স্ত্রীর মামলায় আবারো কারাগারে অফিস সহকারী মাসুম

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
দ্বিতীয় বারেরমতো আদালতের শর্ত ভঙ্গ করায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ ঘোলডুবা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী মাসুম পারভেজ (৪২) কে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে দ্বিতীয় দফা নির্যাতনের অভিযোগে করা মামলায় সোমবার (২৭জানুয়ারী) বিকেলে আদালতের আদেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয় । পারভেজ নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার কৈলং গ্রামের মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৭ সেপ্টেম্বর মাসুম পারভেজের সঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা গ্রামের কয়রুল মিয়ার মেয়ে আমিনার বিয়ে হয়। বিবাহের পর ঘোলডুবা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারীর চাকুরী নেন পারভেজ। এ সুবাধে নবীগঞ্জ উপজেলার গরু বাজার রাস্তায় ব্রাক অফিসের পাশে জনৈক ইলিয়াছ মিয়ার বাসায় থেকে সুখের সংসার শুরু করেন । তাঁদের ঘরে ফারিহা জাহান মিথি (১০) ও মুনতাহা জাহান রীতি(৪) দুটি মেয়েসন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে স্বামী মাসুম পারভেজ স্ত্রী আমিনা কে বিভিন্ন সময়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। গেল বছরের নির্যাতনের ঘটনায় বিগত ২৭ ফেব্রুয়ারী নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে একখানা অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পারভেজ কোন সায় না দিলে নিরুপায় হয়ে ২০২৩ সালের ২১ মার্চ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪ লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন । পরবর্তীতে যৌতুক নিরোধ মামলা চলাকালীন সময়ে ঘোলডুবা এমসি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোঃ আব্দুর রকিব ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি ও সহকারী শিক্ষক মোস্তফা আল হোসাইনের মধ্যস্থতায় স্ত্রীর দায়েরী মামলা ধার্য তারিখে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিনের প্রার্থনাসহ আপোষের মাধ্যমে স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে ঘর সংসার করবে মর্মে আদালতে আপোষের শর্তে জামিন নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হয় এবং ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিক পারভেজকে শাসাইয়া দেন। এরপরও বন্ধ হয়নি নির্যাতন। পূনরায় চাকুরীর পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য আপোষ মিমাংসার ১০ মাসের মাতায় দ্বিতীয় দফা পারভেজ আবারও ৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী আমিনাকে বেদম মারপিট করেন এবং পুনরায় আমিনা বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাসুম পারভেজের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
বিচারক মামলা আমলে নিয়ে মাসুম পারভেজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা ইস্যু করেন। গ্রেপ্তারী পরোয়া জারির পর পারভেজ পালিয়ে যায় তার নিজ বাড়িতে। অবশেষে ২১ এপ্রিল পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নিজ কর্মস্থল নবীগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেন। দীর্ঘ ১৫ দিন কারাভোগ করে আপোষ শর্তে জামিন লাভ করেন । কিন্তু আদালতের শর্ত ভঙ্গ করলে ও তার স্ত্রীর পরিবার এবং স্বজনদের বিরুদ্ধে তার নিজ জেলায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেন। বিষয়টি আদালতকে অবগত করলে আদালতের বিচারক ছিফাত উল্লাহ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ।
বিষয়টি নিশ্চত করে মামলার আইনজীবী এডভোকেট শফিউল আলম আজাদ জানান, স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য দ্বিতীয়বার নির্যাতন করা মামলায় জামিনপ্রাপ্ত আসামী মাসুম পারভেজ আদালতের শর্ত ভঙ্গ করায় স্বামী মাসুমকে কারাগারে প্রেরণ করেন। মামলার বাদিনী আমিনা বেগম জানান, আমাকে যৌতুকের দাবীতে শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে। এমনকি স্কুলের ছাত্রীদের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপের বিভিন্ন ভিডিও করে তাদেরকে ব্লাকমেইল করে যৌন-সম্পর্ককে লিপ্ত হন লম্পট স্বামী। এমন একটি বিডিও ইতিপূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
আমিনার পিতা খয়রুল মিয়া জানান, যৌতুকের মামলায় করায় আমি সহ আমার পরিবারের সবার বিরুদ্ধে নেত্রকোনায় পর পর ৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে । আমারা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।