মাধবপুরে তিন বছর পর শপথ নিলেন ইউপি সদস্য নুরুল

নাহিদ মিয়া, মাধবপুর প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের মাধবপুরে ভোট কারচুপির শিকার হয়ে পরাজিত দেখানো ইউপি সদস্য নুরুল হাসান তপু প্রায় তিন বছর পর শপথ নিলেন। আজ( ১০ মার্চ) নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্যকে আদালতের নির্দেশে শপথ পাঠ করান উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ বিন কাসেম।
উল্লেখ্য যে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নুরুল হাসান তপু বিপুল ভোটে জয়ী হলেও ভোট গণনায় কারচুপির মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনকে এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী দেখানো হয়। তারপর পরাজিত দেখানো নুরুল হাসান ভোট পুনর্গণনার আবেদন জানিয়ে হবিগঞ্জ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।
বিচারিক প্রক্রিয়ার পর আদালত পুনর্গণনার আদেশ দেয়। ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে ভোট পুনর্গণনা করা হলে দেখা যায়, নুরুল হাসান ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। দীর্ঘ শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ ও যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ভোট কারচুপির প্রমাণ মেলে।
এ বিষয়ে সিনিয়র সহকারী বিচারক সবুজ পাল রায়ে উল্লেখ করেন, বিশাল ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থীকে এক ভোটে হারানোর ঘটনা স্বাভাবিক ভুল নয় বরং একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
উক্ত রায়ে প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলাম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফখরুদ্দিনকে ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িত হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশন সচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে ইসলাম উদ্দিন আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করলে যুগ্ম জেলা জজ মিথিলা ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পূর্বিতা চাকমা নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন। এরপর তিনি হাইকোর্টে রিট করলে সেখানে স্থিতাবস্থা জারি হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর বিচারপতি রেজাউল হক নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন এবং চূড়ান্তভাবে নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রিয়াজুল হক এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনও কেন কোনো ফৌজদারি মামলা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
নুরুল হাসানের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘৫৩৩ ভোটে বিজয়ী প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজিত দেখানো শুধু আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা নয়, বরং এটি রাষ্ট্র ও সংবিধানের ওপর সরাসরি আঘাত। দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহেদ বিন কাসেম ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে তার শপথ পাঠ করান।
এ প্রসঙ্গে নুরুল হাসান বলেন, ‘জনগণের রায় পাল্টে অন্যায়ভাবে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সত্যের জয় হয়েছে সাথে যারা যারা আমাকে পরাজিত করার নীলনকশার সাথে জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধে আইনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাই। এ বিজয় আমার না, আমার জনগনের।