মুআজ (রা.)-এর প্রতি মহানবী (সা.)-এর উপদেশ
ধর্মীয় অনুশাসনের ক্ষেত্রে কঠোরতা নিন্দনীয় নয়, তবে তা যথাস্থানে যথাসময়ে হওয়া আবশ্যক। ইসলাম স্থান-কাল বিবেচনা না করে ধর্মীয় অনুশাসনে কঠোরতা অনুমোদন করে না; যেমন—কেউ যদি কোনো অমুসলিম দেশে বা মাতৃভূমি ছাড়া অন্য কোনো দেশে বসবাস করে, অথবা যে ব্যক্তি নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছে বা যে অঞ্চলে ইসলামী শাসন কেবল প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে—এসব ব্যক্তির সঙ্গে ইসলাম সহজ-সাবলীল আচরণ করার নির্দেশ দেয়; বিশেষত অমৌলিক ও বিরোধপূর্ণ বিষয়ে। এসব ব্যক্তিকে প্রথমে ইসলামের মৌলিক বিষয় শেখানো হবে, তারপর আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরা হবে। প্রথমে তাদের আকিদা-বিশ্বাস ঠিক করতে হবে, এরপর ইসলামের রুকনগুলো (মৌলিক ইবাদত), এরপর ঈমানের শাখা-প্রশাখাগুলো এবং সব শেষে ইসলামী শিষ্টাচার শিখবে তারা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মুআজ (রা.)-কে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেন, ‘তুমি আহলে কিতাবের কাছে যাচ্ছ। কাজেই তাদের কাছে যখন পৌঁছবে তখন তাদেরকে এ কথার দিকে দাওয়াত দেবে, তারা যেন সাক্ষ্য দিয়ে বলে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদের বলবে যে আল্লাহ তাদের ওপর দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন।’
‘যদি তারা এ কথাও মেনে নেয়, তাহলে তাদের বলবে যে আল্লাহ তাদের ওপর জাকাত ফরজ করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে এবং অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হবে।
তোমার এ কথাও যদি তারা মেনে নেয়, তাহলে (কেবল) তাদের উত্তম মাল গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে এবং মাজলুমের বদদোয়াকে ভয় করবে। কেননা তার বদদোয়া ও আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)
লক্ষ করুন রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্বিনি দাওয়াতের ক্ষেত্রে যে ক্রমধারাটি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি শুরু করেছেন ইসলামের মৌলিক বিষয় দিয়ে, তা হলো আল্লাহর একত্ববাদ ও মহানবী (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান।
যদি তারা ঈমান গ্রহণে সম্মত হয়, তাহলে তাদেরকে ইসলামের দ্বিতীয় রুকন নামাজের আহবান করা হবে। যদি তারা সম্মত হয় তাহলে তৃতীয় রুকন জাকাতের নির্দেশ দেওয়া হবে।
আমি আমেরিকার কোনো মুসলিম কমিউনিটিতে এমন দ্বিনপ্রাণ যুবকের সাক্ষাৎ পেয়েছি, তারা ইসলামিক সেন্টারগুলোতে এ জন্য ঝগড়া শুরু করে দেয় যে অন্যরা সাপ্তাহিক ইসলামী মজলিসে জায়নামাজ বা কার্পেটে না বসে চেয়ারে বসে থাকে; তারা ইসলামী রীতি অনুসারে কিবলামুখী হয়ে বসে না; তারা প্যান্ট-শার্ট পরে থাকে, সাদা জুব্বা পরে না; তারা চেয়ার-টেবিলে খায়, মাদুরে বসে খায় না। দক্ষিণ আমেরিকার যুবকদের এমন আচরণ ও চিন্তা আমাকে ক্ষুব্ধ করেছে। আমি তাদের বললাম, এমন বৈরী পরিবেশে তোমাদের জন্য উত্তম হলো এসব বিষয় উপেক্ষা করা।
তোমাদের মূল কাজ হওয়া উচিত দাওয়াত দেওয়া—আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর ইবাদত, পরকালের স্মরণ, উচ্চতর ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি। এই বস্তুবাদী সমাজে যেসব ধ্বংসাত্মক বিষয় সমাজ-সভ্যতাকে শেষ করে দিচ্ছে, তার ব্যাপারে সতর্ক করা। ইসলামী শিষ্টাচার ও ইসলামী জীবনকে পূর্ণতা দানকারী বিষয়ের স্থান ও সময় হলো শরিয়তের অপরিহার্য ও মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়ন এবং তাতে দৃঢ়তা লাভের পর।