গোচারণভূমি ভূমিখেকো চক্রের দখলে, বিপাকে ৪ গ্রামের কৃষক

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সরকারি গোচারণভূমি দখল বাণিজ্য ও প্রাকৃতিকভাবে বেড়েওঠা বনজাত উদ্ভিদ উপড়ে দিয়ে বোরো ফসল রোপণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের জাঞ্জাইল মৌজার বড়কান্দা এলাকার গোচারণভূমি এখন প্রভাবশালীগন দখলে রেখেছেন। এমন অভিযোগের তীর দুর্লভপুর গ্রামের ভূমিখেকো চক্রের বিরুদ্ধে। এমতাবস্থায় মাহমুদপুর, পাড়াবেকই, কিষ্টপুর,গড়েরগাঁও গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক-শ্রমিক তাদের গবাদিপশু নিয়ে রয়েছেন চরম বিপাকে।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, ওই চক্রের বিরুদ্ধে টু শব্দ করলে হামলা-মামলা ঠুকে দেন অসহায় কৃষক-শ্রমিকদের উপরে।অবৈধভাবে সরকারের খাস গোচারণভূমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনতার পক্ষে গেল ২২ জানুয়ারি তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে এখন বেকায়দায় পড়েছেন তারা। অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাশেম বলেন, তদন্ত করে আইনগত পদক্ষেপ নিতে ভূমি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন- নিজেদের অপকর্ম অন্য খাতে প্রভাবিত করতে অন্তত ৩০ শতক জমিতে আবাদকৃত বোরো ধানের চারা রাতের আঁধারে উপরে ফেলে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্যদিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ প্রতিপক্ষদের উপর অভিযোগ এনে সংবাদ প্রকাশ করে ওই চক্র। এরপর থেকে তীব্র নিন্দা আর প্রতিবাদের জোয়ারে ভাসছেন গোচারণভূমি দখলবাজি ওই চক্র।
রবিবার সরেজমিন পরিদর্শন করে স্থানীয় মাহমুদপুর, পাড়াবেকই, কৃষ্টপুর, গড়েরগাঁও গ্রামের ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার শ্রীপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের জাঞ্জাইল মৌজার সরকারি খাস বড়কান্দা নামক স্থানটি বৃটিশ-পাকিস্তান আমল থেকে স্থানীয়রা গোচারণভূমি হিসাবে ব্যবহার করে আসছেন। শুধু চার গ্রাম নয় পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীও গবাদিপশু পালনে স্থানটি গোচারণভূমি হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। সাম্প্রতিক সময়ে এলাকার চিহ্নিত ভুমিখেকো চক্রের সদস্য দুর্লভপুর গ্রামের মৃত একিন আলীর ছেলে কয়েছ মিয়া ও তার সহোদর ইছব আলী, ফারুক মিয়া, একই গ্রামের মৃত আব্দুল বারিকের ছেলে আব্দুল হক, আব্দুল হামিদের ছেলে শফিক মিয়া, আব্দুল খালেকের ছেলে দুলাল মিয়া, রওশন আলীর ছেলে নুর উদ্দিন ও সবুজ মিয়াসহ ১০-১২ জন উগ্রবাদী ভূমিখেকো চক্র গোচারণভূমি দখলে নিয়েছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে জানতে অভিযুক্ত কয়েছ মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী মাহমুদপুর গ্রামের বাসিন্দা খোকন মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন- আমাদের পুর্বপুরুষ থেকে বড়কান্দা নামক সরকারি খাস গোচারণভূমিতে গরু-বাছুর চড়াইয়া আসিতেছি, বর্তমানে দুর্লভপুর গ্রামের চিহ্নিত কিছু ভূমিখেকো চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িত উগ্রবাদী লোক এই কান্দার বনজাত উদ্ভিদ ঘাস উঠাইয়া নষ্ট করে এমনকি কান্দার শ্রেণী পরিবর্তন করে জোরপূর্বক ধান রোপণ করে। ফলে আমাদের এলাকার গরু-বাছুরের খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে আমাদের এলাকার গরু-বাছুর নিয়ে চরমভাবে বিপাকে পড়েছি। আমরা তাদের নিষেধ দিলে হামলা-মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করবে বলে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ ব্যাপারে আমরা তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভূমিখেকো চক্র পরিকল্পিতভাবে তাদের দখলীয় জায়গার ৩০ শতক রোপণকৃত জমি নিজেরাই নষ্ট করে আমাদের উপর দায় চাপিয়ে দেয়। এমনকি আমাদের হয়রানি করতে মিথ্যা ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করিয়ে আমাদের হেয় করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। আমরা নিরীহ জনতা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা বিশ্বাস করি এই ভূমিখেকো উগ্রবাদী লোকদের বিরুদ্ধে প্রশাসন আইনগত পদক্ষেপ নিবে।