শাবিতে সাংগঠনিক সপ্তাহ: জায়গার সংকট, বৈষম্য দূরীকরণে পদক্ষেপ

নুর আলম, শাবিপ্রবি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদস্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ৩৭টি সংগঠনের একযোগে চলছে সাংগঠনিক সপ্তাহ। জায়গার সংকীর্ণতায় সংগঠনগুলো নিজের মতো করে জায়গা নিয়ে তাবু সাজাতে পারেনি বলে অভিযোগ সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে সদস্য সংগ্রহে যেন কোন সংগঠন বৈষম্যের শিকার না হয়, সেজন্য সবগুলো সংগঠনকে একযোগে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়েল হ্যান্ডবল মাঠে সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও ক্যারিয়ার ভিত্তিক সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক সপ্তাহ শুরু করে। এরমধ্যে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে যার যার তাবু মাতিয়ে রাখতে গান, নাচ, কবিতাসহ বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেখা যায়। এসব সংগঠনগুলোর সদস্য ফরম মূল্য ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা জানান, প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার হয়ে চেতনা-৭১ পর্যন্ত রাস্তার ঘেঁষে দুই পর্বে সাংগঠনিক সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হতো। এতে সাংগঠনিক সপ্তাহের জন্য আবেদন করা সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রথম পর্বে অর্ধেক সংগঠন, দ্বিতীয় পর্বে অবশিষ্ট সংগঠনগুলোকে তাবু স্থাপনের সুযোগ দেওয়া হতো। এতে পর্যাপ্ত জায়গা থাকায় সংগঠনগুলো তাদের তাবুগুলো বৃহৎ পরিসরে সাজাতে পারতো। কিন্তু এবার সবগুলো সংগঠনকে প্রশাসন একযোগে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালন করার নির্দেশ দেন। নির্দেশের প্রেক্ষিতে কয়েকটি সংগঠন একযোগে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালন করার বিপক্ষে প্রক্টরিয়াল বডিকে মতামত দেন বলে জানান তারা।
কিন্তু প্রশাসনের যুক্তি হচ্ছে দুই পর্বে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালন করলে প্রথম পর্বের সংগঠনগুলো সদস্য সংগ্রহে বেশি সুবিধা পায়। প্রথম পর্বে যেসব শিক্ষার্থী বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য ফরম সংগ্রহ করে, দ্বিতীয় পর্বে তারা বাকি সংগঠনগুলোর ফরম সংগ্রহে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না। এ বৈষম্য দূর করার জন্য হ্যান্ডবল মাঠে সব সংগঠনকে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় বলে যুক্তি দেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডি।
এবিষয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ হচ্ছে, প্রশাসন বৈষম্যের দিকটি চিন্তা করলেও প্রশস্ত জায়গার কথা চিন্তা করেনি। একসাথে ৩৭ টি সংগঠনের তাবু ছোট একটা মাঠে বসাতে গিয়ে তাবুগুলো অনেক সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তাছাড়া পাশ্ববর্তী তাবুর কার্যক্রমে অন্য সংগঠনের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। যেটা বিগত বছরের সাংগঠনিক সপ্তাহে সচরাচর দেখা যেতো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার বলেন, “হ্যান্ডবল মাঠ পুরোটা বালুময়। মাঠ ছোট হওয়ায় তাবুগুলোও ছোট করে দিতে হয়েছে। সচরাচর সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর তাবুর জায়গা একটু প্রশস্ত হওয়া প্রয়োজন। এতে তাবুর ভিতরে সংগঠনগুলোর সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সুবিধা হয়। বিগত বছরগুলোতে ক্যাম্পাসে রাস্তার পাশে তাবু বসায় শিক্ষার্থীরা হাঁটার চলে তাবু প্রদর্শন করতে পারতো। তবে সেটা এবার খুব একটা হবে না। এমনও হতে পারে অনেক শিক্ষার্থী মাঠ পাড়ি দিয়ে এখানে নাও আসতে পারে।”
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নোত্থানের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “দুই ধাপে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালন করলে ভিড় কম হয়। সবাই যার যার মতো কার্যক্রম চালাতে পারে। দুই ধাপে সাংগঠনিক সপ্তাহ পালন করলে দ্বিতীয় পর্বের সংগঠনগুলো সদস্য সংগ্রহে খুব একটা সুবিধা পায়, তাও বলা যাবে না। কারণ যেসব শিক্ষার্থীরা প্রথম পর্বে ফরম সংগ্রহ করবে না, তাদের জন্য দ্বিতীয় পর্বে সে সুযোগটা থাকবে।”
স্কুল অব ডিবেটের সাধারণ সম্পাদক আদিবা ইমরোজ প্রিয়তী বলেন, “এবারের সাংগঠনিক সপ্তাহে অনেক বেশি গ্যাদারিং। জায়গার সংকটের কারণে আমরা পছন্দমতো তাবু নির্দিষ্ট দূরত্বে বসাতে পারিনি। সব সংগঠনগুলো পাশ ঘেঁষে তাবু বসানোর কারণে সংগঠনগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রমেও বিঘ্ন ঘটছে।”
“প্রশাসন এবারে একযোগে সাংগঠনিক সপ্তাহ আয়োজনের ব্যবস্থা করছে, এটা ভালো দিক। এতে কোন সংগঠন বৈষম্যের শিকার হবে না, বৈষম্যের অভিযোগও তুলতে পারবে না। তবে একযোগে সাংগঠনিক সপ্তাহের আয়োজন করলে প্রশাসন যেন আগামীতে পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করে। এজন্য প্রশাসন কিছু তাবু রাস্তার পাশে , কিছু মাঠে স্থাপনের অনুমতি দিতে পারে। তাহলে জায়গার সংকীর্ণের বিষয়টি আসবে না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান বলেন, “বিগত বছরগুলোতে দুই পর্বে সাংগঠনিক সপ্তাহের মাধ্যমে সংগঠনগুলো সদস্য সংগ্রহ করতো। এতে দেখা যেতো প্রথম পর্বে যেসব সংগঠনগুলোকে সুযোগ দেওয়া হতো, তারা সদস্য তুলনামূলক বেশি সংগ্রহ করতে পারতো। যাতে এ বৈষম্য না থাকে, সেজন্য সবগুলো সংগঠনকে একসাথে সাংগঠনিক সপ্তাহের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”