আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং সড়ক যেন ‘মরনফাঁদ’
দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে হবিগঞ্জের বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ শরীফ উদ্দিন সড়ক। প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আঞ্চলিক সড়কটি উপজেলার অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। তবে বর্তমানে এটি এক চরম দুর্ভোগের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সড়কের বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে বড় বড় খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টি হলে এই গর্তগুলোতে পানি জমে একেকটি ছোট জলাশয়ের রূপ নেয়। এ সময় এই সড়কে যান চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ঘটছে একের পর এক দুর্ঘটনা। প্রায়ই টমটম, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেলের মতো ছোট যানবাহনগুলো উল্টে গিয়ে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন।
জানা যায়, ২০১৭ সালে ১১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণের মাত্র কয়েক বছরের মাথায় বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এর পর দীর্ঘ সাত বছরেও সড়কটি আর সংস্কার করা হয়নি। স্থানীয় লোকজন সড়কটি সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা এলাকার বাসিন্দা সুমন মিয়া বলেন, ‘আমাদের উপজেলার বড় দুটি ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র সড়ক এটি। কিন্তু এই সড়ক দিয়ে আমরা যাতায়াত করতে পারি না। পুরো দেশ ঘুরেও এমন খারাপ রাস্তা পাবেন কি না সন্দেহ আছে। কতটা কষ্টে আমরা অনেক দূর দিয়ে ঘুরে সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করি, সেটা কেবল আমরাই বলতে পারব।’
একই এলাকার আফজাল মিয়া বলেন, ‘রাতের বেলা এই সড়কে একটা গাড়িও চলে না। দিনে আগে যেখানে সব সময় গাড়ি চলত, এখন ঘণ্টায় একটা সিএনজি পাওয়া যায়। কোনো অন্তঃসত্ত্বা মাকে নিয়ে চলাচল করতে পারি না। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হয়, না হলে কাদা পানিতে পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। কয়টা সমস্যার কথা বলব বলেন?’
বানিয়াচং উপজেলার আদর্শ বাজার এলাকার বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, ‘সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে অনেক চালক এখন এই রুটে আসতেই চান না। যারা আসেন, তারা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকরা ভাড়া দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘এমন কোনো দিন নাই, এই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটে না। হঠাৎ দেখা যায় গাড়ি একটা উল্টে গেছে। আমরা স্থানীয় লোকজন দৌড়ে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি।’
চালকদের অভিযোগ, অতিরিক্ত ঝাঁকুনির কারণে পরিবহনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বারবার নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে প্রতিনিয়ত মেরামতের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক গোলাম রফিক বলেন, ‘প্রতিদিন গাড়ির শক অ্যাবজরবার (স্প্রিং বিশেষ) নষ্ট হচ্ছে। টায়ার, স্প্রিং, ব্রেক—সবকিছু বারবার বদলাতে হচ্ছে। দিনে যে আয় করি, তার অর্ধেকই মেরামতে চলে যায়। যে কারণে এই সড়ক দিয়ে এখন আমরা কোনো চালকই গাড়ি নিয়ে যাই না।’
আরেক চালক বাবুল মিয়া বলেন, ‘একে তো সড়কে গাড়ি নিয়ে গেলে নষ্ট হয়, তার ওপর আবার একটু এদিক-সেদিক হলেই উল্টে যায়। যে কারণে আমরা এই সড়ক ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালিয়ে লাভ কি? কখন কোন ঘটনা ঘটে ঠিক আছে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, ‘বিগত সরকারের শেষ সময়ে এই সড়কের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তখন কোনো ঠিকাদার দরপত্র দাখিল করেননি। চলতি মাসেই আমরা আবারও দরপত্র আহ্বান করেছি। আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে।’