ওয়ারিশান সনদ নিতে লাগে ১৮শ’ টাকা
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার বোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা পেতে গিয়ে সাধারণ মানুষ নানাভাবে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে জন্মনিবন্ধন সনদ, ওয়ারিশ সনদ, নাগরিক সনদসহ বিভিন্ন প্রত্যয়নপত্রের জন্য নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয় ওয়ারিশান সনদ পেতে গুনতে হয় ৪ শত টাকা যা ইউনিয়ন থেকে নির্ধারন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকারি নির্ধারিত ফি ২৫ টাকা হলেও জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। একইভাবে ওয়ারিশ সনদ ও নাগরিক সনদের জন্যও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এসব লেনদেনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো রসিদ প্রদান করা হয় না এই দূর্নীতির মুল হোতা ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল ও অতিরিক্ত উদ্যোক্তা নূর মোহাম্মদ।
বোগলা ইউনিয়নের সোনাছুড়া গ্রামের হতদরিদ্র মাহমুদা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, “ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল দুই শত টাকা এবং নূর মোহাম্মদ এক হাজার পাঁচ শত টাকা ওয়ারিশ সনদের জন্য নিয়েছেন। আমি গরিব মানুষ, আমাকে পর্যন্ত ছাড় দেয়নি।”
ক্যাম্পেরঘাট গ্রামের বাবুল বলেন, “আমি ওয়ারিশ সনদের জন্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম ও তার সহকারীকে এক হাজার টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোগলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিলন খান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং ৫ আগস্টের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নাশকতার মামলাসহ একাধিক মামলার আসামি হন। তিনি অধিকাংশ সময় ইউনিয়ন পরিষদের বাইরে অবস্থান করেন। ফলে প্রশাসনিক কর্মকর্তাই ইউনিয়নের কার্যক্রমের মূল নিয়ন্ত্রণে আছেন এই সুযোগে দূর্নীতির আখড়া করে তুলেছে ইউনিয়ন পরিষদ’কে।
চেয়ারম্যান মিলন খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কিছু জনপ্রতিনিধি ও দালাল চক্র মিলে এই অনিয়মের ফাঁদ তৈরি করেছে। পরিষদের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সাধারণ মানুষের অসচেতনতা ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে এসব কাজ করছে।
অভিযুক্ত নূর মোহাম্মদ বলেন”ওয়ারিশ সনদ দেওয়ার দায়িত্ব সচিবের। কিছু দালাল চক্র অতিরিক্ত টাকা নিয়ে আমাদের কিছু টাকা দেয়।”
কাম-কম্পিউটার অপারেটর পংকজ বলেন, “লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে জন্মনিবন্ধন ছিল। যাতায়াত খরচ ও ফি বাবদ ৮০০ টাকা নিয়েছি।”
ইউনিয়ন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম বলেন, “আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে। জন্মনিবন্ধন ও অন্যান্য ফি ইউনিয়ন পরিষদ নির্ধারণ করে, সেটাই নেওয়া হচ্ছে। অথচ উনি নিজেই অভিযুক্ত।
দোয়ারাবাজার নির্বাহী অফিসার অরুপ রতন সিংহ বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সবাইকে সচেতন হতে বলেন তিনি।