড সংগ্রহ করেন। পরক্ষণে সাক্ষাৎ করেন আদর্শবান এসপির সাথে। সম্রাটের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে এসপির হস্তক্ষেপ কামনা করলে দ্রুত তাহিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করার নির্দেশ দেন আদর্শবান পুলিশ সুপার। পরদিন মঙ্গলবার তাহিরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। বিতর্কিত এসআই আমির উদ্দিন অভিযোগ জমা রাখেন রিসিভবিহীন। অভিযোগ রযেছে ওসি দেলোয়ার হোসেনের উদাসীনতায় বীরদর্পে চাঁদাবাজি, চোরাচালানীসহ নানা অপরাধ করে আসছে সন্ত্রাসী সম্রাট মিয়া ও তার সহোদর খলিল।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের তরং গ্রামের মৃত বদর উদ্দিনের ছেলে চোরাচালানী চাঁদাবাজ সম্রাট মিয়ার বিরুদ্ধে এর আগে গেল ৭ নভেম্বর সুনামগঞ্জের ডিসি, এসপি, সেনাবাহিনী ক্যাম্প, টুকেরবাজার নৌপুলিশ এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনে লিখিত অভিযোগ দেন পংকজ তালুকদার। একই সংগঠনের কার্যকরী সদস ফয়সাল আহমেদ লিখিত অভিযোগ দেন একটি মানবাধিকার সংস্থার কাছে। অপহরণ মামলার জেলকাটা আসামি সম্রাটের অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে গত ২২ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন সুনামগঞ্জের এক মানবাধিকারকর্মী। সম্রাটের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য দুলাল মিয়া। গত ২০ আগষ্ট জনস্বার্থে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন স্থানীয় ওই সেনা সদস্য। অভিযোগ আমলে নিয়ে সমন জারি করা হয় সম্রাটের নামে। এরপর থেকে ওই সেনা সদস্যকে ফাঁসিয়ে দিতে সন্ত্রাসী-ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজ-দাঙ্গাবাজ উল্লেখ করে সম্রাট অপর এক ব্যক্তিকে বাদি বানিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। গেল ১৯ আগষ্ট করা অভিযোগে সেনা সদস্যের সহযোগী হিসেবে ১০/১২ জনকে অজ্ঞাত রেখে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ইয়াবাসেবী সম্রাট। এরপর ঝামেলা এড়াতে মামলা প্রত্যাহার করেন আদর্শবান নিরীহ সেনা সদস্য। ফলে মিথ্যার ক্ষণজয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে চাঁদাবাজ সম্রাট। বিভিন্ন ড্রেস পড়ে গভীররাতে চোরাচালানের পন্যবাহী নৌযান থেকে ইচ্ছেমতো চলে চাঁদাবাজির মহোৎসব।
অন্যদিকে, মতবিনিময় সভায় দেওয়া বক্তব্যে টাঙ্গুয়া হাওরের জীব-বৈচিত্র রক্ষায় এগিয়ে আসতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন প্রথম আলোর জেলা প্রতিনিধি খলিল রহমান। এছাড়া পিআইসিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বক্তব্য দেন উপস্থিত সুধীগন। দীর্ঘ ৩ ঘন্টাব্যাপী চলা মতবিনিময় সভায় মনযোগ সহকারে শ্রবণ করেন আদর্শিক বিভাগীয় কমিশনার। সমস্যা লাঘবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে তাৎক্ষণিক নির্দেশনা দেন চৌকস বিভাগীয় কমিশনার।