বাংলাদেশের ধর্মীয়–জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন

শরীফ আহমদ, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
“বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের কিছু তথ্য: ১০ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট ২০২৪” শিরোনামে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে চলতি মাসে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ১০ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত বাংলাদেশে জাতিগত এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯ জন হিন্দু ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে। হামলাগুলো একটি তালিকা প্রকাশ করেছে ঐক্য পরিষদ। সেখানে নিহত ৯ জন হিন্দু ব্যক্তির নাম ও ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে।
ঐক্য পরিষদ যে ৯টি হত্যার ঘটনাকে ‘ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের’ ফলে সংগঠিত বলে দাবি করা হয়েছে, আমি সেগুলো গত কয়েকদিনে একটু ঘেঁটে দেখার চেষ্টা করেছি। এরই মধ্যে আজকে দেখলাম নেত্রনিউজ এই ৯টি হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। মোটাদাগে নেত্রনিউজের ফাইন্ডিংগুলো আমার ব্যক্তিগত অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে।
সংক্ষেপে ৯টি ঘটনার ভিকটিমদের পরিচয় এবং ঘটনার বিবরণ তুলে ধরছি।
১. হবিগঞ্জের রিপন শীল:
তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কর্মী এবং মিডিয়াতে তার ভাইয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন। আমি স্থানীয় দুইজন ব্যক্তির সাথে কথা বললে তারাও নিশ্চিত করেন যে, রিপন শীল পারিবারিকভাবে বিএনপি সমর্থক এবং আন্দোলন তিনি সক্রিয় ছিলেন। ১০ আগস্ট ঘটনার পর একাধিক পত্রিকার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে রিপন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের গুলিতে মারা যান। রিপনের ওপর গুলিকারী হিসেবে অভিযুক্ত বানিয়াচং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডিপজলের অস্ত্রহাতে গুলি ছোঁড়ার দৃশ্য স্থানীয় অনেকে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।
অর্থাত, এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে আন্দোলনের মাঠে, যেখানে উভয়পক্ষে হিন্দু-মুসলিমরা তাদের দাবির পক্ষে বিপক্ষে নেমেছিলেন। কোনো ধর্মীয় মোটিভেশন থেকে এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেনি।
২. বানিয়াচংয়ের এসআই সন্তোষ চৌধুরী:
১১ আগস্ট সকালে বানিয়াচং পুলিশের গুলিতে শিশুসহ ৩ জন নিহত এবং ১০০ এর বেশি আহত হন। এরপর স্থানীয়রা থানা ঘেরাও করে রাখেন এবং এক পর্যায়ে সেনাবাহিনী তাদেরকে উদ্ধার করতে আসে। এরপরের ঘটনার বিবরণ পড়ুন প্রতিবেদনে:
“থানা ঘেরাওয়ের খবর পেয়ে বেলা তিনটার দিকে জেলা সদর থেকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু কোনোভাবেই সেনাবাহিনী থানা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিল না। এভাবে সময় গড়িয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত ক্ষুব্ধ জনতা থানা ঘেরাও করে রাখেন। এরপর মধ্যরাতে সদর থেকে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছসহ বেশ কিছু নেতা ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু লোকজন শুনছিলেন না। পরে ক্ষুব্ধ লোকজন রাত একটার দিকে সেনাবাহিনীকে প্রস্তাব দেন, আওয়ামী লীগ নেতা ও বানিয়াচং উত্তর-পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হায়দারুজ্জামান খান ও থানার উপরিদর্শক সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে তাঁদের হাতে ছেড়ে দিতে। কিন্তু সেনাবাহিনী রাজি হয়নি। পরে সেনাবাহিনী জানায়, থানার ভেতরে ওই আওয়ামী লীগ নেতা নেই। পরে জেলা বিএনপি ও স্থানীয় সুশীল