সুনামগঞ্জের ধানে দেশের অর্ধেক মাসের বেশি খাবারের জোগান

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের হাওরে উৎপাদিত ধান দেশের প্রায় ১৭ দিনের খাবারের চাহিদা মেটায়। জেলার ১২টি উপজেলার হাওরজুড়ে বোরো ধান ঘিরে কৃষক পরিবারগুলোর জীবনযাপন। ধান কাটা, মাড়াই, শুকানো ও সংরক্ষণে এখন গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ধানের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ লাখ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫২০০ কোটি টাকা।
চলতি মৌসুমে ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এই বিপুল উৎপাদন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় খাদ্য মজুদের অংশ হয়। হিসাব অনুযায়ী, সুনামগঞ্জের ধান দেশের দৈনিক গড় চাহিদা অনুযায়ী প্রায় ১৭ দিন, এর মধ্যে বোরো ধানেই জোগান হয় ১৩ দিনের খাবার।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ জানান, এবছর ধানের ভরপুর ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সহজেই ধান ঘরে তুলছেন। তবে প্রতি বছর ফসল রক্ষা বাঁধ সঠিক সময়ে শেষ না হওয়ায় কৃষকদের উদ্বেগ থেকেই যায়।
খরচার হাওরের কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, এবার ফলন ভালো হলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। ফড়িয়া আর মহাজনের কাছে আমরা জিম্মি।
মাটিয়ান হাওরের কৃষক সাদেক আলী বলেন, গভীর হাওর থেকে ধান পরিবহনে রাস্তা নেই। ঝুঁকি নিয়ে মাটির সড়ক দিয়ে ধান আনতে হয়। এই কষ্টের কথাগুলো কেউ শোনে না।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রাজু আহমদ বলেন, হাওরের কৃষকই এ দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ভিত্তি। তাদের জন্য সড়ক ও বাঁধ উন্নয়ন না হলে উৎপাদনে আগ্রহ হারাবে কৃষক।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতা তোজাম্মিল হক নাসরুম বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ সময়মতো শেষ না হওয়ায় কৃষকদের মন সর্বদা অশান্তিতে থাকে। এবার যদি কোনো ক্ষতি হয়, তার দায় পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের নিতে হবে।
সুনামগঞ্জ জেলায় ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭০৫টি পরিবার বোরো চাষে যুক্ত, যার মধ্যে ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭৭৭ জন কার্ডধারী কৃষক। হাওরের গভীর থেকে ধান কেটে মাড়াই ও শুকানোর পর খলায় চলছে দিন-রাতের পরিশ্রম। ধান শুধু খাদ্য নয়, হাওরবাসীর শক্তি, সাহস আর জীবনের চালিকাশক্তি।