দিনে কতটুকু গরুর মাংস খাবেন
কোরবানির ঈদের পর কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের রান্নাঘরে গরুর মাংস রান্না হয়। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময় গরুর মাংস খাওয়াও হয় বেশি। শুধু গরুই নয়, এই সময় থাকে খাসি, মহিষসহ বিভিন্ন প্রাণীর মাংস। এসব মাংস প্রোটিন, খনিজ ও ভিটামিনের অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। তবে এসব মাংস পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা। কারণ, এতে যেমন প্রোটিন, লৌহ, জিংক ও ভিটামিন বি-১২ এর মতো উপাদান থাকে, তেমনই অতিরিক্ত গ্রহণে দেখা দিতে পারে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
যুক্তরাজ্যের ‘ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস)’এর তথ্যানুসারে, বেশি মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত ও লাল মাংস খেলে মলাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। তা ছাড়া প্রক্রিয়াজাত মাংসে উচ্চমাত্রায় লবণ থাকে, যে কারণে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
দিনে কতটুকু খাবেন
পুষ্টিবিদদের মতে, দৈনিক ৭০ গ্রামের বেশি রান্না করা লাল মাংস খাওয়া নিরাপদ না। তবে ৯০ গ্রামের বেশি খাওয়া হলে পরের দিনগুলোতে মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে।
আকার অনুসারে ওজনের হিসাব
ভেড়া, ছাগল, খাসি বা গরুর মাংসের সানডে রোস্ট (তিনটা পাতলা টুকরা, একটি পাউরুটির আকারের অর্ধেক)- ৯০ গ্রাম।
গ্রিল্ড করা বিফ স্টেক- ১৬৩ গ্রাম। ৯ সে. মি. লম্বা দুটি সসেজ এবং দুটি পাতলা বেকন- ১৩০ গ্রাম। বড় ডোনার কাবাব- ১৩০ গ্রাম।সাধারণ আকারের বিফবার্গার- ৭৮ গ্রাম। কর্ন্ড বিফ বা লবণ দেওয়া মাংসের টুকরা- ৩৮ গ্রাম। ওপরের মাংসের ওজন গড় হিসেবে দেওয়া হলেও অন্তত আকার অনুযায়ী মাংসের ওজনের পরিমাণ ধারণা করা যায়।
মাংস ও স্যাচুরেইটেড ফ্যাট
কিছু মাংসে স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বা চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। এগুলো বেশি খেলে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি কোলেস্টেরলের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে বাড়তে পারে হৃদরোগের ঝুঁকি। তাই সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়তে খেতে হবে পরিমিত।
গর্ভাবস্থায় কতটুকু খাবেন
অন্তঃসত্ত্বাদের খাদ্যাভ্যাসে মাংস যোগ করার সময় কিছু বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখা উচিত। ভালো মতো রান্না করা মাংস খেতে হবে। অর্ধ সিদ্ধ বা ভালো মতো রান্না না হলে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাবে। মাংস থেকে তৈরি যেকোনো ধরনের ‘কোল্ড মিট’, সসেজ, বেকন, মাংসের পিঠা ইত্যাদি খাওয়া এড়াতে হবে। কারণ এসবে থাকা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া অনাগত শিশুর জন্য অনিরাপদ। কলিজা ও কলিজা দিয়ে তৈরি যেকোনো খাবারে ভিটামিন এ বেশি থাকবে। তাই জন্ম না নেওয়া সন্তানের কথা চিন্তা করে খেতে হবে কম।
রান্না করার সময় চর্বি ফেলে দেওয়া
যেকোনো ধরনের মাংস রান্না করার আগে চর্বি ও চামড়া লেগে থাকলে সেগুলো কেটে ফেলে দিতে হবে। পোল্ট্রি মানে- হাঁস, মুরগির চামড়াতে অন্যান্য মাংসের তুলনায় চর্বি বেশি থাকে।
রান্নায় যেভাবে চর্বি কমাবেন
ভাজার পরিবর্তে মাংস গ্রিল করুন। রান্নার সময় অতিরিক্ত চর্বি বা তেল ব্যবহার এড়িয়ে যাবেন। শিক বা তারের জালি বা নেটের ওপর মাংস রোস্ট করা, যাতে চর্বি গলে পড়ে যায়। মাংসের পরিমাণ কম রেখে প্লেটে সবজি বেশি রাখা। তাই সুস্থ থাকতে পরিমিত গরুর মাংস খাওয়া উচিত।