বিমানবন্দর থেকে ফিরলেন চুনারুঘাটের আউয়াল
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ভুলারজুম জালিয়াবস্তির বাসিন্দা আব্দুল খালেকের ছেলে আব্দুল আউয়াল (২২) সৌদি আরবে একটি ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে পরিবার জমি বিক্রি করে ও ধার-দেনা করে দালালদের হাতে তুলে দেয় সাড়ে ৫ লাখ টাকা। অথচ সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে গেল ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে।
জানা গেছে, চুনারুঘাটের জলিলপুর এলাকার কাজল নামের এক স্থানীয় দালালের মাধ্যমে হবিগঞ্জের আওয়াল মিয়া ও নরসিংদীর মীর জাবেরের চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ হয় আউয়ালের বাবা আঃ খালেকের । তারা একটি ‘সৌদি ভিসা’ সরবরাহ করে এবং প্রতিশ্রুতি দেয় নির্ধারিত সময়ে টিকিটসহ আউয়ালকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু দালালরা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনেই বিমান টিকিট হাতে ধরিয়ে দেয়। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ভিসার কার্যকারিতা শেষ হয়ে গেছে। ফলে বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসতে বাধ্য হন আউয়াল। হতাশা, লজ্জা ও ঋণের বোঝা নিয়ে এখন তিনি বাড়িতে নিঃস্ব অবস্থায় পড়ে আছেন।
এয়ারপোর্ট ফেরত আউয়ালের পিতা আব্দুল খালেক জানান, গত ১২ এপ্রিল আমার ছেলেকে এয়ারপোর্টে পাঠায় দালালচক্র। কিন্তু ওই দিনই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ নেই আমরা তাদেরকে বলেছি তারপরও তারা শুনেনি। এঘটনার পর থেকে ফোন ধরেও না দালালরা, সব কিছু হারিয়ে এখন আমি দিশেহারা। দালালরা টাকা তো ফেরত দেয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এভাবে অনেক তরুণ প্রতিনিয়ত দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন। চক্রটি শুধু চুনারুঘাট নয়, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে আছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপের জোর দাবি জানানো হচ্ছে। মিজানুর রহমান নামে এক সচেতন নাগরিক মনে করেন, বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতারণা রোধে জনসচেতনতার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারি ও কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।
এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া ও দালাল চক্র নির্মূলে কঠোর অভিযান এখন সময়ের দাবি।
ভগ্নহৃদয়ে আউয়াল রবিবার ১১ মে বিকেলে জানান, বাড়ি থেকে ধার-দেনা করে টাকা দিয়েছিলাম। এখন সব শেষ। দালালরা ফোন ধরছে না, কেউ দায়িত্ব নিচ্ছে না। আমি জানি না কী করবো। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এমন প্রতারণা নতুন কিছু নয়। চুনারুঘাটের বহু তরুণ প্রবাসে যাওয়ার আশায় দালালদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জলিল মিয়া বলেন, এই দালাল চক্রগুলোকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। না হলে প্রতিদিন কেউ না কেউ তাদের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারাবে।
শামীম আলম নামে এক প্রবাসী বলেন, বিদেশে কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখানো এসব দালাল চক্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হলে, আউয়ালের মতো অসংখ্য তরুণ এমন করুণ পরিণতির শিকার হতে থাকবে।