ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের শেষ সময়ে তাহিরপুরে বাঁধে মাটির কাজ শুরু

হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি
কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ই ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২৮শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ/মেরামতের কাজ শেষ করার নির্দেশনা থাকলেও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে শেষ সময়ে মাটির কাজ শুরু হয়েছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা সদরের সামনে বৌলাই নদী ঘেঁষে মাটিয়ান হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধে (৪১নং পিআইসিতে) মাটির কাজ শুরু হয়েছে। এই বাঁধে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯ লাখ টাকা। এছাড়াও ৬২নং পিআইসি গুরুত্বপূর্ণ ক্লোজারটিও মাটির কাজ শুরু করা হয়েছে গত সাপ্তাহে।
যেখানে কাজ শেষ করার কথা সেখানে কাজ শুরু হওয়ায় হাওর পাড়ের কৃষক ও সচেতন মহলে উৎকণ্ঠা বাড়ছে,সাথে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
শুধু এই বাঁধেই নয় জেলার প্রতিটি বাঁধেই নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি। হয়নি বাঁধে নীতিমালা অনুযায়ী মেরামত ও নির্মান। ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে পিআইসি গঠনেও। এছাড়াও কোনো কোনো বাঁধের নিচে বালু দিয়েও তৈরী করা হয়েছে অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের।
জানা গেছে, জেলার তাহিরপুর উপজেলার ৪১,৪৭,৪৮,৪৯,৫০,৫১,৫২,৫৩,৫৪,৬২নং পিআইসির কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। এভাবে অন্যান্য হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজও ধীর গতিতে চলছে।
তাহিরপুর উপজেলার দায়িত্বে থাকা পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন জানান, মাটি না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। শুধু ৪১নং পিআইসিই নয় আরও কয়েকটি বাঁধের কাজ মাটি না পাওয়ায় শুরু করা হয়নি। এই উপজেলায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে, বর্তমানে বাঁধে কাজের গতি বেড়েছে বলে দাবী করেন তিনি।
তবে কাগজে কলমে ৮৫ ভাগ দেখানো হলেও হাওর পাড়ের সচেতন মহল ও হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠনের নেতারা বলছেন, যেখানে নীতিমালা অনুযায়ী সময় প্রায় শেষ। দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতায় বাঁধে মাটির কাজ ২৪ ফেব্রুয়ারী শুরু হয়, সেখানে কিভাবে ৮৫ ভাগ কাজ হয়? আর বেশির ভাগ কাজ শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারি মাসে। তাহলে বাঁধ মজবুত হবে কি ভাবে? আগাম পাহাড়ী ঢলের পানির সামান্য চাপে বাঁধ ভেঙে যাবে।
হাওর পাড়ের কৃষকগন জানিয়েছেন,মাটির কাজই শেষ করতে হলে কম হলে আরও ১০ দিন লাগবে। এবার কষ্টে ফলানো এক মাত্র বোরো ফসল রক্ষায় দূর্ভল বাঁধ ভেঙে পানিতে ডুবে যাবে। কৃষকের কোনো লাভ হবে না। সরকারী বরাদ্দের টাকা পানিতেই যাবে।
পাউবোর অগ্রগতি প্রতিবেদন অনুযায়ী জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে কম কাজ হয়েছে তাহিরপুর উপজেলায়। এই উপজেলায় ৭৬টি প্রকল্পে ১২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজের অগ্রগতি ৮০ ভাগ। এ উপজেলার আড়াই কোটি টাকা বোরো ধান উৎপাদন হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় এবার ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। অপরদিকে ১২টি উপজেলার ৫৩টি হাওরে ৬৮৬ প্রকল্পে বাঁধের কাজ হচ্ছে। এ জন্য প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২৭ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৮৭ কোটি টাকা।
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় ক্ষোভের সাথে জানান, কাগজে কলমে পাউবো বলে ৮০-৮৫ ভাগ কিন্তু বাস্তবে বাঁধের চিত্র ভিন্ন। কাজে শুরু থেকেই গাফিলতি ছিল এখনও আছে। এবারও ফসল ঝুঁকিতে পড়বে এর দায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে নিতে হবে।
মাটিয়ান হাওরের ৬৮নম্বর প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান মিয়া জানান,এক দিকে মাটি পাওয়া যায় না অন্য দিকে বিলও দিছে মাত্র এক কিস্তি। আবার মেশিন (এক্সকাভেটর) দিয়ে কাজ করাব সেটিও অন্য জায়গায় কাজ করতেছে। এই বাঁধের কাজ এক সপ্তার মধ্যেই কাজ শেষ হবে।
মাটিয়ান ও টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক পরাগ মিয়া, সোহাগ মিয়াসহ অনেকেই বলেন, বাঁধ নির্মাণের নামে টাকা লুটপাটের মহোৎসব দেখা গেছে প্রতি বছর। আর দায়সারা লোক দেখানো কাজ শুরু থেকে চলে আর শেষে দিকে তাড়াহুড়া করে চলছে তাতে কৃষকের কোনো উপকার হবে না তবে বাঁধ সংশ্লিষ্টদের পকেট ভরেছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা হাওরে বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত জেলা কমিটির সদস্য সচিব মোঃ মামুন হাওলাদার জানান, সব প্রকল্পে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মাটি কাজ শেষ করার জন্য চেষ্টা করছি। নানান কারনেই পিআইসি গঠনে বিলম্ব হয়েছে। এছাড়াও মাটিও পাওয়া যায়নি, সে কারণে বাঁধের কাজে বিলম্ব হয়েছে।