চরমোনাই মাহফিলে ৪ জনের ইসলাম গ্রহণ, ১০ জনের মৃত্যু

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হলো চরমোনাই মাদরাসা ময়দানে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী মাহফিল। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের উদ্বোধনী বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় মাহফিল। আজ শনিবার আখেরি মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্ত হয় লাখ লাখ মুসল্লির আধ্যাত্মিক এ মিলনমেলা।
মাহফিলে আসা মুসল্লিদের মধ্যে ১০ জন বার্ধক্যজনিত ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তারা হলেন- মুন্সীগঞ্জ নিবাসী মো. আলাল খালাশি (৭২), পাবনা নিবাসী আব্দুল জলিল খান (৬৫), গাজীপুর নিবাসী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ব্যাপারী (৫০), চুয়াডাঙ্গা নিবাসী মো. ওসমান (৫০), নীলফামারী নিবাসী মো. মঞ্জুরুল ইসলাম (৬০), চাঁদপুর নিবাসী আলি আহম্মদ (৫৫), বগুড়া নিবাসী মো. আব্দুল হামিদ (৬৫), চাদপুর নিবাসী মো. আইউব আলী (৬০), নারায়ণগঞ্জ নিবাসী মো. আলতাফ হোসেন (৬৫), নরসিংদী নিবাসী মো. আবুল কালাম (৪২)।
সবার জানাজা শেষে মাহফিল হাসপাতালের নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্সে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়। চরমোনাই অস্থায়ী মাহফিল হাসপাতালে এ বছর তিন সহস্রাধিক মুসল্লিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এবারের মাহফিলে চারজন অমুসলিম পীরসাহেব চরমোনাই ও শায়খে চরমোনাইর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন।
সমাপনী অধিবেশনের বয়ানে চরমোনাই পীর বলেন, মানুষ আজ আল্লাহকে ভুলে নাফরমানি করছে অহরহ। অথচ একজন মানুষ কবরে গিয়ে মাফ না পাওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিকৃষ্ট পশুর মতো মনে করতে হবে। সুতরাং তাক্বওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনের মাধ্যমে মহান রবের সন্তুষ্টি নিয়ে কবরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
আল্লাহর ভয় যার অন্তরে নেই ঐ মানুষ এমনকি আলেম, মুফতী ও পীরের কোনো মূল্য নেই। তিনি বলেন, নিজেকে নিজে ছোট মনে করতে হবে। আমিত্ব ভাব ও তাকাব্বুরি পরিত্যাগ করতে হবে। হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করতে হবে। ঘোড়ার মুখে যেভাবে লাগাম থাকে সেভাবে রাগের মুখে লাগাম লাগাতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা জিকিরের মাধ্যমে ক্বলব পরিশুদ্ধ করতে হবে।
গিবতের মতো গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। পরিবারের সবাইকে দ্বিন শিক্ষা দিয়ে দ্বিনের পাবন্দি করতে হবে। পরিবারে খাছ পর্দা জারি করতে হবে। সকল প্রকার নেশাজাত দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহওয়ালাদের কিতাব পড়তে হবে। সাপ্তাহিক হালকায়ে জিকির ও তালিমে নিয়মিত অংশ নিতে হবে। সহিহশুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে।
আখেরি বয়ানের পর পীর সাহেব চরমোনাই বিভিন্ন লিখিত প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় তিনি মুরিদানদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন। অতঃপর তিনি তাওবা করিয়ে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার শপথ করান।
আখেরি মোনাজাতে ফিলিস্তিন, ভারত, কাশ্মীর, মিয়ানমার, সিরিয়াসহ বিশ্বের নির্যাতিত মুসলমানদের নিরাপত্তা ও সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা করা হয়।
এ বছর মাহফিলে মূল সাতটি বয়ানের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বয়ান পেশ করেন বাংলাদেশসহ সৌদি আরব, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিসর, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও তুরস্কের বিশিষ্ট ওলামায়ে কিরাম।