লাউয়াছড়ায় ৬ বছরে শতাধিক অজগর সাপ উদ্ধার
সংরক্ষিত বনাঞ্চল মৌলভীবাজারে কমলগঞ্জে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পরিবেশ রক্ষা করা যাচ্ছে না। গাছপালা চুরি, পযর্টকদের আগমন ও বন দখলের ফলে প্রাণীদের নিরাপদ আবাস্থল দিন দিন হুমকিতে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বনে খাবার সংকট। বিশেষ করে অজগর সাপের জন্য লাউয়াছড়া বনের পরিবেশ অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
খাবার সংকটে বন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকছে অজগর। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আবাস সংকোচন ও খাবারের সংকটের কারণে পাহাড় থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে আটকা পড়ছে অজগরসহ নানা প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী। গত ৬ বছরে ১০০টির বেশি অজগর সাপ লোকালয়ে ঢুকে আটকা পড়ে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আটকা পড়েছে বাসাবাড়ি, কৃষি জমির ফসলের ক্ষেতের সুরক্ষার জালে ও চা বাগানে।
চলতি জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল এলাকায় ধরা পড়েছে ১০টি অজগর। সবর্শেষ গত ২৫ মে শ্রীমঙ্গলের উত্তর ভাড়াউড়া গ্রামে শ্যামল পালের বাসার উঠানে ১০ ফুট লম্বা, ২৪ মে ভাড়াউড়ার চা বাগানের পিটার শামীম আহমদের রান্না ঘরে ১৩ ফুট ও ১৭ মে হাইল হাওরের মাছ ধরার জাল থেকে ৫ ফুট লম্বা বাচ্চাসহ ৩টি অজগর সাপ উদ্ধার করেছেন বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল। তাছাড়া এপ্রিল মাসেও আরো ২টি অজগর লোকালয় থেকে উদ্ধার করেন তিনি। পাশাপাশি বনবিভাগও পৃথকভাবে আরো বেশ কয়েকটি সাপ উদ্ধার করে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করেছে।
বনবিভাগ, ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড স্নেক রেসকিউ টিম ও বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ২৪৬ প্রজাতির প্রাণীর বসবাস। তার মধ্য অন্যতম সরীসৃপ প্রাণী অজগর। বন থেকে গত ৬ বছরে শতাধিক অজগর সাপ কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বাসাবাড়ি, ধানী জমি, হাওর ও চা বাগানে আটকা পড়ে। লোকজন খবর দিলে সেগুলো উদ্ধার করা হয়।
আবার অনেক জায়গায় খবর না দিয়ে পিটিয়ে অজগর মেরে ফেলেন লোকজন। শুধু মাত্র বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে ১০টি, ২০২৩ সালে ১৬টি, ২০২৪ সালে ১৩টি ও সবর্শেষ ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত ৭টি অজগর উদ্ধার করেছে। বনবিভাগ আলাদাভাবেও নানা সময় অর্ধশতাধিক অজগর বিভিন্ন এলাকা হতে উদ্ধার করেছে। সেগুলোকে বনে অবমুক্ত করা হয়।
শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন পরিচালক সজল দেব জানান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এক সময় বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ আবাসস্থল ছিল। কিন্তু দিন দিন পর্যটক প্রবেশ, খাল ও ছড়া ভরাট, গাছ কাটাসহ নানা কারণে বসবাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে খাদ্য সংকটে অজগরগুলো লোকালয়ে বেড়িয়ে পড়ছে। আমি শুধু শ্রীমঙ্গল এলাকায় যেগুলো খবর পাই তা উদ্ধার করে বনবিভাগের মাধ্যমে লাউয়াছড়ায় অবমুক্ত করা হয়।
প্রাণি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সরীসৃপ প্রাণি বিচরণ করা অঞ্চলগুলোতে দিন দিন খাদ্যের পাশাপাশি পানি সংকটও দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি বনের ভেতরের ছড়া ও খাল শুকিয়ে যাচ্ছে। খাদ্যের খোঁজে প্রাণিরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ে প্রাণও হারাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লাউয়াছড়া বনের এক কর্মচারী জানান, বনের পরিবেশ আগের মতো নেই। গাছপালা চুরি হওয়ায় খাবার সংকটে শুধু অজগর নয় বানর, হরিণসহ অন্য প্রাণীরা লোকালয়ে চলে যাচ্ছে। বিশেষ করে বনের চার দিকে অজগর বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। উদ্ধারের চেয়ে বেশি পরিমাণ অজগর লাউয়াছড়া থেকে বের হয়েছে গত কয়েক বছরে।
এ বিষয়ে শ্রীমঙ্গলস্থ লাউয়াছড়া প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী নাজমুল হক বলেন, আমরা সব সময় বন্যপ্রাণী পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছি । লোকালয়ে আটক অজগর রেসকিউ টিমের সহযোগিতায় বনে অবমুক্ত করা হয়। খাবার সংকটের কথা জানতে চাইলে আরো বলেন, বনে দিনে দিনে মানুষের সংখ্যা বাড়ার কারণে প্রাণীরা লোকালয়ে বেড়িয়ে পড়ার ঘটনা ঘটছে।