সরকারি কলেজসমূহের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের দিনব্যপী মিলনমেলা
সিলেটের সরকারি কলেজগুলোর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল এমসি কলেজের শিক্ষাবিদ সম্মেলন কক্ষ। রোববার (১১ মে) অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা ক্যাডার ফোরাম সিলেট কর্তৃক আয়োজিত দিনব্যাপী এক প্রীতি সম্মিলনে প্রাক্তন সহকর্মীদের এক উষ্ণ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় অর্ধ-শতাধিক প্রবীণ শিক্ষকদের এই আন্তরিক মিলন যেন এক টুকরো নস্টালজিয়া নিয়ে এসেছিল, যেখানে পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ ও ভবিষ্যতের সামাজিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার ধ্বনিত হয়।
অনুষ্ঠানের প্রতিটি মুহূর্ত ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ। এমসি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর মো. অহিদুর রবের সাবলীল সঞ্চালনায় এবং প্রবীণ শিক্ষক প্রফেসর আবুল কালাম আজাদের জ্ঞানগর্ভ সভাপতিত্বে এই মিলনমেলা এক বিশেষ মাত্রা পায়। অনুষ্ঠানে এমসি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর শ্রীনিবাস দে তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এছাড়াও প্রফেসর তপন কান্তি ধর, প্রফেসর রতীশ চন্দ্র দাস তালুকদার, প্রফেসর হৃষিকেশ ধর, প্রফেসর আহমেদ হোসেন, প্রফেসর ননী গোপাল দাশ, প্রফেসর পরিমল দেব এবং প্রফেসর সুধাংশু শেখর তালুকদারের মতো প্রথিতযশা শিক্ষাবিদগণ তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে এমসি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল আনাম মো. রিয়াজও উপস্থিত ছিলেন এবং অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
এই প্রীতি সম্মিলনের মূল সুর ছিল পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও অতীতের স্মৃতিচারণ। বক্তারা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা ক্যাডার ফোরামের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং বলেন, কর্মজীবনের ব্যস্ততা শেষে এই ধরনের একটি প্ল্যাটফর্ম অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একত্রিত হওয়ার এবং একে অপরের খোঁজ নেওয়ার সুযোগ করে দেয়। তাঁরা আরও বলেন, জীবনের সায়াহ্নে অনেকেই নিঃসঙ্গতা অনুভব করেন, আর এই ধরনের পুনর্মিলনী তাঁদের পুরনো দিনের আনন্দময় স্মৃতিতে ডুব দিতে এবং মানসিক শান্তি খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
তবে এই মিলনমেলার তাৎপর্য কেবল ব্যক্তিগত আনন্দ বা স্মৃতিচারণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষকগণ তাঁদের সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়েও সোচ্চার হন। তাঁরা বলেন, শিক্ষক হিসেবে সমাজের কাছে তাঁদের অনেক ঋণ রয়েছে এবং অবসর গ্রহণের পরেও সেই ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব তাঁদের উপর বর্তায়। বক্তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা ক্যাডার ফোরাম একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে, যার মাধ্যমে তাঁরা সম্মিলিতভাবে সমাজের কল্যাণে নিজেদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা কাজে লাগাতে পারবেন। তাঁরা প্রত্যেকেই অবসরোত্তর জীবনেও সমাজের উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এই মিলনমেলা কেবল একটি আনুষ্ঠানিক মিলনমেলা ছিল না, এটি ছিল প্রবীণ শিক্ষকদের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর, যা তাঁদের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে ব্যবহারের একটি সুস্পষ্ট বার্তা বহন করে। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে এবং সমাজ গঠনে শিক্ষকদের অমূল্য অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। এই প্রীতি সম্মিলন প্রমাণ করে যে, শিক্ষকরা কর্মজীবনের পরেও সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে নিজেদের ভূমিকা অব্যাহত রাখতে পারেন।