এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে পানি, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে বর্ষা মৌসুম এলেই জলাবদ্ধতা এক নিয়মিত চিত্র। সামান্য বৃষ্টিতেই ছাত্রাবাসের অভ্যন্তরের রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়, যা শুধু শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাধার সৃষ্টি করে না, বরং স্বাস্থ্যঝুঁকি ও আতঙ্কের কারণও হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে চতুর্থ ব্লকের সামনের রাস্তাটি সামান্য বৃষ্টিতেই টাকনু পর্যন্ত জলে নিমজ্জিত থাকে, যা পারাপারের জন্য শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চতুর্থ ব্লকের প্রবেশমুখ থেকে ভেতরের দিকে বিস্তৃত রাস্তাটি সম্পূর্ণরূপে জলমগ্ন। এতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে তাদের পায়ের জুতা খুলে, প্যান্ট গুটিয়ে নোংরা জল পেরোতে বাধ্য হচ্ছেন। এই জলাবদ্ধতার কারণে ছাত্রাবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে।
চতুর্থ ব্লকের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, প্রতি বছর বর্ষাকালে এই একই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটে। সামান্য বৃষ্টিতেই এখানে জল জমে যায় এবং তা কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। তাদের অভিযোগ, বারবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা সত্ত্বেও এই সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান আজও হয়নি। নোংরা জল পেরোনোর সময় তারা বিভিন্ন রোগ জীবাণুর সংস্পর্শে আসছেন, যার ফলে ইতিমধ্যেই ছাত্রাবাসের কিছু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা যায়। এর পাশাপাশি জলাবদ্ধ পানিতে প্রায়শই সাপ ও ব্যাঙ ভেসে এসে ছাত্রাবাসের বারান্দায় আশ্রয় নেয়, যা আবাসিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এ বিষয়ে ছাত্রাবাসের চতুর্থ ব্লকের তত্ত্বাবধায়ক এবং মুরারিচাঁদ কলেজের আরবী ও ইসলাম শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, এই জলাবদ্ধতার বিষয়ে গত বছরও কলেজ প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে। আগে এই এলাকা টুলটিকর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তবে বর্তমানে এটি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতায় এসেছে। কিন্তু এই প্রশাসনিক পরিবর্তনে ড্রেনেজ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি। বর্ষাকালে শুধু ছাত্ররাই নয়, আমাকেও নিজের ঘর থেকে বের হয়ে এই জল ভেঙ্গে রাস্তায় যেতে হয়। বিষয়টি অত্যন্ত হতাশাজনক। উনার এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয়, জলাবদ্ধতার সমস্যাটি দীর্ঘদিনের এবং এর সমাধানে কলেজ প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। একদিকে যেমন পুরনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করা হচ্ছে না, তেমনি নতুন করে কোনো কার্যকর পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে না।
এমসি কলেজের ছাত্ররা একটি স্থায়ী ও কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসে এমন জলাবদ্ধতা শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, পড়াশোনার পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য চরম অন্তরায়। কর্তৃপক্ষের উচিত অবিলম্বে এই বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া এবং দ্রুত এর একটি টেকসই সমাধান বের করা, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পরিবেশে বসবাস করতে পারে।