ডায়াবেটিক রোগীরা যেভাবে রোজা রাখবেন

দৈনিকসিলেট ডেস্ক :
চলছে রমজান মাস। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মাসে রোজা পালন করে থাকেন। সারা দিন উপবাস থাকার পর সন্ধ্যায় ইফতার করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত থাকেন।
সে জন্য তাদের রোজা পালনের জন্য চিকিৎসার রুটিনেও পরিবর্তন আনতে হয়। কিছু নিয়ম মেনে তারাও পরিপূর্ণভাবে রোজা পালন করতে পারেন। এ জন্য প্রয়োজন পূর্ব প্রস্তুতি। রোজা রাখতে চাইলে ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।
নিরাপদে ডায়াবেটিক রোগীর রোজা পালনের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে সবাইকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইন ডিপার্টমেন্ট। বাংলাদেশের এন্ডোক্রাইনোলজিস্টদের সংগঠন ক্লিনিক্যাল এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ও ডায়াবেটোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এসিইডিবি) ২০২৩ সালের অক্টোবরে বিষয়টিকে আরো গুরুত্বের সঙ্গে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে রজব মাসকে ‘ডায়াবেটিস ও রমজান সচেতনতা মাস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ডায়াবেটিক রোগীদের প্রশিক্ষণ, খতিবদের সঙ্গে আলোচনা করে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে তারা। সুস্থভাবে রোজা রাখতে রোগীর একটি গাইডলাইনও প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
ডায়াবেটিক রোগীরা কিভাবে রোজা পালন করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ডায়াবেটিক সেন্টার সিটি হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. এজাজ বারী চৌধুরী। তিনি বলেন, ডায়াবেটিক রোগীদের কঠোর নিয়ম-কানুন মেনে খাবার ও ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। রোজা রাখতে গিয়ে অনেকেই হাইপো বা নানা রকম সমস্যায় পড়েন। রক্তে চিনির মাত্রা কমে গেলে অনেক সময় মানুষ অচেতন বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। যাকে বলা হয় হাইপো বা হাইপোগ্লাইসিমিয়া।
আবার চিনির মাত্রা খুব বেশি হয়ে গেলেও এমনটা হতে পারে। অবসাদ, মাথা ঘোরা, মাথা ব্যথা, ঝাপসা দৃষ্টির মতো সমস্যা হতে পারে। এ জন্য ডায়াবেটিক রোগীর রক্তে চিনির মাত্রা সব সময় নিয়ন্ত্রিত রাখতে হবে। রোজায় ওষুধ ও খাদ্যের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। রোজা শুরুর প্রথম তিন-চার দিন পাঁচবেলা—ঘুম থেকে ওঠার পর, সকাল ১১টায়, বিকেল ৪টায়, ইফতারের আগে এবং ইফতারের দুই ঘণ্টা পর রক্তে চিনির মাত্রা মাপতে হবে।
পরীক্ষার ফল দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ ও খাদ্যের সমন্বয় করে নিতে হবে। রাতের ওষুধ ইফতারের সময় এবং সকালের ওষুধ সাহরির সময় খেতে পারেন। দুপুরের ওষুধ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করে নিতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ৩.৯-এর নিচে নেমে এলে আর রোজা অব্যাহত রাখা ঠিক হবে না। কারণ এতে হাইপো হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে রোগী, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। দিনের যেকোনো সময় এমন হলে দ্রুত খাবার খেতে হবে। দুপুর বা বিকেলে হলে ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়।
একইভাবে রক্তে চিনির মাত্রা ১৬.৭ বা তার বেশি হলে তারও রোজা অব্যাহত রাখা ঠিক নয়। তখন ওষুধ খেতে হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। যাদের ওজন ঠিক আছে তাদের রোজার সময় পুরো তারাবি নামাজ পড়লেই শারীরিক পরিশ্রমের কাজটা হয়ে যাবে। যাদের ওজন কমানোর দরকার তাদের তারাবি নামাজের পর আধাঘণ্টা হাঁটতে হবে।