পিঠা উৎসব ও নবীনদের বরণ করে নিলো আল মদিনা একাডেমি

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ পিঠা। কৃষ্টি সভ্যতা ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও প্রসারে আল মদিনা একাডেমি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করেছে পিঠা উৎসব। এই পিঠা উৎসব আর বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়া হয় বিভিন্ন ক্লাসের নবীন শিক্ষার্থীদের।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দিনভর সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নস্থ ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল মদিনা একাডেমি ক্যাম্পাস পিঠা উৎসব ও নবীন বরণ অনুষ্ঠানমালায় মুখরিত হয়ে ওঠে।
নবীন বরণ:
সকাল সাড়ে ১০টায় সাজানো মঞ্চে সারিবদ্ধ ছোট্ট সোনামনিরা ছিলো আনন্দ উল্লাসে আত্মহারা। এসময় দেড় শতাধিক নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল আর উপহার সামগ্রী দিয়ে বরণ করে নেন উপস্থিত অতিথি ও একাডেমির শিক্ষকবৃন্দ।
পিঠা উৎসব:
আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও আভিজাত্য সংরক্ষণ ও প্রসারের লক্ষ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মিলে এ উৎসবের আয়োজন করেন। উপচেপড়া ভীড়ে পিঠা উৎসবটি যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়।
পিঠা উৎসবে মুখরিত এগারোটি স্টল সাজানো হয়েছে নানা রকম বাহারি পিঠায়। নকশি, চিতই, রস পিঠা, ডিম চিতই, দোল পিঠা, ভাপা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান, আন্দশা, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল, ইলিশ পিঠা, চুটকি, মুঠি, জামদানি, হাড়ি পিঠা, চাপড়ি, পাতা পিঠা, ঝুড়ি পিঠা, বিফরুল, নারকেল পুলি, সবজি রুল, সবজি পুলিসহ নানা স্বাদের হরেক রকম পিঠা।
প্রথমে ফিতা কেটে পিঠা উৎসব ও নবীন বরণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দোয়ারাবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মোস্তাফিজুর রহমান, দোয়ারা শিক্ষা ফাউন্ডেশন’র চেয়ারম্যান রফিজ আলী, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, রাগিব রাবেয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান, দোয়ারাবাজার উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন’র সভাপতি মুজিবুর রহমান, নসকস সভাপতি শফিকুল ইসলাম, আলহাজ্ব আতাউর রহমান, খলিলুর রহমান।
এসময় প্রধান অতিথি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আল মদিনা একাডেমি’তে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে যে আয়োজন করা হয়েছে। এমন আয়োজন আমার আর চোখে পড়েনি। শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে ও লেখাপড়ায় মনোযোগ বাড়তে এমন আয়োজন সত্যিই উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগায়। পিঠা উৎসব পরিদর্শন করে অতিথি মোস্তাফিজুর রহমান ও দোয়ারাবাজার উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন’র সভাপতি মুজিবুর রহমান, সাংবাদিক এম এ মোতালিব ভূইয়া, মামুন মুন্সি বলেন,আল মদিনা একাডেমি কর্তৃক পিঠা উৎসবের যে আয়োজন এমন আয়োজন সুনামগঞ্জ জেলায় কোন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আগে করেছে বলে চোখে পড়েনি। শিক্ষার্থীদের কর্মমুখি করতে আল মদিনা একাডেমি’র নিত্যনতুন এমন আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আমাদের আত্যন্ত ভালো লেগেছে এমন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে, আমরা পিঠা খেয়েছি এবং পরিবারের জন্য ও নিয়েছি।
প্রতিষ্ঠান পরিচালক রফিকুর রহমান বলেন, ‘পিঠা-পুলি আমাদের লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতির আত্মপ্রকাশ। কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় শহর কেন্দ্রিক জীবন জীবিকার কারণে লোকজ এ উৎসব ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাই পিঠা উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাঙালির নানা রকম পিঠার সাথে পরিচিত হতে পারে।’
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার নাহির জানায়, ‘নানা রঙের বাহারি এতো পিঠা একসঙ্গে কখনো দেখিনি। আজ নিজেদের তৈরি পিঠা বিক্রি করার পাশাপাশি শিক্ষক ও সহপাঠীদের সঙ্গে পিঠা খাচ্ছি। পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনরা ও এসেছেন আমাদের কাছ থেকে পিঠা কিনতে। আমাদের এ আনন্দ ধরে রাখতে পারছিনা।
অভিভাবক ইসমাইল আল সানি বলেন, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল মদিনা একাডেমি কর্তৃক নিত্যনতুন আয়োজন আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ায় প্রেরণা যোগায়। আমরা এর আগে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আয়োজন দেখিনি। আসলেই আল মদিনা একাডেমি এই অঞ্চলের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে।
দর্শনার্তী সাইদুর রহমান বলেন,গত বছর প্রবাস থেকে ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আল মদিনা একাডেমি’র পিঠা উৎসব দেখেছি। ইচ্ছে ছিলো নিজের এলাকার সুনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানের এমন আয়োজন উপভোগ করব। আলহামদুলিল্লাহ আজ নিজে পিঠা উৎসব উদযাপন করেছি,খেয়েছি পরিবারের জন্য ও নিয়েছি।
উপজেলার বাংলাবাজার থেকে আসা দর্শনার্তী আল আমিন ও মোস্তাক আহমদ জানান, আল মদিনা একাডেমি শুধু নরসিংপুর নয় দোয়ারাবাজার উপজেলার গর্ব। আল মদিনা একাডেমির প্রতিটা অনুষ্ঠান অনেক সুন্দর ও সুশৃঙ্খল ভাবে সম্পন্ন হয়। আজ পিঠা উৎসবে আমরা এসেছি। খুবই ভালো সময় কেটেছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক আবিদ রনি, রুকন উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, ইসমাঈল আল সানি, মারুফ আহমদ, আল মদিনা একাডেমি’র শিক্ষক জুয়েল আহমদ, নিলুফা বেগম, রুমেনা বেগম, সালমান ফার্সি, জাবেদুল হাসান, ইয়াকুব আল হাসান, মোজাম্মেল হক,ইমরান আহমদ, হানিফা জান্নাত বুশরা,সাদিয়া আক্তার,মার্জিয়া আক্তার, মুরসানা আক্তার,শিক্ষার্থী, অভিভাবক প্রমুখ।
পরে এ উৎসবে স্টল পারফরমেন্সের জন্য বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। এতে ১ম হয় মধুমিতা,২য় বর্নমালা।
পরিশেষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিবেশিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।