বাহুবলে নিজ বাড়ি আসলেন হামজা চৌধুরী, আনন্দে মাতোয়ারা গ্রাম

মোশাহিদুল ইসলাম নয়ন, বাহুবল
অবশেষে অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। নিজ বাড়ির মাটিতে পা রাখলেন হামজা চৌধুরী। নিজ বাড়ি বাহুবলের স্নানঘাট সকাল থেকেই ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। ‘ওয়েলকাম টু স্নানঘাট হামজা’—এমন সব স্লোগানে মুখর ছিলেন গ্রামবাসী। তাদের সেই অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গ্রামে আসেন ইংল্যান্ড প্রবাসী ফুটবলার হামজা চৌধুরী। হবিগঞ্জের বাহুবলের স্নানঘাটের সন্তান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সারা জাগানো ফুটবল খেলোয়াড় দেওয়ান হামজা চৌধুরী নিজের গ্রামের বাড়িতে আসেন। মা, স্ত্রী এবং সন্তানদের নিয়ে সোমবার বিকেল পৌণে ৪টায় নিজ বাড়ি স্নানঘাট পৌছান।
হামজার আগমণ উপলক্ষে স্নানঘাট এলাকায় নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এসবের মাঝেও বিপুল পরিমাণ গ্রামের লোকজন ও ফুটবল ভক্ত হাজির হন বাড়িতে। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড দিয়ে তারা হামজার নামে স্লোগান তুলেন। এর আগে দুপর ১১টা ৪০মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এরপর সড়ক পথে তিনি বাহুবলের স্নানঘাট এসে পৌঁছান। ইতিপূর্বেও বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে এসেছিলেন হামজা চৌধুরী। তবে এবার তার আসায় ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এবার তিনি এসেছেন নিজ দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে খেলতে।
আগামী ২৫ মার্চ ভারতের শিলংয়ে স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে স্বাগতিক ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচ দিয়েই বাংলাদেশের জার্সিতে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হবে হামজা চৌধুরীর। দেশের হয়ে খেলতে এসেছেন, তাই আনন্দের শেষ নেই নিজগ্রাম স্নানঘাটসহ বাহুবলবাসীর। বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। হামজা আসার ২দিন পুর্বে পথে পথে তোরণ নির্মাণ করা হয়। বাড়ির প্রবেশ পথেও তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকতা সারার জন্য প্রস্তুত করা হয় একটি মঞ্চ। বিকেল সাড়ে ৪টায় একমিনিট সময় দেন।
এসময় তিনি বাংলাদেশ জিন্দা বাদ বলে মঞ্চ থেকে বিদায় নেন। কিন্তু তিনি বক্তব্য দেননি। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা। এরমধ্য অনেকেই তার বক্তব্য শুনতে না পেরে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরেন।
পারিবারিক সূত্র জানায়, বেশ কয়েকবার দেশে এসেছেন দেওয়ান হামজা চৌধুরী। দেড় বা ২ বছর বয়স থেকেই তার দেশে আসা শুরু; কিন্তু এবারের আসাটা ভিন্ন। সাথে আসেন স্ত্রী, সন্তানরাও। তাদের জন্য বাংলাদেশে এটি প্রথম সফর। বধূ প্রথমবার আসেন শ্বশুরালয়ে। তাই বিদেশি বধূকে বরণে ব্যাপক আয়োজন করেন স্বজনরা। বাড়ি সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। বাড়ির প্রবেশপথসহ পথে পথে তোরণ নির্মাণ করা হয় পোস্টার, ফেস্টুন। লাইটিং করা হয়েছে পুরো বাড়িতে। আগত অতিথিদের ইফতারও করানো হয়।
বাড়ির পাশে মাদ্রসায় ছোট্ট পরিসরে শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন হামজা চৌধুরীর চাচা দেওয়ান মাসুদ বলেন, ২০১৪ সালে সর্বশেষ দেশে এসেছিল হামজা। ২০২২ সালে সে বিয়ে করে। এরপর আর তার দেশে আসা হয়নি। আমরা আনন্দে উদ্বেলিত। ভাতিজার সাথে এবার তার স্ত্রী এবং নাতি, নাতনিদের দেখা করতে পেরে। মূলত তাদের বরণ করতেই বাড়ি সাজানো হয়। আমাদের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে, যা আসলে বলে বোঝানো যাবে না। শুধু আমাদের বাড়ি নয়, উপজেলাজুড়ে মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। হামজা চৌধুরীর বাবা দেওয়ান গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘অনেকেই সংবর্ধনার আয়োজন করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু আমি বারণ করেছি। একে তো রমজান মাস। আবার সে লম্বা বিমান সফর করে আসছে। ক্লান্ত তাই বক্তব্য দিতে পারেনি। তাই কাউকে কষ্ট দিতে চাইনি। বলেছি এটিই তো শেষ আসা নয়। যেহেতু দেশের হয়ে খেলবে পরেরবার এলে বক্তব্য দিবে। এবার আমি নিজে বাড়িতে ছোট্ট আয়োজন করেছি। যেহেতু বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন আসছে, তাই সবার সম্মানে এ আয়োজন। ছোট্ট একটি মঞ্চ তৈরি করেছি। এখানে সবার সাথে কুশলবিনিময় করেন, তারপর সবাইকে নিয়ে ইফতার করা হয়। ব্যস একটি রাত বাড়িতে থাকাই মূল উদ্দেশ্য।
মঙ্গলবার ঢাকায় চলে যাবে সবাই। দীর্ঘ কয়েক বছরের প্রক্রিয়া শেষে গত বছর বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমোদন পান হামজা। আগামী ২৫ মার্চ শিলংয়ে এশিয়ান কাপ বাছাইতে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হবে এই তারকার। এই ম্যাচটি খেলতেই তিনি দেশে এসেছেন। এর আগে অনেকবার বাংলাদেশে এলেও এবার তার আগমন পায় বিশেষ মাত্রা।