জৈন্তাপুরে “পার্টনার কংগ্রেস” এর পুষ্টিনির্ভর উদ্যোক্তা সভা
সিলেটের জৈন্তাপুরে কৃষিকে টেকসই, পুষ্টিনির্ভর এবং উদ্যোক্তা ভিত্তিক রূপান্তরের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো “পার্টনার কংগ্রেস”। শুক্রবার (২০ জুন) সকাল ১০টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই কনফারেন্সের আয়োজন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের আওতাধীন PARTNER প্রকল্প, “Programme on Agriculture and Rural Transformation for Nutrition, Entrepreneurship and Resilience in Bangladesh”এর অংশ হিসেবে এ আয়োজন সম্পন্ন হয়। প্রকল্পটি অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক (IBRD-IDA) ও আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (IFAD)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, সিলেট অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সহকারী উদ্ভিদ অফিসার নুরুল ইসলাম খান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোস্তফা ইকবাল আজাদ বলেন, PARTNER প্রকল্প শুধু কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নয়, বরং এর লক্ষ্য হলো পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উদ্যোক্তা তৈরি করা এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষির ভিত্তি ফসল ফলানো। এটি একটি সমন্বিত ও টেকসই উন্নয়নের মডেল।
সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, জৈন্তাপুরের কৃষিতে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সম্ভব।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র মনিটরিং পার্টনার অফিসার মো. নাছির উদ্দীন এবং জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দিলীপ কুমার দাস।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কৃষক প্রতিনিধি আল মামুন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা আধুনিক চাষাবাদ, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন এবং বাজার সংযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাচ্ছি। সরকার ও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যদি মাঠপর্যায়ে সহায়তা অব্যাহত রাখে, তবে আমরা কৃষিকে পেশা হিসেবে আরও সমৃদ্ধ করতে পারব।
কৃষাণী আসমা বেগম জানান, আগে শুধু জমি চাষ করতাম, এখন জানতে পারছি কীভাবে নিরাপদভাবে চাষ করে ভালো বাজার মূল্য পাওয়া যায়। নারী কৃষকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা খুবই জরুরী।
কংগ্রেসে জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, কৃষক প্রতিনিধি, উদ্যোক্তা, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি, PARTNER ফিল্ড স্কুলভুক্ত কৃষক-কৃষাণী ও অন্যান্য আগ্রহী কৃষকেরা অংশ নেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ৫ জন ইউনিয়ন জনপ্রতিনিধি, ৫ জন গণ্যমান্য ব্যক্তি, ৫ জন সাংবাদিক, ৫ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ৫ জন সরকারি কর্মকর্তা, ৫ জন এনজিও প্রতিনিধি, PARTNER ফিল্ড স্কুলভুক্ত ৩৫ জন ও বাইরের ৩৫ জন কৃষক-কৃষাণী।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় কৃষির চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং উন্নয়ন কৌশল নিয়ে উন্মুক্ত মতামত নেওয়া হয়। কৃষকদের অভিজ্ঞতার আলোকে বাস্তবভিত্তিক সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আয়োজকরা।
এছাড়া নিরাপদ কৃষি উৎপাদন পদ্ধতি (Good Agricultural Practices) নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। জানানো হয় রাসায়নিকমুক্ত, পরিবেশবান্ধব ও বাজারমুখী চাষাবাদ কৃষকের আয় বাড়াতে ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
আয়োজকরা বলেন, এ ধরনের কংগ্রেস মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ও জাতীয় নীতি-নির্ধারকদের মধ্যে কার্যকর সংযোগ গড়ে তুলবে, যা ভবিষ্যৎ কৃষি পরিকল্পনায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।