বিশ্বম্ভরপুরে ইউএনও অপসারণের দাবিতে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচি

মেহেদী হাসান তানিম
দুর্নীতি, অনিয়ম ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধার অভিযোগের মুখে থাকা বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মফিজুর রহমানের অপসারণের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার বিশ্বম্ভরপুরে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা দীর্ঘ পদযাত্রা (লং মার্চ) ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। গত ৪ মে ইউএনও’র অপসারণের দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে হামলার ঘটনার পর এই কর্মসূচি পালিত হয়।
উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই লং মার্চে অংশ নেয়। তাদের প্রধান তিনটি দাবি ছিল: অবিলম্বে ইউএনও মফিজুর রহমানের অপসারণ, গত রবিবারের হামলায় আহত ও মামলার শিকার হওয়া আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ওই হামলায় জড়িতদের শাস্তি প্রদান।
ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভকারীরা ইউএনও মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। তাদের কণ্ঠে ছিল “মফিজ হটাও, বিশ্বম্ভরপুর বাঁচাও”, “দুর্নীতির বরপুত্র মফিজ দূর হও”, “হামলাকারীদের শাস্তি চাই” ইত্যাদি।
দুপুর ১টার দিকে সুনামগঞ্জের স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম কর্মসূচিতে উপস্থিত হন। তিনি আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন এবং তাদের উত্থাপিত তিনটি দাবি মনোযোগ সহকারে শোনেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে একাধিক বক্তা গত কয়েক মাসে ইউএনও মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরেন। তারা বলেন, ইউএনও’র দুর্নীতি ও অদক্ষতার কারণে উপজেলার উন্নয়ন থমকে গেছে এবং সাধারণ মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত রবিবারের শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনে হামলার ঘটনা ইউএনও’র মদদেই হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
উপ পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম আন্দোলনকারীদের দাবিগুলিকে যৌক্তিক বলে অভিহিত করেন। তিনি তাদের আশ্বস্ত করেন যে আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যেই ইউএনও মফিজুর রহমানের বদলির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার এই আশ্বাসের পর আন্দোলনকারীরা তাদের আজকের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন।
তবে, আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে, যদি আগামী ১০ কর্মদিবসের মধ্যে ইউএনও’র বদলির আদেশ না আসে, তাহলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।
আজকের এই লং মার্চ ও অবস্থান কর্মসূচি বিশ্বম্ভরপুরের সাধারণ মানুষের মধ্যে ইউএনও মফিজুর রহমানের প্রতি তীব্র অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। তাদের একটাই চাওয়া, দুর্নীতিমুক্ত একটি প্রশাসন এবং উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন। এখন দেখার বিষয়, স্থানীয় প্রশাসন জনগণের এই দাবির প্রতি কতটা সংবেদনশীল হয় এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।
উল্লেখ্য, গত ৪ মে বিশ্বম্ভরপুরের সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে ইউএনও মফিজুর রহমানের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই কর্মসূচিতে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায়, যাতে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। এই ঘটনার পর থেকেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং আজকের লং মার্চ তারই ধারাবাহিকতা।