কোরবানির পশু জবাইয়ের পর করণীয় ও বর্জনীয়
পবিত্র ঈদুল আজহা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক ত্যাগের মহান শিক্ষা ও ইবাদতের দিন। এ দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি করা হয়, যা ইসলামে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ আমল। কোরবানির এই ইবাদত শুধু পশু জবাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর প্রতিটি ধাপে ইসলাম নির্ধারিত আদব ও নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো,জবাইয়ের পর পশুর প্রতি আচরণ। অনেকেই জানতে চান, জবাইয়ের সঙ্গে সঙ্গেই চামড়া খসানো কিংবা কোনো অঙ্গ কাটা জায়েজ কি না। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট।
জবাইয়ের পর অপেক্ষার নির্দেশনা
শরিয়ত অনুযায়ী, পশু জবাইয়ের পর তা পুরোপুরি নিস্তেজ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। পশুর নিস্তেজ হওয়ার আগেই চামড়া খসানো বা অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা মাকরূহ (অপছন্দনীয়) হিসেবে বিবেচিত। যদিও এটি সরাসরি হারাম নয়, তবে শরিয়তের নির্দেশনা হলো: মাকরূহ কাজ থেকেও বিরত থাকা।
এই বিধানের মূল উদ্দেশ্য হলো পশুর প্রতি দয়া ও সহানুভূতির আচরণ নিশ্চিত করা। কারণ, জবাইয়ের পরও কিছু সময় পর্যন্ত পশুর স্নায়ুতন্ত্র সক্রিয় থাকে এবং সে ব্যথা অনুভব করতে পারে। এই সময়ের আগে চামড়া খসানো বা শরীরে অন্য কোনো হস্তক্ষেপ করলে পশু অযথা কষ্ট পায়, যা ইসলামের শিক্ষা পরিপন্থী।
কেন অপেক্ষা করবেন?
১. পশুর কষ্ট লাঘব: জবাইয়ের পরও কিছু সময় পর্যন্ত প্রাণের স্পন্দন থাকতে পারে। এ অবস্থায় শরীরের কোনো অংশ কাটলে তা পশুর জন্য যন্ত্রণাদায়ক হয়। ইসলাম এমন আচরণ কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করে। জবাইয়ের সময়ও ইসলাম দয়ার আচরণ শিক্ষা দেয়।
২. রক্তের সম্পূর্ণ নিষ্কাশন: জবাইয়ের পর কিছু সময় অপেক্ষা করলে পশুর দেহ থেকে রক্ত ভালোভাবে বের হয়ে যায়। এতে মাংস স্বাস্থ্যকর হয়, এবং পাক-পবিত্রতাও নিশ্চিত হয়।
করণীয় ও বর্জনীয়
করণীয়:
ক. পশু জবাইয়ের পর তাকে তার স্থানে শান্তভাবে রাখতে দিন।
খ. ধৈর্যসহকারে অপেক্ষা করুন যতক্ষণ না সে সম্পূর্ণ নিস্তেজ হয়।
গ. নিশ্চিত হন যে পশুর শরীরে আর কোনো নড়াচড়া বা প্রাণের স্পন্দন নেই।
বর্জনীয়:
ক. নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো শুরু করবেন না।
খ. কোনো অঙ্গ যেমন মাথা বা পা কেটে আলাদা করবেন না।
গ. জবাই-পরবর্তী সময়ে শারীরিক কোনো হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকুন।
মানবিকতা ও ইবাদতের পরিপূর্ণতা
কোরবানির দিনে আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাই না। তাঁর সৃষ্টির প্রতিও দায়িত্বশীল ও সহানুভূতিশীল আচরণ করতে চাই। জবাই-পরবর্তী এই ছোট্ট অপেক্ষা শুধুই একটি নিয়ম নয়, বরং এটি দয়ার প্রতিফলন। যা ইসলামের অন্যতম মৌল শিক্ষা। এই আচরণের মাধ্যমেই কোরবানির ইবাদত পূর্ণতা লাভ করে এবং আমাদের কৃত ত্যাগ আল্লাহর দরবারে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।