বিএনপি নেত্রীকে হবিগঞ্জের ডিসির হুমকির অভিযোগ

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের রাজার বাজার ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে ভারী যান চলাচল ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় ঘেরাওর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহস্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার। এর জবাবে জেলা প্রশাসক ফোনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই নেত্রী। খোয়াই নদীর ওপর ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি ভারী যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এর পরও সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যান চলাচল করছে।
(৩ এপ্রিল) বিকেলে চুনারুঘাট পৌরশহরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সদস্য মোঃ অলিউর রহমানের পরিচালনায় মানববন্ধনে একাত্মতা পোষণ করে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার সময় বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি শাম্মী আক্তার অভিযোগ করেন, সম্প্রতি তিনি অবৈধ বালু উত্তোলন এবং খোয়াই নদীর ওপর অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে ভারি যান চলাচল নিষিদ্ধে প্রয়োজনে ডিসি অফিস ঘেরাওর কথা বলেন। পরদিন মোবাইল ফোনে কল করে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং চুনারুঘাটে তাঁকে ঢুকতে দেবেন না বলে হুমকি দেন জেলা প্রশাসক ড. ফরিদুর রহমান। শাম্মী আক্তার বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। সেই বালুবাহী ভারি ট্রাক চলছে রাজার বাজার ভায়া বাসুল্লা সড়কে খোয়াই নদীর ওপর অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে। জনগণ এই অবস্থার পরিত্রাণ চায়। তিনি জনগণের থেকে দাবী আদায়ে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসককে জনগণের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে দ্রুত সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান ।
শাম্মি আক্তার ডিসির উদ্দেশ্য বলেন, আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই আপনিও শেখ হাসিনার দোসর, আপনার গায়ে ফ্যাসিস্টের গন্ধ লেগে আছে। গলার স্বর নামিয়ে কথা বলুন, আমার পরিবারের ইতিহাস শহীদদের ইতিহাস, আমার দাদা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি। এদেশের মানুষের জন্য অতিতে যেমন আমরা প্রাণ দিতে ভয়ে বুক কাঁপেনি এখনও প্রাণ দিতে কাঁপবেনা, ভবিষ্যতেও না। কাজেই আপনরা যারা খুনি হাসিনার দোসর আপনাদের কণ্ঠস্বর নামিয়ে কথা বলুন। জনগণের উপর খবরদারীর চেষ্টা করবেন না। জনগণের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছেন বিগত ১৭ বছর। তাই এখন গলার কন্ঠ স্বর নামিয়ে জনগণের সাথে একাত্মতা পোষণ করুন। জনগণের স্বার্থে যেই পদক্ষেপ নিতে হয় সেটি করুন অন্যথায় জনগণ আপনাদেরকে ছাড় দিবে না। খুনি হাসিনার সহযোগীরা মিলে বালু মহালের নামে অবৈধভাবে বালু তুলতে তুলতে সেই ব্রিজটি এখন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অবিলম্বে এই চুনারুঘাটে যতগুলো অবৈধ বালু মহাল আছে সব গুলো বন্ধের দাবী জানান তিনি । অন্যথায় আগামীদিনে প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয় এই গণজোয়ার নিয়ে জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। ছাত্রদল নেতা ওলিউর রহমানের পরিচালনায় আলিনগর ঐক্য যুব সমাজের সভাপতি মোঃ রাজন মিয়ার সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো: মারুফ মিয়া, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব শাহ প্রান্ত, কাজী শাহিদুল ইসলাম রিমন, সৈয়দ রেজু আহমেদ, খন্দকার শামীমুল হক, হাজী আঃ জাহির, জাহিরুল ইসলাম মামুন, কাজী রাসেল, তুষার মেম্বার, কাজী আব্দুল করিম, রবি মেম্বার, আরিফে রাব্বানী, মোঃ হেলাল মিয়া, ডাঃ আব্দুল মন্নান, কাজী মাছুম, রাসেল আহমেদ, মেহেদী হাসান শুভ, রিয়াজ মিয়া, ফরিদ মিয়া, শেখ রাসেল, ফয়সাল আহমেদ তুহিন, এমরান মিয়া, কাউসার, ফজল, আঃ হক, কয়সর, রনি আহমেদ, তরিকুল ইসলাম তারেক, তারেক মুন্সী,আফসর, লিটন, মিলন, আতাউর বিন সিদ্দিক, শুভ দেব, স্বপন তালুকদার আব্দুল্লা সায়েম, শান্ত সাকিব, ইমন মিয়া ও রেমা চাবাগানের চা কন্যা পুস্প সহ রেমা চা বাগান মিরাশী পূর্বাঞ্চলের জনসাধারণের কয়েকশ লোক মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুনারুঘাটের রাজার বাজার টু বাসুল্লা রোডে খোয়াই নদীর উপর নির্মিত ঝুকিপূর্ণ ব্রীজের উপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে ভারী ওজনের বালুর গাড়ী চলাচল করছে। ফলে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ ৩ টনের বেশি ভারী ওজনের গাড়ী চলাচলে নিষেধ ও ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্রিজের মুখে সাইনবোর্ড লাগানোর পরও চলে ভারী বালুবাহী যানবাহন। চক্রটি বিধি-নিষেধ অমান্য করে সেতুর ওপর দিয়ে চলছে বালু বোঝাই অবৈধ ডাম্পার সহ যানবাহন। এ নিয়ে গত ১ এপ্রিল রাজার বাজার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। পরদিন উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজার বাজার ব্রিজ টি ঝুকিপূর্ণ বালু ও মাটি বহনকারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ মর্মে সাইনবোর্ড সাটানো হয়। এরপরও বন্ধ হয়নি ভারী যানবাহন চলাচল। পরে তারা দ্বীতিয় বারের মতো চুনারুঘাট পৌর শহরে স্থানীয়রা ব্রিজ রক্ষা, বালুবাহী ট্রাক বন্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন এবং ব্রিজের ভাঙ্গা অংশটুকু সংস্কারের দাবি জানান। অন্যথায় তারা বৃহৎ আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন।
ছাত্রনেতা ওলিউর রহমান জানান, পরিবেশের এই বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ জানানোর পরও প্রশাসন কোন কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা পূনরায় পূর্বাঞ্চলের লোকজন মানববন্ধন করছি। অংশগ্রহণকারীরা জানান, বৈধতার নামে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু উত্তোলণ সহ্য করবো না এবং যতদিন না অবৈধবালু উত্তোলন বন্ধ করা হবে, ততদিন তাদের আন্দোলন চলবে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা প্রশাসক ফরিদুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলেনি। পরে তাঁর সরকারি নম্বরে করা ওয়াটসঅ্যাপ বার্তার উত্তরে তিনি জানান, বিএনপি নেত্রী শাম্মী আক্তার ডিসি-ইউএনও সম্পর্কে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিত করার হুমকি দিয়েছেন। প্রশাসন সব সময় বালুখেকোদের বিরুদ্ধে। তিনি প্রকাশ্যে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন। মামলা করা বা তাঁকে চুনারুঘাটে ঢুকতে না দেওয়ার হুমকি প্রদানের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।