সমাজের অনুরোধে লোকজন শান্ত হন। রাত দুইটার দিকে থানার দ্বিতীয় তলায় অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্য ও নেতাদের উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাঁদের সেনাবাহিনীর গাড়িতে ওঠানোর সময় উপপরিদর্শক সন্তোষ দাশ চৌধুরীকে উপস্থিত লোকজন ছিনিয়ে নিয়ে সবার সামনে পিটিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ নিয়ে বানিয়াচং বড় বাজার শহীদ মিনারের মাঠে যাওয়া হয়। সেখান থেকে ভোররাতে লাশ থানার সামনে এনে ফেলে রাখা হয়। আজ সকাল ১০টার দিকে ক্ষুব্ধ লোকজন লাশ থানার সামনে একটি আকাশিগাছে ঝুলিয়ে রাখেন। দিনভর হাজারো মানুষ লাশ দেখতে থানা প্রাঙ্গণে ভিড় করেন। এদিকে গাছে লাশ ঝোলানোর খবর পেয়ে আজ বেলা দুইটায় সেনাবাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
বানিয়াচং উপজেলা সদরে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘মানুষের সব ক্ষোভ ছিল ওই পুলিশ কর্মকর্তার ওপর। কারণ, তিনি চাকরি করার সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন। পাশাপাশি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাতেন। এ ছাড়া এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাঁর গোপন ব্যবসা ছিল। এ জন্য ক্ষুব্ধ লোকজন তাঁকে মেরেছেন।’
কায়সার হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, লোকজন উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা হায়দারুজ্জামানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি ঘটনার আগে বন্দুক নিয়ে বিক্ষোভকারীদের তেড়ে যান ও হুমকি দেন। সবার ধারণা ছিল, তিনি থানার ভেতরে আছেন। এ জন্য লোকজন প্রায় ১০ ঘণ্টা থানা ঘেরাও করে রাখেন।”
অর্থাত, এই ঘটনাটিও সাম্প্রদায়িক হামলায় নিহতের নয়। বরং, সারাদেশে ওইদিন পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে তাদের ধর্মীয় পরিচয় নয় বরং পেশাগত পরিচয় এবং সেই পরিচয় ব্যবহার করে মানুষের ওপর গুলি করার কারণে ক্ষুব্ধ মানুষ দেশব্যাপী থানাগুলোতে হামলা চালায় (নিহত হন ৪৪ জন পুলিশ যাদের বেশিরভাগই মুসলিম)। এবং বানিয়াচংয়ের ঘটনায়ও মানুষের ক্ষোভ ছিল পুলিশ সদস্য সন্তোষ চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগ নেতা হায়দারুজ্জামান খানের ওপর, যা পত্রিকার রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট। ফলে, এখানে মানুষজন শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য সন্তোষের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেনি, মুসলিম আওয়ামী লীগ নেতার ওপর প্রকাশ করেছে।
এছাড়াও ফেসবুকে সন্তোষকে নিয়ে করা বিভিন্ন পোস্টে দেখা গেছে বানিয়াচংয়ের স্থানীয় অনেকে তার অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। রিংকু রায় নামে এমন একজনের কমেন্ট ছিল:
“দাদা,সন্তোষের সাথে যা হইছে তা অবশ্যই নিন্দনীয় ও খুবই দু:খ জনকমানুষ হিসেবে আমরা কারোরই এমন মৃত্যু কামনা করতে পারিনা কিন্তু আমি আমার কাজের সুবাদে বানিয়াচং প্রায়ই যাওয়া আসা হয়,আর সেই সুবাদে ঐ কানের অনেক মানুষের সাথে কথা হয় আমার,যা জানতে বা বুজতে পারছি এস আই সন্তোষ এর সম্পর্কে সে চাকরি জীবনে ঐ কান কার মানুষ দের খুব খুব খুব বেশি যন্ত্রণা দিয়েছে দাদা যা মানুষের মনুষ্যত্ব কে কেরে নিয়েছে এই সন্তোষ যার ফলস্বরূপ সেদিনের এই দু:খ জনক ঘটনার স্বাক্ষী হবিগঞ্জ জেলা বাসী।”
এ থেকে বুঝা যায়, সন্তোষের ওপর তার পেশাগত কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয়দের মধ্যে আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল, যার সাথে ৫ আগস্ট সকালে পুলিশের গুলিতে স্থানীয় কয়েকজন নিহতের ঘটনা যুক্ত হয়েছে।
৩. রংপুরের হারাধন রায়:
