লাউয়াছড়ার একবছরে সাড়ে ৩ শতাধিক বন্যপ্রাণী উদ্ধার

দৈনিকসিলেট ডটকম
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে গত এক বছরে অন্তত সাড়ে ৩ শতাধিক বন্য প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে সড়কে ও রেলে কাটা পড়ে মারা গেছে শতাধিক বন্যপ্রাণী। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ২৫০ বন্যপ্রাণী। উদ্ধারের মধ্য বেশিই ভাগই অজগর সাপ।
১ মার্চ কমলগঞ্জের একটি গ্রাম থেকে চিত্রা হরিণ উদ্ধার করে বনবিভাগ।
একই ভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলের মৌলভীবাজার সড়কে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছে বন বিড়াল ও গন্ধগোকুলসহ ৩টি বন্যপ্রাণী। বনের নানা সংকটের মধ্যে আজ সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য—‘বন্যপ্রাণী সংরক্ষনে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’।
এ উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল ১১ টায় কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে বিট অফিস প্রাঙ্গনে দিনব্যাপী আলোচনা, র্যালী ও সচেতনতামূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে।
বনবিভাগ ও স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ড লাইফ (সিউ) নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সুত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান থেকে লোকালয়ে বেড়িয়ে পড়া প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক বন্য প্রাণী কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জীবিত ও মৃত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে।
এর মধ্যে জীবিত উদ্ধারের পর বনাঞ্চলে ফিরেছে ২৫০ এবং মৃত অবস্থায় মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে ১০০ বন্য প্রাণীকে। উদ্ধার হওয়া প্রাণীর মধ্যে রয়েছে হরিন, বানর, লজ্জাবতী বানর, মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল, বনবিড়াল, বিভিন্ন ধরনের প্যাঁচা, মদনটাক, মুনিয়া পাখি, শকুন, অজগর, তক্ষক, শঙ্খিনী সাপ, গন্ধগোকুল, অজগর সাপ, রেড আইক্যাট স্নেক, ধূসর ফণীমনসা ইত্যাদি।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খাবার সংকট ও গাছ পালা নিধনসহ নানা কারণে বন্যপ্রাণীরা লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়ছে। আবার সড়ক ও ট্রেনের নিচে কাটাও পড়ছে। সর্বশেষ ১ মার্চ কমলগঞ্জের কান্দিগাওঁ থেকে চিত্রা হরিন উদ্ধার করে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয়।
লাউয়াছড়া বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সূত্র মতে, বনমোরগ, উল্লুক, বানর, হরিণ, মেছোবিড়ালসহ নানা প্রজাতির প্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল একসময়, কিন্তু এখন কিছু বানর, অজগর ছাড়া আর কোনো প্রাণী দেখা যায় না।
লাউয়াছড়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য জানান, গত ৫ বছর আগে লাউয়াছড়ার পরিবেশ ছিল প্রাণীর অনুকূলে, কিন্তু বর্তমানে প্রাণীর বসবাসের পরিবেশ নেই, নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে বন। প্রায় ৪৫ শতাংশ গাছ উজাড় হয়ে গেছে। বনের ভেতরের ছড়া শুকিয়ে গেছে।
ইকো গাইড কামরান আহমদ জানান, বিগত সময়ে লাউয়াছড়ায় প্রচুর হরিণের দেখা মিলত, কিন্তু এখন বানর ছাড়া কোন প্রাণী দেখা যায় না।
মৌলভীবাজারের পরিবেশ সংগঠক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে জমি দখল করে লেবুবাগান, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ, পর্যটকদের হৈ-হুল্লোড় ও যানবাহন চলাচলের কারণে প্রাণীদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে।
বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব বলেন, ‘ঘন ঘন বিভিন্ন প্রাণী মানুষের হাতে ধরা পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের খাদ্যসংকট বেড়েছে। প্রাণীগুলো খাদ্যের খোঁজে গ্রামাঞ্চলের ঘরবাড়িতে ছুটে আসছে। তিনি জানান গত ১ বছরে তিনি ১০টি অজগরসহ প্রায় ৫০ টি প্রাণী উদ্ধার করে বনবিভাগকে হস্তান্তর করেছেন।
বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ মৌলভীবাজারের সহকারী বন সংরক্ষক জামিল মোহাম্মদ খান বলেন, বন্য প্রাণী রক্ষায় বন বিভাগ নানা উদ্যোগ নিয়েছে।