শুরু হয়েছে বৃষ্টি, হাওরেজুড়ে কৃষকদের আতংক

স্টাফ রিপোর্টার :
বোরো ধানের ভান্ডার খ্যাত সুনামগঞ্জ। কৃষকের কষ্টে ফলানো সারা বছরের লালিত স্বপ্ন সোনালী ধানের শীষ দোল খাচ্ছে হাওরের বুক জুড়ে। সেই ধান গোলায় তুলতে পারলেই মনের শান্তি, চাঙা হাওরাঞ্চল ও দেশের অর্থনীতি। সেই ধান কেটে আনতে সড়ক(জাঙ্গাল)না থাকা,শ্রমিক সংকটসহ নানান প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ দিয়ে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড গত ১৫ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি এবং আগাম বন্যার আশংকার তথ্য জানালে আগাম বন্যার আশংকায় উৎবেগ আর উৎকন্ঠা ছিল হাওরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মাঝে। তবে এর মধ্যে বৃষ্টি না হওয়া আর ধান কাটার পরিবেশ ভাল আর রৌদ থাকায় আতংক কাটিয়ে খুশি মনে ধান কেটে মাড়াই,শুকানোর কাজে ব্যস্থ সময় পার করছেন কৃষক তার শিশু সন্তানসহ পরিবারের সকল সদস্যগন। কিন্তু ২২ এপ্রিল থেকে রৌদ্রময় আকাশ অন্ধকার করায় ও বৃষ্টি হওয়ায় কৃষকের বুক কেঁপে ওঠে আর কিং কর্তব্য বিমূঢ় হয়ে পরেছে কৃষকগন। জানাগেছে,সুনামগঞ্জের অর্থনৈতিক মুল ভিত্তি এক ফসলী বোরো ধান। লোক মুখে প্রচার আছে সুনামগঞ্জের উৎপাদিত ধান সারা বাংলাদেশের ১৬-১৭দিনের খাবার যোগান দেয়। এই ধান শুধু খাদ্য নয় কৃষকের ভবিষ্যতে শক্তি সাহস,ঘরে ঘরে হাসি,সন্তানদের স্কুল,ছেলে মেয়ের বিয়ে শাদী করানো আর সংসারের স্বস্তি। সেই ধান গোলায় তুলা নিয়ে ভয়ে আছে হাওরের হাজার হাজার কৃষকগন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলার ১২টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১৩৭টি ছোট বড় হাওরে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। আর এই আবাদ থেকে ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮০মেট্রিক টন ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য আনুমানিক ৫ হাজার ২ কোটি টাকার বেশি। আর হাওরে ১ লাখ ১৬ হাজার শ্রমিক,৬২৭ টি হারভেস্টার ও ৬৫ টি রিপার দিয়ে ধান কাটার কাজ চলছে। এদিকে অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল থেকে জেলার বোরো ফসল রক্ষায় জেলার ১২টি উপজেলায় ৪৭টি বড় হাওরে ৬৮৭টি প্রকল্পের আওতায় ৫৯৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে ১শত ২৭ কোটি টাকা ব্যয় করে। হাওর পাড়ের সচেতন মহল বলছেন,পাউবো বৃষ্টির তথ্য দিয়ে আতংক সৃষ্টি করেছে। এই সময়ে বৃষ্টি সাভাবিক বিষয়। কিন্তু দূর্ভল বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে আর হারভেস্টরে ধান কাটানোর চেষ্টা মেশিনের ব্যবসা সফল আর বন্যা আসলেও কোনো সমস্যা নেই ধান কাটা হয়ে গেলো পাউবোও বেঁচে গেল। তাদের দেয়া তথ্যে আতংকিত হয়ে অনেক কৃষক আধা পাকা ধান কেটে ছিল।
জেলার খরচার হাওরের কৃষক রফিক মিয়া জানান, আকাশে মেঘ দেখলেই বুকে ধরফর করে। তখন ধান কিভাবে কাটবো আর শুকাবো কোনো দিশা পাই না। আবহাওয়া ভাল থাকলেই কাটা মাড়াই করা আর শুকিয়ে গোলায় তুলা সহজ হয়,মনে শান্তিও থাকে। বৃষ্টি শুরু হয়েছে আগাম পাহাড়ি ঢলে বাঁধ ভেঙে ফসল হানীর আতংক শুরু হয়েছে। এদিকে হাওর থেকে ধান আনার সড়ক (জাঙ্গাল) এর অবস্থা খুবই খারাপ ধান পরিবহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। জেলার শনির হাওরের কৃষক সাদেক আলী জানান,যে ধান গুলো পেকেছে সে গুলোই কৃষক কাটছে। আমি ২০কিয়ার(৩০ শতাংশে এক কিয়ার) আবাদ করেছি সবই হাইব্রিড। ভাল ফলন হয়েছে আর ভালয় ভালয় ধান গুলো কেটে,শুকিয়ে গোলায় তুলতে পারলেই সারা বছরের শান্তি। সোমবার (২২এপ্রিল) থেকে আকাশে রৌদ নেই অন্ধকার আর বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রতি বছরের মত এবারও ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়া আতংকে আছি।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ জানিয়েছেন, হাওরে ৭৩ হাজারের বেশি শ্রমিক রয়েছে,এর পাশাপাশি ১৬০টি কম্বাইন হারভেস্টার এবং ১৫টি রিপার মেশিন ধান দ্রুত ধান কাটার জন্য মাঠে আছে। একেই সাথে জেলা কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে শুধু মাত্র কৃষকদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সুবিধা দেয়ার জন্য। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, ২১এপ্রিল পর্যন্ত চেরাপুঞ্জিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। যার ফলে নদীর পানি বাড়লেও বিপদ সীমার অনেক নিচে রয়েছে। বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে দ্রুত পাকা ধান কেটে ফেলা জরুরি। আর ফসল রক্ষাবাঁধ গুলোর দিকে কঠোর নজরদারি রয়েছে আমাদের।