বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে পুশইন, আটক ৪৪ জনকে পুলিশে হস্তান্তর

তাহমীদ ইশাদ রিপন, বড়লেখা প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় গত দুই দিনে ভারত থেকে পুশ-ইন হওয়া ৫৫ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এদের মধ্যে ৪৪ জনের পরিচয় নিশ্চিত করে তাদের বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিজিবির সূত্রে জানা গেছে, আটক ব্যক্তিরা প্রায় এক বছর ধরে অবৈধভাবে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছিলেন এবং সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশ তাদের পরিচয় যাচাই করে অবৈধভাবে অবস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত হলে, তাদের আটক করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়।
বিজিবি-৫২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী হাসান পিপিএম বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের ঘটনায় বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে বেশকিছু মানুষকে আটক করা হয়েছে। সীমান্তে বিজিবির নজরদারি আরো জোরদার করা হয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের ঠিকানা নিশ্চিত করে পরিচয় যাচাই-বাছাই শেষে ৪৪ জনকে বড়লেখা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আটককৃত বাকি ১১ জনের বিষয়ে এখনও পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। তাদের জাতীয়তা ও অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে নিশ্চিত হওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম সরকার বলেন, গত দুই দিনে বড়লেখা সীমান্ত দিয়ে প্রায় শতাধিক মানুষকে ‘পুশইন’ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। উপজেলার পাল্লাতল ও লাতু সীমান্ত থেকে আটক ৪৪ জনকে সংশ্লিষ্ঠ থানায় হস্তান্তর করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন নারী পুরুষ ও শিশুরা। তারা সবাই বাংলাদেশের কুষ্টিয়া, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনাসহ বিভিন্ন জেলার বাসিন্দা। ইতিমধ্যে তাদের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিজেদের আত্নীয় স্বজন ও পরিবার পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আটককৃতদের মধ্যে মো. রহমান মুন্সি ও সীমা আক্তার জানান, আমরা প্রায় দুই বছর আগে ভারতের গুজরাটে গিয়ে বসবাস শুরু করি এবং সেখানে দিনমজুরের কাজ করতাম। হঠাৎ ভারত পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে গত দুই তিন দিন ধরে স্থানীয় পুলিশ আমাদের বাড়িঘর ভেঙে দেয়। পরে তারা আমাদের জোরপূর্বক বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) কাছে হস্তান্তর করে, তারা আমাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
সীমান্তবাসীরা জানান, গত দু’দিনে শতাধিক লোক নিউ পাল্লাথল, লাতু ও বোবারথল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশকারিরা জানিয়েছে, ভারতীয় পুলিশ ও বিএসএফ তাদের ধরে এনে জোর করে বর্ডার পার করে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও অনেক বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করছেন। সীমান্তের ওপারে তাদের মতো আরো অনেককে পুশইন করার জন্য বিএসএফ ধরে রেখেছে।
এর আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দায়ে বুধবার ভোর পাঁচটার দিকে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের নিউ পাল্লাথল বিজিবি ক্যাম্পের আওতাধীন এলাকার সীমান্ত দিয়ে ৩২ জন নারী-পুরুষ ও শিশু এবং বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বোবারথল সীমান্ত দিয়ে বিএসএফ আরো ২৩ জনকে পুশইন করে তাদের জোর করে বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার একেএম জাহাঙ্গির হোসেন জানান, এ ঘটনার পর থেকেই মৌলভীবাজারের সব সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারত ও পাকিস্তানের সংঘটিত যুদ্ধের সুযোগ নিয়ে যাতে কোনো সন্ত্রাসী ও অবৈধভাবে যাতে দেশের সীমানা দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আইজিপি থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে মোতাবেক পুলিশ কাজ করছে।