ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত জগদ্বিখ্যাত প্রাসাদ ভার্সাইয়ের কথা অনেকেই শুনেছেন। সপ্তদশ শতকে যখন এটি তৈরি হয়, তখন ভার্সাই ছিল এক ছোট্ট গ্রাম। যদিও এখন প্যারিস থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে অন্যতম অভিজাত জায়গা এই ভার্সাই। বিখ্যাত নোতরদাম গির্জার ঠিক সামনেই অবস্থিত এই ভার্সাই প্রাসাদের ইতিহাস বেশ বৈচিত্র্যময়। ফ্রান্সের রাজনীতিতে ভার্সাইয়ের অবস্থান ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
প্যারিস ঘুরতে যাওয়া পর্যটকদের একটি বড় একটি অংশ ঐতিহাসিক ভার্সাই প্রাসাদ দেখতে যান। বিখ্যাত প্রাসাদে লুকিয়ে আছে অনেক গোপন রহস্য। এমনই তিনটি রহস্য সম্পর্কে জানাব আজকে।
প্রতিবছর সারাবিশ্ব থেকে কয়েক কোটি দর্শনার্থী প্রাসাদটি দেখতে যান। ইতিহাসবিদ ফ্ল্যাভি ল্যারু ডয়চে ভেলে’কে গোপন এক দরজা দেখান যেটি দিয়ে রাজা লাইব্রেরিতে যেতেন।
এরপর ভার্সাই প্রাসাদ রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাথিয়ু দা ভিনিয়া ডয়চে ভেলে’কে দ্বিতীয় গোপন রহস্যের সন্ধান দেন যেটি মানুষের একটি মৌলিক চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কিত। কারণ, সমাজের সবচেয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিদেরও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হয়। কিন্তু আজ আমরা যে ধরনের টয়লেট ব্যবহার করি তা ১৮ শতকে ছিল না।
ভার্সাই প্রাসাদের গোপন রহস্য!
মাথিয়ু দা ভিনিয়া বলেন, ‘প্রায়ই বলা হয়, ভার্সাইতে স্বাস্থ্যবিধির অভাব ছিল। কিন্তু বিষয়টি তেমন ছিল না। আমাদের কাছে রাজার আসল একটি বিডে আছে।
লুই ষোড়শের সময় প্রাসাদে একটি টয়লেটও ছিল। সেটি দেখিয়ে মাথিয়ু দা ভিনিয়া বলেন, ‘এটি ১৭২০-এর দশকের শেষ দিকে ইংরেজদের দ্বারা উদ্ভাবিত একটি জলের পায়খানা ব্যবস্থা। এটা পরে বানানো হয়েছে, তবে আসলটি দেখতে যেমন ছিল, সেভাবেই বানানো হয়েছে। শুধুমাত্র ফ্লাশটি এখানে নেই, সেটা নতুন করে বানানো হয়নি। টয়লেটটি ময়লা পানি সরাসরি ভূগর্ভস্থ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় ফ্লাশ করত। এবং এর দুই পাশে নীচের অংশ মোছার জন্য ব্যবহৃত তুলা রাখার জায়গা ছিল।
এবার তিন নম্বর গোপন বিষয়টি জানার পালা। সাহিত্যের পাশাপাশি রাজা লুই ষোড়শের আরেকটি প্রিয় বিষয় ছিল রসায়ন। তিনি ছোট এই গোপন ঘরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পছন্দ করতেন। শুধুমাত্র তার নিকটতম আত্মীয়রা এই ঘর সম্পর্কে জানতেন।
মাথিয়ু দা ভিনিয়া ডয়চে ভেলে’কে সেই ঘরটিও ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। রাসায়নিক উপাদান নিয়ে কাজ করতে হতো বলে ওই ঘরের মেঝেতে টাইলস বসানো হয়েছিল। সিলিংটা উঁচু করে বানানো হয়েছিল। রাসায়নিক বিক্রিয়ার সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় নিয়ে জানালার ওপর একটি গর্তও করা হয়েছিল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ফায়ারপ্লেসে এক ধরণের চুলাও ছিল।
ভার্সাই প্রাসাদে নিশ্চয় আরও অনেক গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে, যা উন্মোচিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত – ফ্রান্সে ঘুরতে গেলে অবশ্যই এই প্রাসাদ দেখতে যাওয়া উচিত।