হারাধন রায় মারা গেছেন ১১ আগস্ট আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করতে গিয়ে। একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে, হারাধনের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদের ওপর হামলা করে এবং এরপর ছাত্রদের আক্রমণে ৪ জন ঘটনাস্থলে মারা যান তাদের মধ্যে ২ জন মুসলমান এবং বাকি দুইজন হলেন হারাধন ও তার ভাগনে।
অর্থাত, ছাত্রদের মারতে গিয়ে নিজে মারা যাওয়া হারধন রায়কে ‘সাম্প্রদায়িক হামলার ভিকটিম’ হিসেবে দেখানো হয়েছে ঐক্য পরিষদের রিপোর্টে।
ঐক্য পরিষদের রিপোর্টে বলা হয় হারাধন রায় রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি। তবে তিনি আওয়ামী লীগের পরশুরাম থানা সভাপতি সেটি উল্লেখ করা হয়নি।
‘হারাধন রায় হারা’ বহু বছর ধরেই রংপুরে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। বিগত কয়েক বছরে তার অপকর্ম নিয়ে বহু সংবাদের শিরোনাম পাওয়া যায় এর মধ্যে কয়েকটি নিচে দেয়া হল:
“চাঁদা না দেয়ায় হিমাগারের কর্মচারীদের মারেন কাউন্সিলর হারাধন!”
“বিজিবির গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায় ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্রেফতার”
“রোহিঙ্গা বলে রমেক ছাত্রকে মারধর”
“রমেক শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগে সিটি কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মামলা”
“রসিক নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা মামলায় কাউন্সিলর হারা রিমান্ডে”
৪. সিরাজগঞ্জের সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক:
১৬ আগস্ট মারা যান সাংবাদিক প্রদীপ কুমার ভৌমিক। মিডিয়ার রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, প্রদীপ কুমার ভৌমিক আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় মারা গেছেন।
আমি দৈনিক খবরপত্রের রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রদীপ কুমার ভৌমিকের ছেলে সুজন কুমার ভৌমিকের (যিনি নিজেও একজন সাংবাদিক এবং দৈনিক সবুজ বাংলার রায়গঞ্জ প্রতিনিধি) সাথে কথা বলেছি। তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিতি সাংবাদিকদের কাছ থেকে তিনি যে বর্ণন শুনেছেন তা হচ্ছে: ১২ আগস্ট সকালে রায়গঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের অফিসে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জড়ো হোন। এই খবর পেয়ে আন্দোলনকারীরা দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ অফিসে গিয়ে হামলা করেন। তখন কয়েকজন নেতাকর্মী দৌড়ে পাশের একতলা ভবনে (যেটি রায়গঞ্জ প্রেসক্লাবের অফিস) ঢুকে পড়েন। এসময় আওয়ামী লীগের এই কর্মীদের ধাওয়া করে প্রেসক্লাবে ঢুকেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে তারা সবাইকে পেটান এবং তাদের হাতেই মার খেয়ে মারা যান সাংবাদিক প্রদীপ কুমার। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের অফিস ভবন থেকে আরও ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
৫. ময়মনসিংহে অজিত সরকার পেনু:
অজিত কুমারের হত্যাকাণ্ডটির বিবরণ সংবাদমাধ্যমে এসেছে এভাবে: “শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ময়মনসিংহের ফুলপুরে অজিত সরকার (৬২) নামের এক কৃষককে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পিটিয়ে ও হাত-পা বেঁধে পানিতে চুবিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। পরে তার মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয় বলে দাবি স্বজনদের। অজিত ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ডোমকোনা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি একই গ্রামের মানবতাবিরোধী অপরাধী গিয়াস উদ্দিন খানের মামলার সাক্ষী বলে জানা গেছে। অজিত এক সময় ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।”
একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, গিয়াস উদ্দিনের পরিবারের সদস্যদের নেতৃত্বেই অজিতকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
৬. ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুশান্ত সরকার:
সুশান্তকে হত্যার অভিযোগ তার বন্ধুর বিরুদ্ধে। সুশান্ত বা তার পরিবার কোন ধরনের রাজনীতিতে জড়িত ছিলো না বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তিকে নিশ্চিত করেছেন। সুশান্তর হত্যার বিচার চেয়ে স্থানীয় গ্রামের মানুষ একাধিক মানববন্ধন করেছেন, যেখানে স্থানীয় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন বলে একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন। আশিকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা এবং নানান অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় একাধিক সাংবাদিক।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানায়, নাসিরাবাদ গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নিতাই সরকারের ছেলে সুশান্ত সরকারের সঙ্গে একই গ্রামের তাহের মিয়ার ছেলে আশিক মিয়ার বন্ধুত্ব ছিল। সম্প্রতি সুশান্ত আশিকের কাছ থেকে মোটরসাইকেল বিক্রির ৩০ হাজার টাকা পাওনা ছিল। বিষয়টি নিয়ে আশিক প্রায়ই সুশান্তকে হুমকি দিত। রোববার রাতে আশিক টাকা দেওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে সুশান্তকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সে আর বাড়ি ফেরেনি। সকালে মেঘনা নদীর পাড়ে সুশান্তের মরদেহ পাওয়া যায়।”
সার্বিকভাবে, এই ঘটনাটিকে স্থানীয় অপরাধমূলক কাণ্ড বলা যায়।
৭. নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী টিংকু রঞ্জন দাস:
এই ঘটনাটিও স্থানীয় অপরাধমূলক কাণ্ড বলেই মিডিয়া রিপোর্ট থেকে প্রতীয়মান হয়। একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় চাঁদা দাবিতে দারালো অস্ত্র ও মারধরে হৃদরোগ আক্রান্ত হয়ে হোসিয়ারি ব্যবসায়ী টিংকু রঞ্জন সাহা মৃত্যু বরণ করেছে। এতে গতকাল রোববার বেলা ১২টায় শহরের নয়ামাটি এলাকায় হত্যার বিচার দাবিতে মিছিল বের করে কর্মবিরতি পালন করে।”
৮.বাগেরহাটের মৃণাল কান্তি চ্যাটার্জি:
১৬ আগস্ট খুন হওয়া এই ঘটনার মোটিভ সম্পর্কে স্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায়নি। মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, হত্যার পেছনে আগে থেকে চলে আসা জমি সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনা থাকতে পারে। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাগেরহাটে ঘরে ঢুকে সাবেক এক স্কুলশিক্ষককে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। গত সোমবার রাতে বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি ইউনিয়নের ছোট পাইকপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরিবারের দাবি, জমিজমাসংক্রান্ত বিরোধের জেরে তাঁদের ওপর এ হামলা চালানো হয়।”
তার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
৯. খুলনার ইউপি সদস্য স্বপন বিশ্বাস:
স্বপন বিশ্বাসের ঘটনার পেছনের কারণও স্পষ্ট নয়। তাকে বাজার থেকে ফেরার পথে হত্যা করা হয়। যুগান্তরের রিপোর্টে বলা হয়ে, “স্বপন বিশ্বাসের ছোট মেয়ে তমা বিশ্বাস জানান, আমার বাবার কোনো শত্রু নেই। তিনি সবার সঙ্গে মিলে-মিশে চলতেন। তার সঙ্গে সবার যথেষ্ট সুসম্পর্ক। থানা পুলিশ স্ট্রাইকে থাকায় লাশের কোনো সুরতহাল রিপোর্ট ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাহ করা হয়েছে। স্থানীয় গ্রামপুলিশ আদিত্য মণ্ডল হাতুড়িটি জব্দ করেছেন।”
স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে কথা বললে তারাও জানান, স্বপন আওয়ামীপন্থী সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে এলাকায় পরিচত হলেও তিনি আওয়ামী লীগের কোন পদপদবিতে ছিলেন না।